জিহ্বাকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। মানুষের জন্য কথাটা আরও বেশি প্রযোজ্য। স্বাদ গ্রহণের জন্য জিহ্বার বিকল্প নেই। খাবার গিলতেও দরকার। তা ছাড়া এ অঙ্গ ছাড়া কথা বলাও সম্ভব নয়। মানুষ ছাড়া প্রাণিজগতের অন্যান্য প্রাণী কথা না বললেও স্বাদ গ্রহণ ও খাবার গেলার কাজে জিহ্বা ব্যবহার করে। কিছু প্রাণী জিহ্বার সাহায্যে আরও অনেক কাজ করে! কোনো কোনো প্রাণীর জিহ্বা এত বিচিত্র যে প্রাণীটা কী, তা না দেখে শুধু জিহ্বার সাহায্যেই চেনা যায়। ইতিমধ্যেই এমন সাতটি প্রাণীর কথা লিখেছি। এবারে চলুন, এমন আরও ৭ প্রাণীর কথা জানা যাক।
১. সিংহ
বিড়ালজাতীয় প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী প্রাণী সিংহ। শরীরের পশম সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে এরা জিব ব্যবহার করে। শরীরের ময়লা পরিষ্কার করতেও ব্যবহার করে জিব। এদের জিব এত ধারালো যে পশুর চামড়া ছাড়িয়ে ফেলতে পারে। জিবের ওপর ছোট ছোট কাঁটার মতো থাকে। একে বলে প্যাপিলি। শিকারের মাংস ছিঁড়ে আনতে সাহায্য করে এই প্যাপিলি। সাধারণত ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয় সিংহের জিব। তবে প্রজাতি ও বয়সভেদে জিবের আকার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Panthera leo।
২. গিরগিটি
এরা তুলনামূলক ধীর গতির প্রাণী। তবে এদের বিশাল লম্বা জিব শিকার ধরতে বেশ কার্যকরী। প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা জিব আছে এদের, শরীরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জিবের ডগায় থাকে এক ধরনের আঠালো পদার্থ। শিকারের গায়ে এই আঠালো পদার্থ একবার লাগলে তা থেকে বের হওয়া মুশকিল। ঘাসফড়িং, পঙ্গপাল ও অন্যান্য পোকামাকড় ধরে ফেলতে পারে চোখের নিমেষে। ০.০৩ সেকেন্ডে এরা সম্পূর্ণ জিব বের করে শিকার ধরতে পারে। এ সময় জিব বের হওয়ার গতি থাকে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Chamaeleo chamaeleon।
৩. গেকো
গেকো সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী। বিরক্ত হলে এরা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তখন চিৎকার করে। চিৎকার করার সময় মুখের ভেতরের লাল জিহ্বা দেখা যায়। ওদের চিৎকার শুনলে মনে হবে কোনো শিশু চিৎকার করছে। গেকোর চোখের পাতা থাকে না। তাই চোখের ওপরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে ও গন্ধ শনাক্ত করতেও ব্যবহার করে জিব। এদের জিব ৫-৭ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। গেকোর বৈজ্ঞানিক নাম Uroplatus phantasticus।
৪. ব্যাঙ
দ্রুত জিব বের করে শিকার ধরার জন্য ব্যাঙ বিখ্যাত। প্রায় চার হাজার প্রজাতির ব্যাঙ মানুষ চোখের পলক ফেলার আগেই জিব বের করে শিকার ধরে ফেলতে পারে। জিব বের করে আবার মুখে পুরতে সময় লাগে মাত্র ০.০৭ সেকেন্ড। এদের জিবও বেশ শক্তিশালী। নিজের দেহের চেয়ে প্রায় ১.৪ গুণ বেশি ভারী শিকার জিব দিয়ে টেনে নিতে পারে। ব্যাঙের দৈর্ঘ্য যদি ১০ সেন্টিমিটার হয়, তাহলে জিব হবে প্রায় ৫-৭ সেন্টিমিটার। আকারভেদে জিবও ছোট বড় হতে পারে। প্রজাতিভেদে এদের বৈজ্ঞানিক নামও ভিন্ন। সাধারণ ব্যাঙের বৈজ্ঞানিক নাম Rana temporaria।
৫. ঈগল
ঈগলের জিবও সিংহের মতো ধারালো। এ ধরনের জিব খাবার গিলতে সাহায্য করে। এদের জিব সাধারণত চ্যাপ্টা এবং টিউবের মতো। জিবে হাড়ের মতো যে অংশ থাকে, তাকে বলে ‘হাইয়েড অ্যাপারেটাস’। জিব নড়াচড়া করতে এটি সাহায্য করে। এদের জিব প্রায় ৩-৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির ঈগলের মধ্যে সোনালি ঈগলের বৈজ্ঞানিক নাম Aquila chrysaetos।
৬. টিয়া পাখি
মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে টিয়া। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশেও টিয়ার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কথা বলার জন্য টিয়ার জিব বিশেষভাবে অভিযোজিত। এদের জিব বেশ মোটা, শক্তিশালী ও প্রশস্ত। জীবের ডগায় একধরনের আঠালো পৃষ্ঠ থাকে। এটি খাদ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এদের জিবের ওপরে কাঁটার মতো প্যাপিলি থাকে। এর সাহায্যে টিয়া ফলের রস বা ছোট পোকামাকড় ধরতে পারে সহজে। জিব ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। সাধারণ টিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula krameri।
৭. এমপেরোর তামারিন
জিবের চেয়ে এদের গোঁফ বেশি নজরকাড়া। সাদা লম্বা গোঁফের মাঝখান থেকে জিব বেরিয়ে এলে তা অন্যরকম লাগে। তামারিনের জিব দেখে বোঝা যায়, ওরা স্বাভাবিক আছে নাকি মেজাজ খারাপ। অসন্তুষ্ট হলে এরা জিব বের করে নড়াচড়া করে। বারবার জিব বের করে চিৎকারও করে। এরা বানর প্রজাতির প্রাণী। তাই বানরের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এমপেরোর তামারিনের। এরা জিবের সাহায্যে গন্ধ ও স্থান শনাক্ত করতে পারে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Saguinus imperator।
