পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আলাদা। আলাদা সবার গড়ন। সবার ডিএনএ ভিন্ন। এ কারণে দেখবেন, একজনের সঙ্গে আরেকজনের চেহারা, গলার স্বর, উচ্চতা বা আকৃতি—কোনোটিই হুবহু মেলে না। একইভাবে আমাদের চুলের গঠনেও দেখা যায় ভিন্নতা। কারো চুল একেবারে মসৃণ সোজা, তো কারো চুল কোঁকড়ানো। চুলের রংও নানারকম হয়। এমনকি চুলের পুরুত্বেও লক্ষ্য করা যায় ভিন্নতা। তবে আমরা আজকে চুলের রং বা পুরুত্ব নিয়ে কথা বলব না। বরং মানুষভেদে চুলের গঠন কেন ভিন্ন হয়, সেটাই জানার চেষ্টা করব। বিশেষ করে মানুষের চুল কেন কোঁকড়া হয়, খুঁজব সেই প্রশ্নের উত্তর।
খালি চোখে চুলের সমন্বিত আকৃতিগত ভিন্নতা ছাড়া তেমন কোনো পার্থক্য আমরা দেখতে পাই না। তবে একটি কোঁকড়া চুল ও একটি সোজা চুল যদি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখেন, তাহলে দেখবেন এদের আকৃতি একদম ভিন্ন। সোজা চুলের আকৃতি অনেকটা সিলিন্ডারের মতো মসৃণ ও সুষম। অন্যদিকে কোঁকড়া চুল অসম ও ডিম্বাকৃতির (বা ইংরেজি ডি অক্ষরের মতো)।
প্রতিটি চুলের গোড়ার তুলনায় অগ্রভাগ নমনীয় হয়। চুলের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে সঙ্গে এর আকৃতিতে পরিবর্তন হলে তা ঘুরতে বা মোচড়াতে শুরু করে। প্রতিটি চুল যদি এভাবে মুচড়ে যায়, তাহলে তৈরি হয় কোঁকড়া চুল। আর একগুচ্ছ চুল একসঙ্গে বেঁকে গেলে ঢেউ খেলানো চুল তৈরি হয়।
এমন কেন হয়, তার কারণ জানতে হলে আমাদের যেতে হবে চুলের একদম গোড়ায়। একটি চুল সোজা হবে না কোঁকড়ানো হবে, তা নির্ধারিত হয় চুলের গোড়া বা হেয়ার ফলিকলে। চামড়ার নিচে থাকে এই হেয়ার ফলিকল। এর গঠনই ঠিক করে দেয় চুলের আকৃতি কেমন হবে।
সোজা চুলের ফলিকলগুলোও থাকে সোজা। সরাসরি ত্বকের নিচ থেকে উঠে আসে। অন্যদিকে হেয়ার ফলিকলের আকৃতি আঁকাবাঁকা (ইংরেজি এস অক্ষরের মতো) হলে চুলের আকৃতিতে অসমতা দেখা যায়, চুল হয় কোঁকড়া। হেয়ার ফলিকলের আকৃতি ভিন্ন হওয়ার কারণটা মূলত জিনগত। জিনগত হওয়ার কারণে সন্তানের চুল সাধারণত বাবা অথবা মায়ের চুলের মতো হয়। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম দেখা যায়। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নাহয় আরেকদিন করা যাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: হাউইটওয়ার্কস ম্যাগাজিন