বছরের বেশির ভাগ সময় গড়পড়তা হিসেবে বায়ু দূষণের শীর্ষে থাকে ঢাকা। এমন পরিবেশে থেকে আমরাও কেমন যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দূষণমুক্ত বাতাস অত্যন্ত জরুরি। অবশ্য শিল্পায়ন ও নগরায়ণের এ যুগে দূষণমুক্ত বাতাস পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ।
বাতাসের দূষণ মাপার বিভিন্ন উপায় আছে। কিন্তু কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া কি বোঝা সম্ভব, আশপাশের বাতাস কতটা দূষিত? সম্ভব হলে, কীভাবে বুঝবেন?
সত্যি বলতে, বাতাস আসলেই দূষিত কি না, তা বোঝা বেশ কষ্টকর। গবেষকদের মতে, নির্দিষ্ট কোনো একটা লক্ষণ দেখে বাতাস দূষিত বলার উপায় নেই। কারণ, দূষিত বাতাসের পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। সেগুলো থেকে এমন ৬টি বিষয় বিজ্ঞানীরা বাছাই করেছেন, যা দেখে কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই আপনি বুঝতে পারবেন, আশপাশের বাতাস আসলেই দূষিত কি না। চলুন, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. চোখ, নাক ও গলায় অস্বস্তি
আশপাশের বাতাস দূষিত হলে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, চোখে চুলকানি ও চোখ থেকে পানি পড়ার মতো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এগুলো নিম্নমানের বাতাসের উপসর্গ। যুক্তরাষ্ট্রের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথ অ্যান্ড অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা নেটওয়ার্কের একজন অ্যালার্জিবিশেষজ্ঞ পূরবী পারিখ। তাঁর মতে, বায়ুবাহিত দূষকের কারণে চোখ জ্বালাপোড়া করে। এমনকি নাক, গলা, ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রেও প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে। সুইজারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ-এর তথ্য মতে, চোখে চুলকানি ও চোখ দিয়ে পানি পড়া দূষিত বাতাসের লক্ষণ। কারণ, বিভিন্ন দূষকের প্রতি আমাদের চোখের কর্ণিয়া সংবেদনশীল।
২. শ্বসনতন্ত্রের রোগ বেড়ে যাওয়া
নিম্নমানের বাতাস শ্বসনতন্ত্রের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সে জন্য শ্বসনতন্ত্রে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, যাঁরা হাঁপানির মতো রোগে ভুগছেন, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। বাতাসে উচ্চমাত্রার অ্যালার্জেন থাকলে হাঁচি, সর্দি, এমনকি অ্যালার্জিক অ্যাজমাও হতে পারে। এখানেই শেষ নয়, ফুসফুসে ক্যান্সার ও সিস্টিক ফাইব্রোসিসসহ আরও রোগব্যাধির জন্ম হতে পারে দূষিত বায়ু থেকে।
নিম্নমানের বাতাসের আরেকটি চিহ্ন বিষণ্নতা। দূষিত বায়ুর কারণে একজন সুস্থ ব্যক্তি খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
৩. মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা
মাথা ঘোরানো বা মাথাব্যথাও হতে পারে দূষিত বায়ুর আরেকটি উপসর্গ। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যালার্জি স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান নির্বাহী জন ম্যাককিওন বলছেন, কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাবে ঝিমুনি আসতে পারে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড—দুটিই বিষাক্ত। এগুলো টিস্যুর ক্ষতি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
৪. বিষণ্নতা এবং ঘুমের সমস্যা
নিম্নমানের বাতাসের আরেকটি চিহ্ন বিষণ্নতা। দূষিত বায়ুর কারণে একজন সুস্থ ব্যক্তি খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। একই কাজ করতে অন্যদের তুলনায় তাঁর বেশি সময় লাগতে পারে। তবে কারো হাঁপানির সমস্যা থাকলেও সহজেই ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু হাঁপানি ছাড়াই যদি কেউ ক্লান্ত হয়ে যান, তাহলে বুঝতে হবে, তাঁর আশপাশের বাতাস বেশি দূষিত। ঘুমের সমস্যার জন্যও দূষিত বায়ু দায়ী হতে পারে। ঘুমের সময়সীমা ও মান—দুটিই কমে যেতে পারে দূষিত বায়ুর কারণে।
৫. জানালার কাচে ধুলা জমা
নির্মাণকাজ চলছে, এমন জায়গায় গেলে দেখবেন, সেখানকার জানালার কাচে ধুলা জমছে। এটাও দূষিত বাতাসের চিহ্ন। আসলে নিম্নমানের বাতাস আমাদের শরীর ও পরিবেশ—দুটিই দূষিত করে। জানালায় জমা ধুলি খালি চোখেই দেখা যায়। এমন পরিবেশ দেখলে বুঝতে হবে, সেখানকার বায়ু দূষিত।
৬. ঘ্রাণ
রাসায়নিক উৎস থেকে আসা নিরবচ্ছিন্ন গন্ধ দূষিত বায়ুর আরেকটি চিহ্ন। এই গন্ধ যে সব সময় পচা গন্ধ হবে, তা নয়। এ ক্ষেত্রে ধোঁকা খেতে পারে আমাদের অলফ্যাক্টরি সেন্সর (গন্ধের পেছনের স্নায়ু)। কারণ, সুঘ্রাণ মানেই বিশুদ্ধ বাতাস নয়। যেমন কাপড় ধোয়ার ডিটারজেন্ট থেকে সুঘ্রাণ আসলেও তা পরিবেশ দূষণ করে। এসব রাসায়নিক আমাদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে প্রভাবিত করতে পারে। আর এ থেকে হতে পারে অসুস্থতার সূত্রপাত।