ভয় পেলে শরীর কাঁপে কেন

ভয়ে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা উদ্দীপ্ত হয়ছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষায় ফেল করেছেন। ভয়ে ভয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন বাবার সামনে। বুক ঢিপঢিপ। বাবা কিছু বলার আগেই টের পেলেন, শরীর কাঁপছে। থরহরি কম্প! ভয়ে পেয়েছেন আপনি, প্রচণ্ড ভয়। সেটাই স্বাভাবিক। বয়স যা-ই হোক, বাবা তো বাবাই!

এরকম নানা কারণে আমরা ভয় পাই বা উদ্বিগ্ন হই। প্রচণ্ড ভয় পেলে অনেক সময় আমাদের শরীর কাঁপতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে ওঠে। প্রশ্ন হলো, কেন এমন হয়? ভয় পেলে আমাদের শরীর এভাবে কাঁপে কেন? আর এটা কেন চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না?

আসলে, ভয় বা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ উদ্দীপ্ত হয়। অংশটির নাম অ্যামিগডালা। অজানা আশঙ্কায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ করে এই অ্যামিগডালা। এটা একধরনের হরমোন। এর একটা ডাকনামও আছে ইংরেজিতে—ফাইট অর ফ্লাইট হরমোন। বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘লড়ো অথবা পালাও’ হরমোন। এই হরমোন একদিকে যেমন পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করে মানুষকে, বিশেষ করে প্রাথমিক অবস্থায়; তেমনি উপায় না থাকলে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এ জন্যই এমন নামকরণ। কিন্তু এর কারণটা কী?

অ্যাড্রেনালিন সরাসরি পেশির রিসেপ্টর বা সংবেদী কোষের ওপর কাজ করে। এ কারণে পেশির তন্তুগুলোর সংকোচন-প্রসারণ দ্রুততর হয়। দেহ প্রস্তুত হয়ে ওঠে ভয় বা উদ্বেগ মোকাবেলার জন্য।

অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশির কম্পন বাড়তে থাকে। একসময় তা আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। বাইরে থেকে দেখলে তখন মনে হয় গোটা শরীর কাঁপছে। প্রায় একই কারণে দুঃসংবাদ শুনলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন

এ অবস্থা থেকে মুক্তির কিছু সাধারণ উপায় বাতলে দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন বড় করে শ্বাস নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা এই ‘বড়’ করে শ্বাস টানা বলতে নির্দিষ্ট এক বিষয়কে বোঝান। ১-৪ পর্যন্ত স্পষ্টভাবে গুনতে যতটা সময় লাগে, ততটা সময় ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া (প্রশ্বাস), সমপরিমাণ সময় শ্বাস ধরে রাখা এবং একই পরিমাণ সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়লে (নিঃশ্বাস) সেটাকে ‘বড়’ করে শ্বাস নেওয়া বলা হয়। এতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে। মস্তিষ্কও বেশি অক্সিজেন পায়। ফলে অ্যাড্রেনালিনের প্রবাহ কিছুটা কমে। তা ছাড়া, শারীরিক ব্যায়াম কিংবা যোগব্যায়ামের মতো অভ্যাস বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। সে জন্য অবশ্য সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। কারণ, চট করে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়। সে জন্য নিয়মিত আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস