দেহের অতন্দ্র প্রহরী

কোটি কোটি বিদেশি শত্রু ঠিক এই মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আপনার ওপর। যার যে অস্ত্র আছে, তাই দিয়েই ঘায়েল করার চেষ্টা করছে অবিরত। ভাবছেন, আজগুবি কোনো গল্প ফাঁদতে যাচ্ছি? মোটেই না। প্রতিমুহূর্তে আণুবীক্ষণিক নানা অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস হামলে পড়ছে আমাদের ওপর। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আমাদের দেহকোষে আছে স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা। আমাদের অজান্তেই দেহকোষগুলো বাইরে থেকে আসা এসব অতিক্ষুদ্র শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আরও মজার ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ সময়েই জয়ী হয় আমাদের এসব দেহকোষ। একে বলা হয় ইমিউন সিস্টেম। এর একটা দাঁতভাঙা বাংলাও আছে—অনাক্রম্য ব্যবস্থা। সোজা বাংলায় বলা যায় রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা।

এই আক্রমণকারীদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ও এককোষী অণুজীবকে বলা হয় প্যাথোজেন। এদের কাজ শুধু খাদ্যগ্রহণ ও বংশবৃদ্ধি করা। কিছুটা বড়, অর্থাৎ বহুকোষী অণুজীব বা ভাইরাসগুলোতে থাকে একগুচ্ছ জেনেটিক তথ্য। এদেরকে বলা হয় প্রটিস্টা (বহুবচনে প্রটিস্টস)। প্রটিস্টা পর্বের সদস্যরা হোস্ট বা পোষক কোষকে দখল করে সেটার ভেতর নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে। আরও একধরনের পরজীবি আছে। নাম ফাঞ্জাই বা ছত্রাক। এরা উদ্ভিদের মতো জীব।

রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা জীবণুদের দূরে রাখে

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সহজে ঘায়েল হতে চায় না। বিপদজনক ব্যাকটেরিয়া পোষক কোষের মাঝে বিষাক্ত উপাদান ছড়িয়ে দেয়। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রাণিদেহ। এসব অণুজীবের উদাহরণ হলো ই. কলাই, ডেঙ্গু, অ্যানথ্রাক্স, ব্ল্যাক প্লেগ ইত্যাদি। আবার ভাইরাসের আক্রমণে কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে তৈরি হয় হাম। এ ছাড়াও ফ্লু জাতীয় রোগ, যেমন সর্দিকাশিসহ নানা রোগের জন্য দায়ী এসব অণুজীব।

পরিবেশের সবকিছুর সঙ্গেই এসব অণুজীব মিশে আছে। মানুষও এর বাইরে নয়। এক আমাদের পাকস্থলীতে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া আছে, তার সমপরিমাণ কোষ নেই পুরোদেহে! আরও ভালো করে বললে, আমাদের দেহের মোট কোষের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ ব্যাকটেরিয়া আছে এখানে।

তারপরও আমাদের দেহে যে প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে, সেগুলো প্রতিদিন এসব প্যাথোজেন ও ক্ষতিকারক অণুজীবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জিতে যাচ্ছে। মানবদেহের এই মাইক্রোস্কোপিক সৈন্যদের নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠিত। এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে জেনে নেওয়া যাক মজার পাঁচটি তথ্য।

শিল্পীর কল্পনায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও নানান অণুজীব

সুরক্ষা কষ্টদায়কও হয়

হাঁচি, কাশি, গলাব্যাথা ও জ্বর কিন্তু সরাসরি রোগ নয়। রোগজীবাণুর সঙ্গে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুদ্ধ করার সময় দেহে এসব কষ্টকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এবার থেকে যখনই জ্বর আসুক, ভাববেন আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা বাহিনী ভয়ংকর কোনো শত্রুর সঙ্গে বিরতিহীন যুদ্ধ করে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বাড়তি একটু শক্তি জোগাতে এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত।

প্রতিরক্ষা বাহিনী ছড়িয়ে আছে দেহজুড়ে

দেহের এ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যান্টিবডি। দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যান্টিবডি হলো রক্তের শ্বেত কণিকা। আমাদের একফোঁটা রক্তে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার শ্বেত কণিকা থাকে। বলা প্রয়োজন, আমাদের দেহের মোট ওজনের ৭ শতাংশ রক্ত।

অ্যান্টিবডি প্রয়োজনে ধার করা যায়

শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ কম থাকে। এই ঘাটতি পূরণ করে মায়ের বুকের দুধ। মায়ের বুকের দুধে প্রচুর অ্যান্টিবডি থাকে। খাবার হিসেবে এই অ্যান্টিবডি শিশুর দেহে প্রবেশ করে শিশুকে নানা রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

 দেহের সমস্যা সমাধানে কাজ করে অ্যান্টিবডি

প্যাথোজেনের সঙ্গে তো বটেই, ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধেও লড়াই করে দেহের টি-সেল। টি-সেলও একধরনের অ্যান্টিবডি। এই সক্ষমতার জন্য অনেকসময় চিকিৎসকেরা ক্যান্সারের চিকিৎসায় দেহের টি-সেলের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার কাজ করেন।

 পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যায় পড়ে অ্যান্টিবডি

দুর্ভাগ্যবশত ফ্লু এবং সাধারণ সর্দিকাশির বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে না দেহের অ্যান্টিবডি। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব ভাইরাসের মিউটেশন ঘটে।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস ম্যাগাজিন