দেহঘড়ি
বয়স বাড়া ঠেকাতে পারে 'ম্যাজিক মাশরুম', নতুন গবেষণা
ম্যাজিক মাশরুমের একটি উপাদান বয়স্ক ইঁদুরকে দিয়েছে তারুণ্যের স্বাদ। ঠেকিয়ে দিয়েছে বয়স বাড়া। ই আবিষ্কার কি মানবজাতির দীর্ঘায়ু লাভের পথ খুলে দেবে?
ঘড়ির কাঁটার মতো বয়সের কাঁটা কি পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব? বুড়িয়ে যাওয়া শরীরকে কি আবার ফিরিয়ে আনা যায় তারুণ্যে? এ প্রশ্ন মানুষের বহুদিনের। এবার হয়তো এর সমাধানের দিকে এক ধাপ এগোলেন বিজ্ঞানীরা। আর এই উত্তরের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকে। সেই ছত্রাক ‘ম্যাজিক মাশরুম’ নামেই বেশি পরিচিত।
সম্প্রতি এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ম্যাজিক মাশরুমের মূল উপাদান ‘সিলোসাইবিন’ মানুষের কোষের আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে। বয়স্ক ইঁদুরের ওপর তাঁরা পরীক্ষা চালিয়েও এ কথার সত্যতা প্রমাণ করেছেন। গবেষণাটি ৮ জুলাই যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নেচার গ্রুপের npj Aging জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের গবেষক লুইস হেকার ও তাঁর দল এই গবেষণা করেছেন। তাঁরা গবেষণাগারে মানুষের ফুসফুস ও ত্বকের কোষের ওপর সিলোসাইবিন দেন। এতে দেখা যায়, এই রাসায়নিকের প্রভাবে কোষগুলোর আয়ু প্রায় ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। কোষগুলো যেন বয়সের ছাপ হারিয়ে হয়ে উঠেছে তরতাজা।
কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব হলো? বিজ্ঞানীরা এর পেছনের একটি সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকে ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমের মাথায় টুপির মতো একটি অংশ থাকে, যার নাম টেলোমেয়ার। এটি ক্রোমোজোমকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই টেলোমেয়ার ছোট হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিলোসাইবিন হয়তো এই টেলোমেয়ারকে ছোট হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। আর এভাবেই বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
গবেষক দলের প্রধান ডক্টর লুইস হেকার বলেন, ‘ফলাফল দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বার্ধক্য নিয়ে যা যা পরীক্ষা করার ছিল, তার সবগুলোতেই আশানুরূপ ফল পেয়েছি।’
তবে বিজ্ঞানীরা শুধু কোষের ওপর পরীক্ষা করেই থেমে থাকেননি। তাঁরা বয়স্ক ইঁদুরের ওপর সিলোসাইবিন প্রয়োগ করেন। মানুষের হিসাবে ইঁদুরগুলোর বয়স ছিল ষাটের কোঠায়। প্রায় দশ মাস ধরে নির্দিষ্ট মাত্রায় ওদের সিলোসাইবিন দেওয়া হয়।
ফলাফল ছিল দারুণ। দশ মাস পর দেখা যায়, যে ইঁদুরগুলোকে সিলোসাইবিন দেওয়া হয়েছিল তাদের ৮০ শতাংশই বেঁচে আছে। অন্যদিকে, ওষুধ না পাওয়া দলের মাত্র ৫০ শতাংশ বেঁচে ছিল। শুধু আয়ু বাড়াই নয়, ওষুধ পাওয়া ইঁদুরগুলোর শরীরের যেসব জায়গায় টাক পড়ে গিয়েছিল, সেখানে গজিয়েছে নতুন চুল। এমনকি ওদের সাদা হয়ে যাওয়া লোম আবার বাদামি রং ধারণ করেছে।
এ ব্যাপারে হেকার বলেন, ‘জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও যে এমন একটি ওষুধ এতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা সত্যিই অভাবনীয়।’
তবে এই ফলাফল দেখে এখনই উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। যদিও এই গবেষণার ফলাফল বেশ আশা জাগানিয়া, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখনই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার সময় আসেনি। কারণ, গবেষণাগারে ইঁদুরের ওপর যে মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে, তা মানুষের জন্য ব্যবহৃত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
তাছাড়া মানুষের শরীরে এটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে, কতটুকু সাইলোসাইবিন ব্যবহার করা যাবে, কিংবা এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা, তা জানতে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন। তবে এই গবেষণা যে বার্ধক্য এবং বয়সজনিত নানা রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো ভবিষ্যতে এই ম্যাজিক মাশরুমই হয়ে উঠবে মানুষের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের অন্যতম ভরসার নাম।