জলবায়ু পরিবর্তন বিজ্ঞান

বিশ্বব্যাপী বাড়ছে উষ্ণতা। দিনকে দিন বৈরি হচ্ছে হচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু। জয়বায়ু পরিবর্তনের সেই বিজ্ঞানটা কী?

আবহাওয়া

আবহাওয়া হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের স্বল্প সময়ের অবস্থা। যেমন যদি কোনো এলাকায় বৃষ্টি, গরম কিংবা ঝোড়ো হাওয়া বিরাজমান থাকে, সেটা হচ্ছে সেই এলাকার আবহাওয়া। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি সময়ের আবহাওয়ার অবস্থা আন্দাজ করা যায় না।

আবহাওয়া এক জায়গায় শুধু বিরাজমান থাকে না। আবহাওয়ার গতি আছে এবং এটি ঘণ্টায় ঘণ্টায় কিংবা দিন দিনে পরিবর্তিত হয়।

আবহাওয়ার ছয়টি মূল উপাদান আছে। যেমন তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বায়ু, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং মেঘাচ্ছন্নতা। সব উপাদানের সমষ্টিগত অবস্থানই কোনো সময়ের আবহাওয়াকে বর্ণনা করে থাকে।

জলবায়ু

জলবায়ু হলো কোনো এলাকার আবহাওয়ার দীর্ঘকালব্যাপী (কমপক্ষে ৩০ বছর) পর্যবেক্ষণের গড় অবস্থার প্রতিফলন। অন্যদিকে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময়ের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, ঘটমান বিষয় যেমন কুয়াশা, বরফ, শিলাবৃষ্টি ও আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদানের গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিজ্ঞানীরা কোনো এলাকার বৃষ্টিপাতের উপাত্ত, হ্রদ ও জলাধারের উচ্চতা এবং উপগ্রহের উপাত্তের ওপর নির্ভর করে বলতে পারেন কোনো এলাকা গ্রীষ্মকালে গড়ের চেয়ে শুষ্ক ছিল কি না। অনেকগুলো গ্রীষ্মকাল বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায়, স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কোনো শুষ্ক অবস্থায় এলাকার বায়ুমণ্ডল বেশি শুষ্ক, তখন সেটি জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

জলবায়ু কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে, যেগুলোকে জলবায়ুর নিয়ামক বলা হয়। যেমন অক্ষাংশ, উচ্চতা, সমুদ্র থেকে উচ্চতা, বায়ুপ্রবাহের দিক, বৃষ্টিপাত, পর্বতের অবস্থান, বনভূমি, ভূমির ঢাল ও মাটির বিশেষত্ব।

জলবায়ু ও আবহাওয়ার পার্থক্য

আবহাওয়া মিনিটে মিনিটে, ঘণ্টায় ঘণ্টায়, দিনে দিনে এবং ঋতুতে ঋতুতে পরিবর্তন হতে পারে। অন্যদিকে জলবায়ু হচ্ছে কোনো এলাকার আবহাওয়ার গড় অবস্থা।

জলবায়ু ও আবহাওয়ার পার্থক্য মনে রাখার সহজ উপায় হলো জলবায়ু হচ্ছে যা আপনি প্রত্যাশা করছেন, যেমন খুব গরম গ্রীষ্মকাল। আর আবহাওয়া হচ্ছে যা আপনি পাচ্ছেন, যেমন আকস্মিক বজ্রঝড়সহ উষ্ণ দিন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা কী

বৈশ্বিক উষ্ণতা বলতে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি বোঝায়, কারণ, অধিক পরিমাণে সূর্য থেকে আসা তাপ বায়ুমণ্ডলে আটকে পড়ে, যা কিনা আর মহাশূন্যে বিকিরিত হতে পারে না।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সব সময় গ্রিনহাউস হিসেবে কাজ করে, কারণ, এটা সূর্যের তাপকে আটকে রাখে। যার ফলে পৃথিবীতে সেই পরিমাণ তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে, যা পৃথিবীর সমস্ত জীবনের উৎপত্তির জন্য অপরিহার্য।

যদি বায়ুমণ্ডলের এই গ্রিনহাউস না থাকত, তবে পৃথিবী খুব ঠান্ডা হয়ে যেত। বর্তমানে অনেক তাপ যেহেতু গ্রিনহাউসে আটকা পড়ছে, সেহেতু পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিক মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে, যা কিনা স্মরণকালের ইতিহাসে দেখা যায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তন কী?

