ঘুমিয়ে থাকলে আমাদের দেহের ভেতর অনেক কিছু প্রবেশ করে। আমরা সব সময় নিশ্বাস নিই, হরমোন উত্পাদন ও নিঃসরণ হয়। এর জন্য জেগে থাকার দরকার হয় না। তেমনি ঘুমের মধ্যেই আমরা শরীর নড়াচড়া করতে পারি সচেতনভাবেই। কিছু কিছু মানুষ আবার ঘুমের মধ্যেই হাঁটে। ঘুমের মধ্যে সচেতন থাকি বলেই আমরা বিছানা থেকে পড়ে যাই না। সময়ের সঙ্গে এই সক্ষমতা বাড়ে।
আমরা কেন ঘুমাই, তা এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। ঘুমকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি—যার একটাকে বলে র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ বা রেম (REM)। আরেকটি অবস্থার নাম নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা নন-রেম স্লিপ (Non-REM)। শোয়ার পরপরই যে ঘুমটা আসে, সেটাকে বলে রেম। পরে ধীরে ধীরে আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হই। সেই অবস্থাটা হলো নন-রেম। শিশুদের ঘুমের অর্ধেকই হলো রেম অবস্থার। দুই বছর বয়সে এটা এক-চতুর্থাংশে নেমে আসে। মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গভীর ঘুমের গুরুত্ব অনেক। নন-রেম বা আধো ঘুম অবস্থায় মস্তিষ্ক ধীরে কাজ করে। ঘুমের এই স্তরে মানুষ অনেক টলায়মান অবস্থায় থাকে।
১. পিটুইটারি গ্রন্থি
নন-রেম সময় পিটুইটারি গ্রন্থিতে গ্রোথ হরমোন তৈরি হয়, সঙ্গে প্রোল্যাকটিনের ক্ষরণ। ফলে ডোপামিন ক্ষরণ বাধা পায়। তাতে সাধারণ উত্তেজনার পর্যায় নিচে নেমে আসে।
২. মুখ
ঘুম কম হলে আমাদের মুখে লালার পরিমাণও কমে যায়। ফলে ঢোঁক গেলার পরিমাণ কমে যায়। প্রায় পাঁচ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ ঘুমের শুরুতে দাঁতে কিড়মিড় শব্দ করে।
৩. ফুসফুস
এ সময় গলার পেশিগুলো শিথিল থাকায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার সময় বায়ু চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়। আর এ কারণে মানুষ নাক ডাকে। কিংবা কখনো কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে।
৪. হৃৎপিণ্ড
ঘুম কম হলে আমাদের হূদস্পন্দনের হার ১০-৩০ bpm কমে যায়। ফলে রক্তচাপ কমে। মস্তিষ্কে অল্প পরিমাণ রক্ত প্রবাহিত হয় এবং পেশিতে রক্ত চলাচল বাড়ে।
৫. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
এই অতিরিক্ত রক্ত হাত-পা-বাহুতে গিয়ে সেগুলোকে সামান্য ফুলে যায়। স্বপ্ন দেখার সময় মাংসপেশিগুলো অবশ হয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্নের মধ্যে প্রতি রাতে আমরা প্রায় ৩৫ বারের মতো দেহের অবস্থান পরিবর্তন করি।
৬. মূত্রাশয়
ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এ কারণে মূত্রাশয়ে মূত্রধারণের পরিমাণ দিনের বেলার তুলনায় অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়।
গ্রন্থনা: তাহরিমা লিমা, শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: বিবিসি ফোকাস