কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো কি সম্ভব?

প্রচণ্ড দাবদাহে থমকে আছে চারপাশ। কাঠফাটা এই রোদের উত্তাপ কমাতে বৃষ্টি এখন ভীষণ প্রয়োজন। আপনিও নিশ্চয়ই এই গরমে বৃষ্টির কথাই ভাবছেন। মুষলধারে বৃষ্টি নামলে কী দারুণ হতো! কিন্তু মেঘ তো আপনার-আমার কথা শোনে না। চাইলেই তো আর বৃষ্টি নামানো সম্ভব না, নাকি?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভব! এটা অবশ্য এখনকার কথা না। সেই ১৯৪০-এর দশকেই বিজ্ঞানীরা ‘ক্লাউড সিডিং’ আবিষ্কার করেন। সহজ কথায় বললে, ক্লাউড সিডিং হলো কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামানোর একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় মেঘের মাঝে ‘সিড’ বা ‘বীজ’ হিসেবে খাবার লবণ কিংবা সিলভার আয়োডাইড ছড়ানো হয়। ফলে বৃদ্ধি পায় মেঘের আকার।

প্রাকৃতিকভাবে, জলীয় বাষ্পের কণা বায়ুমণ্ডলের ধুলো ও বায়ুমণ্ডলীয় বরফের সংস্পর্শে এসে ঘন হতে থাকে। কোটি কোটি জলীয়বাষ্পের কণা একত্রিত হয়ে তৈরি করে মেঘ। এই মেঘ ভারী হয়, ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তারপর ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে। বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিকভাবে মেঘ বড় হওয়ার এ প্রক্রিয়াটির প্রতিলিপি করে আবিষ্কার করেছেন ক্লাউড সিডিং।

যেভাবে নামানো হয় কৃত্রিম বৃষ্টি

ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে শূন্য থেকে মেঘ তৈরি করা যায় না। আগে থেকে বায়ুমণ্ডলে পাতলা মেঘ থাকতে হয়। সেই মেঘের ওপর উড়োজাহাজ থেকে পানিআকর্ষী ফ্লেয়ারের মাধ্যমে ছড়ানো হয় সিড। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এ কাজ হয়ে যায়। এরপর সিডগুলোর চারপাশে পানির কণা জমতে থাকে। অর্থাৎ তৈরি হয় ঘন মেঘ। সিড ছড়ানোর পর মেঘ তৈরি হতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে।

জলবায়ুর এমন টালমাটাল অবস্থায় বিশেষ করে শুষ্ক দেশগুলোতে কৃষিকাজের জন্য ক্লাউড সিডিং দারুণ উপকারি হতে পারে। ইতিমধ্যে সংযুক্ত আবর আমিরাত, চীন, ভারত, ইরানসহ বহুদেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ক্লাউড সিডিং-এর উপকারি দিকের কথা আসলে বলে শেষ করা যাবে না। তবে সবকিছুর মতো এরও কিছু নেতিবাচক দিক আছে।

ক্লাউড সিডিং-এর একটা বড় সমস্যা হলো এটা ব্যয়বহুল। তা ছাড়া প্রতিবার ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে বৃষ্টি নামানোই যাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। মেঘের ধরন, বাতাসের গতিপথ এসব ঠিক না হলে ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে বৃষ্টি নামানো যায় না। এ ছাড়া, ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে পরিবেশে ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়াতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউইটওয়ার্কস ম্যাগাজিন, উইকিপিডিয়া