বৈশ্বিক জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক জলবায়ু সূর্য, পৃথিবী, সমুদ্র, বাতাস, পানি, তুষার, বনভূমি, মরুভূমি এবং মানুষের কর্মকাণ্ড—এ সবকিছুর সমন্বয়ে গঠিত। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের জলবায়ু, যেমন ঢাকার জলবায়ু বর্ণনা করা যায় সেখানে বছরব্যাপী বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদি দ্বারা। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ‘গড়’ জলবায়ু থেকে আরও বেশি কিছু বোঝায়।

বৈশ্বিক জলবায়ু বলতে বোঝায় কীভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে টাইফুনের বেগ বৃদ্ধি পায়, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পায় এবং অধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়, সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অ্যান্টার্কটিকাতে বরফ গলে যাওয়া এবং এর ফলে ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। প্রতিটি প্রক্রিয়া একে অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং একটির পরিবর্তন হলে অন্যগুলোও প্রভাবিত হয়। এ কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়।

গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া

গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীপৃষ্ঠকে উষ্ণ করে। সূর্যরশ্মি যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছায় তখন এর একটি অংশ মহাশূন্যে প্রতিফলিত হয়। অবশিষ্ট অংশ শোষিত হয় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা পুনর্বিকিরিত হয়। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো হচ্ছে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই–অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন এবং মানবসৃষ্ট গ্যাস যেমন ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং এর পৃষ্ঠকে শোষিত শক্তি উত্তপ্ত করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার থেকে প্রায় ৩৩০ ডিগ্রি বেশি হয়, যার ফলে পৃথিবীতে জীবন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ

সবচেয়ে পরিচিত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর একটি হচ্ছে কার্বন ডাই–অক্সাইড। বিজ্ঞানীরা সাধারণত এ গ্যাসটিকে ব্যবহার করেন অন্যান্য পদার্থকে পরিমাপের জন্য, যেগুলো কিনা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে প্রভাবিত করে।

মিথেন হচ্ছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রিনহাউস গ্যাস, যা কিনা কার্বন ডাই–অক্সাইডের তুলনায় ২৮-৩৬ গুণ বেশি উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ফলে ১ টন মিথেন = ২৮-৩৬ টন CO2–এর সমপরিমাণ।

কার্বন ডাই–অক্সাইড

যেকোনো বস্তু আগুনে পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) উৎপন্ন হয়। এটি সবচেয়ে বেশি মাত্রায় তৈরি হয়, কারণ, মোট উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৫৫ শতাংশ কার্বন ডাই–অক্সাইড। ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি এই গ্যাসকে একক হিসেবে নিয়েছে এবং এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল (GWP) ধরেছে ১। ১৭৫০ সালের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মিথেন

বিভিন্ন দহন-ক্রিয়ায় এবং জৈব বস্তু পচনের ফলে (যেমন পানিতে ডুবে যাওয়া ধান এবং গরুর পাকস্থলী ইত্যাদি) মিথেন (CH4) গ্যাস উৎপন্ন হয়। মিথেন অণু ভাঙতে আনুমানিক ১০ বছর সময় লাগে। এটি ওজোন (O3) গ্যাসের জন্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রিনহাউস গ্যাস। মিথেনের গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল ধরা হয় ২৮-৩৬। ১৭৫০ সালের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের ঘনত্ব ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নাইট্রাস অক্সাইড

নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) বা লাফিং গ্যাস, NO/N2O হিসেবে অথবা সার প্রস্তুত ও ব্যবহারের সময় উপজাত হিসেবে, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় পণ্য উৎপাদনের সময় এবং কিছু বস্তুর দহন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে থাকে এবং এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল ধরা হয় ২৬৫-২৯৮। ১৭৫০ সালের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে N2O -এর ঘনত্ব ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জলীয় বাষ্প

