ভাইরাস নামকরণের নেপথ্যে

টোব্যাকো মোজাইক ডিজিজে তামাকগাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে মরে যায়। রোগাক্রান্ত পাতার রস কোনো সুস্থ গাছে লাগলে সেই গাছও অসুস্থ হয়ে যায়। রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি ইভানোভস্কি ১৮৯২ সালে এ রোগের জীবাণু খুঁজে বের করার চেষ্টা চালালেন। কিন্তু অনেক চেষ্টায়ও তিনি কিছু খুঁজে পেলেন না।

এরপর ইভানোভস্কি তামাক পাতার রস ছাঁকলেন। তিনি ভাবলেন, খুব ক্ষুদ্র ছিদ্রওয়ালা (ছিদ্রগুলো মাইক্রোস্কোপেই দেখা সম্ভব) কোনো ছাঁকনিতে এই রস প্রবাহিত করলে ক্ষুদ্র জীবাণুগুলো তাতে আটকে যেতে পারে। এতে ছিদ্রের মধ্য দিয়ে জীবাণুহীন রস যেতে পারবে, আর এ রসে তামাকগাছে কোনো রোগ হবে না। ভাবনামতো ইভানোভস্কি বিশেষ ধরনের চিনামাটির ছাঁকনি ব্যবহার করলেন। হিসাবমতে, সবচেয়ে ছোট জীবাণুও ছাঁকনিতে আটকে যাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ছাঁকনিতে চালনা করা তামাক পাতার রস সুস্থ গাছে লাগানোর পর সেগুলো মোজাইক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তাতে ইভানোভস্কি কঠিন এক সত্যের মুখোমুখি হলেন। নিজেকে প্রশ্ন করলেন, জীবাণুগুলো এতই ছোট যে তারা ছাঁকনির ক্ষুদ্র ছিদ্রপথ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে? কোনো জীবাণু যে এত ছোট হতে পারে, তা বিশ্বাস করলেন না তিনি। তাই এই পরীক্ষাপদ্ধতি বাদ দিলেন।

১৮৯৮ সালে ডাচ উদ্ভিদবিদ মার্তিনাস উইলহেম বেইয়ারিঙ্ক প্রায় একই পরীক্ষা করে একই ফল পেয়েছিলেন। তবে তিনি সত্যটা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি ভাবলেন, জীবাণুগুলো সম্ভবত পানির সবচেয়ে ছোট কণার চেয়ে সামান্যই বড় হবে। আর এ কারণেই পানির কণা বা অণু যে পথে যেতে পারে, সেদিক দিয়ে জীবাণুগুলোও যেতে পারে।

বিষাক্ত রস বোঝাতে লাতিনে ভাইরাস (virus) শব্দটি ব্যবহার করা হতো। আবার ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাগোষ্ঠীতেও এর কাছাকাছি একটি শব্দ একই অর্থে ব্যবহূত হতো। যেমন সংস্কৃতে ভাইসা, আভেস্তায় ভাইসা। রোগাক্রান্ত তামাক পাতার রস কোনো সুস্থ তামাকগাছের জন্য বিষাক্ত বলে মনে হয়েছিল বেইয়ারিঙ্কেরও। তাই তিনি এর নাম দিলেন ভাইরাস। এরপর থেকে রসের মধ্যে থাকা অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর জন্য শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে।