প্রজাপতির রঙিন ডানায়

প্রজাপতির দুটি পাখা যেন শিল্পীর আঁকার ক্যানভাস। প্রকৃতি যেন নিজের মনের মতো করে রঙের আঁচড়ে আঁচড়ে ভরিয়ে তুলেছে সেই ক্যানভাস। তবে বিজ্ঞানের ভাষায়, প্রকৃতি নিজের খেয়ালখুশিতে যুক্তিহীন কোনো কাজ করে না। এই যে এত রঙের বাহার, এত জটিল আঁকিবুঁকি প্রজাপতির পাখায়—এগুলোর মাধ্যমে প্রজাপতি আত্মরক্ষা করে, অন্য প্রজাপতিদের সাহায্য করে, সেই সঙ্গে বিপরীত লিঙ্গের প্রজাপতিদের আকর্ষণ করে।

মার্কিন ফটোগ্রাফার হ্যারল্ড ফাইনস্টাইন তাঁর নতুন বই ওয়ান হানড্রেড বাটারফ্লাইস-এ রংবেরঙের প্রজাপতির মনোমুগ্ধকর ছবি ছেপেছেন। চলুন, দেখে আসি এদের কয়েকটি।

কাচের ডানা

এই প্রজাপতির ডানা দেখলে মনে হয় যেন কাচ দিয়ে তৈরি। এ ছাড়া অনেক প্রজাপতির ডানা স্বচ্ছ হলেও ওপরে আঁশের স্তর থাকায় অতটা স্বচ্ছ মনে হয় না। তবে দক্ষিণ আমেরিকার রেইন ফরেস্টে থাকা এই প্রজাপতির পাখার মধ্য দিয়ে দেখা যাবে সবকিছু, যেমন কাচের মধ্য দিয়ে সব দেখা যায়। শিকারিরা তাই বুঝতেই পারে না যে সামনে কোন শিকার ছিল।

রেড সিগন্যাল

এই প্রজাপতির পাখায় উজ্জ্বল লাল রঙের ছোপ দেখা যাচ্ছে। আক্রমণকারী শিকারি ভুলক্রমে এই লাল ডানা খেয়ে ফেললে বিষে একেবারে নীল হয়ে যাবে। তাই এমন রেড সিগন্যাল দেখে চালাক শিকারিরা এদের এড়িয়ে চলে। নিজেকে রক্ষার জন্য এমন সিগন্যালিং টেকনিককে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যাপসম্যাটিসম। মজার ব্যাপার হলো বিষহীন সাধারণ প্রজাপতিরাও নিজেদের বাঁচানোর জন্য পাখায় এমন রঙের সিগন্যাল দেয়, আক্রমণকারী এদের বিষধর ভেবে আর আক্রমণ করে না।

বর্ণিল সূর্যোদয়

জমকালো রঙের এই মথটিকে দেখলে মনে হয় যেন দিনের নতুন সূর্যে চারদিক ঝলমল করে উঠেছে। এর নিবাস সুদূর মাদাগাস্কারে।

নীলের ঝলকানি

নীল রঙের এই প্রজাপতিকে দেখে যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে। তবে একে আক্রমণ করতে গেলেই বিপদ। ডানা ঝাপটে এমন আলোর ঝলকানি সে তৈরি করতে পারে, যাতে আক্রমণকারী আঁতকে উঠতে বাধ্য। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। এদের আরেকটি মজার বৈশিষ্ট্য হলো এরা ফুলের মধু পান করে না। পান করে পাকা ফলের রস! পাকা আম, কিউই আর লিচুর রস আছে তাদের পছন্দের তালিকায়।

এইটটি এইট

ওপরের প্রজাপতিটি যেন সংখ্যা শেখানোর কাজে নেমেছে। এর পেছনের দুই পাখায় ইংরেজি ৮-এর মতো প্যাটার্ন আছে। সব মিলিয়ে দেখতে ইংরেজি ৮৮ সংখ্যার মতো। তাই এই দক্ষিণ আমেরিকান প্রজাপতির নামও এইটটি এইট।

Witold Pira

মিলিয়ে গেল পাতায়

শীতের সকালে বনের পথে ঝরে পড়ে শুষ্ক পাতা। এই পাতার মধ্যে আস্ত এক প্রজাপতি লুকিয়ে থাকতে পারে। শিকারিও খুঁজে পায় না তাকে। এই প্রজাপতির গায়ে আবার নীল রঙের ছটা থাকে। শিকারি আসার সংকেত পেলেই নিজেকে গুটিয়ে ঢেকে ফেলে তার নীল রং, হারিয়ে যায় ঝরাপাতার মাঝে। আবার বিপদ কেটে গেলে ডানা মেলে ধরে তার নীলচে হলুদ বর্ণ দেখায়।

আই সি ইউ

পাশের প্রজাপতিকে দেখলে আপনার মনে হতে পারে, সে হুমকি দিচ্ছে—আমি তোকে দেখে নেব। বোকা শিকারিরা তাই একে বড় বড় চোখে তাকানো কোনো হিংস্র জন্তু ভেবে দূরে পালিয়ে যায়।

রঙের মায়ায় কাছে আসা

প্রজনন সময়ে পুরুষ লিওপার্ড লেইসউইংস প্রজাপতির পাখায় কমলা রঙের বাহারি নকশা দেখা যায়। এভাবে সে নারী সদস্যদের আকর্ষণ করতে চায়। এ কারণে পুরুষ সদস্যরা দেখতে অনেক আকর্ষণীয় হলেও নারী সদস্যরা থাকে বেশ সাদামাটা।