জলীয় বাষ্পকে অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের মতো দেখা না হলেও এটি গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ায় প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন সমুদ্র ও নদী থেকে বাষ্পীভবন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল উদ্ভিদের প্রস্বেদনের ফলে যথাক্রমে ৯০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়। মানবসৃষ্ট কারণের মধ্যে যানবাহনের ধোঁয়া থেকে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় কিন্তু এর পরিমাণ বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের ঘনত্বের ১ শতাংশেরও কম। IPCC জলীয় বাষ্পের জন্য কোনো গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল নির্ধারণ করেনি।

ওপরে আলোচিত গ্রিনহাউস গ্যাস ছাড়াও আরও কিছু যৌগ গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এগুলো নিচে আলোচিত হলো:

হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন

ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের (CFC) মতোই হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFCs) একপ্রকার দ্রাবক। এটি প্রধানত রেফ্রিজারেন্ট পদার্থ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

ট্রাইক্লোরোইথেন

ট্রাইক্লোরোইথেন বা মিথাইল ক্লোরোফর্ম সাধারণভাবে দ্রাবক এবং ডিগ্রিসিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ট্রাইক্লোরোইথেনের গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় ১১০ গুণ বেশি।

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs) রিফ্রিজারেন্টস, পরিষ্কারক এবং অ্যারোসল স্প্রে তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে এবং বিভিন্ন পরিষ্কারক দ্রাবকের পরিবর্তে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের বদলে হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFC) ব্যবহৃত হয়। তারপরও বায়ুমণ্ডলে থেকে যাওয়া ক্লোরোফ্লুরোকার্বন গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল ধরা হয় CFC 11-এর জন্য ৪০০০ এবং CFC-13 এর জন্য ১৪০০০।

ফ্লুরিনাটেড গ্যাস

ফ্লুরিনাটেড গ্যাস সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট, এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় না। এটি অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী এবং উষ্ণায়নকারী গ্রিনহাউস গ্যাস। এদের গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল ১ হাজার ৮০০ থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ হাজার পর্যন্তও হতে পারে। ফ্লুরিনাটেড গ্যাস প্রধানত তিন প্রকার হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs), পারফ্লুরোকার্বন (PFCs), এবং সালফারহেক্সাফ্লুরাইড (SF6)।

হাইড্রোফ্লুরোকার্বন

রিফ্রিজারেশন পদ্ধতিতে কয়েক দশক ধরে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের পরিবর্তে হাইড্রোফ্লুরোকার্বন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও হাইড্রোফ্লুরোকার্বন ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের একটি কার্যকরী বিকল্প, এরা নিজেরাও যথেষ্ট শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে রয়ে যায়। হাইড্রোফ্লুরোকার্বন প্রধানত তিন প্রকার HFC-23, HFC-134০a ও HFC152a। এদের মধ্যে HFC-134a রেফ্রিজারেশনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। HFC-134a বায়ুমণ্ডলীয় জীবনকাল ১৪ বছর এবং এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পারফ্লুরোকার্বন

বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উপজাত হিসেবে বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম প্রস্তুতিতে এবং সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে পারফ্লুরোকার্বন (PFCs) উৎপন্ন হয়। হাইড্রোফ্লুরোকার্বনের মতোই পারফ্লুরোকার্বনের বায়ুমণ্ডলীয় জীবনকাল সাধারণত অনেক বেশি এবং এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল প্রায় ৬৫০০ এবং ৯২০০.৫।

সালফারহেক্সাফ্লুরাইড

সালফারহেক্সাফ্লুরাইড (SF6) মূলত ব্যবহৃত হয় বিশেষায়িত ওষুধ প্রস্তুতিতে, কিন্তু প্রাথমিকভাবে ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ বিশেষভাবে ডাই-ইলেকট্রিক তরল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ইনস্যুলেটর হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। SF6 বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরে হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল ২২৮০০।

বর্ধিত গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইড এবং মানবসৃষ্ট অন্যান্য গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে প্রধানত ১৯ শতকের শেষের দিকে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১.৬২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ৩৫ বছরে উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০১০ সাল থেকে পাঁচ বছর রেকর্ড পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনা রয়েছে। ২০১৬ সালে শুধু উষ্ণতম বছরের রেকর্ডই ছিল না, বছরের ১২ মাসের মধ্যে ৮ মাসই—জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (জুন মাস ছাড়া) উষ্ণতম মাসের তালিকায় রেকর্ড করে নেয়।

মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি

এই বর্ধিত তাপমাত্রা শোষণের ফলে ১৯৬৯ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৭০০ মিটার (প্রায় ২ হাজার ৩০০ ফুট) অংশের তাপমাত্রা ০.৩০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১-২০১০ সাল পর্যন্ত জলবায়ু সিস্টেমের নিট শক্তির ৬০ শতাংশেরও বেশি সাগরের ওপরের স্তরে সঞ্চিত হয়।

বরফের আস্তরণ হ্রাস

গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের বরফের আস্তরণ ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। নাসার গ্র্যাভিটি রিকভারি এবং ক্লাইমেট এক্সপেরিমেন্টের উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে ১৯৯৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড থেকে প্রতিবছর গড়ে ২৮১ বিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে, যেখানে একই সময়কালে অ্যান্টার্কটিক থেকে হারিয়েছে ১১৯ বিলিয়ন টন। গত দশকে অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে বরফের আস্তরণ হ্রাসের হার তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

হিমবাহ গলে যাওয়া

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের হিমবাহ গলে যাচ্ছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আল্‌পস, হিমালয়, আন্দিজ, রকি, আলাস্কা ও আফ্রিকার মতো উল্লেখযোগ্য স্থান।

তুষার আবরণের পরিমাণ হ্রাস

কৃত্রিম উপগ্রহের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় যে বিগত পাঁচ দশকে উত্তর গোলার্ধে শরতের তুষার আবরণের পরিমাণ কমে গেছে এবং তুষার আবরণ দ্রুত গলে যাচ্ছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি

গত শতকে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৮ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শতকের তুলনায় দুই দশকের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। ১৯০১ থেকে ২০১০ সময়কালে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গড় ছিল ০.১৯ মিটার।

আর্কটিক অঞ্চলের সামুদ্রিক বরফ হ্রাস

বিগত কয়েক দশকে আর্কটিক অঞ্চলের বরফের পুরুত্ব দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ১৯০০-২০১০ সালের মধ্যে আর্কটিক অঞ্চলের সামুদ্রিক বরফ হ্রাস পেয়েছে।

বৈরী ঘটনা

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পৃথিবীর জলবায়ুর অন্যান্য পরিবর্তনকে প্রভাবিত করছে। বৈরী আবহাওয়া এবং জলবায়ুজনিত বিভিন্ন ঘটনায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ দাবদাহ এবং খরার মতো ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছু কিছু বৈরী ঘটনা ও সেগুলোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত ৫০ বছরের মধ্যে আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রা, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং কিছু কিছু অঞ্চলে মারাত্মক বন্যা ও খরার মতো ঘটনা দেখা যায়।

সমুদ্রের পানির অম্লতা বৃদ্ধি

শিল্পবিপ্লবের শুরু থেকে সমুদ্রের উপরিভাগের পানির অম্লতা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে মানুষ কর্তৃক অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ, যা সমুদ্রের পানিতে মিশ্রিত হয় অধিক পরিমাণে। সমুদ্রের উপরিভাগের পানিতে কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষিত হওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিবছরে প্রায় ২ বিলিয়ন টন।

জলবায়ু সিস্টেমের ওপর মানুষের প্রভাব

এটি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত যে ১৯৫১ সাল থেকে ৫০ ভাগেরও বেশি উষ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে একত্রভাবে দায়ী হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট কারণ।

লেখক: শারমিন নাহার নীপা, গবেষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

রউফা খানম, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

আইনুন নিশাত, ইমেরিটাস অধ্যাপক, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়