সাক্ষাৎকার
বিজ্ঞানে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়—এ তিন বিষয়ই পাওয়া যায়—মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী, ন্যানোপ্রযুক্তিবিদ
মুহাম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটির ন্যানোটেকনোলজি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক। ন্যানোপ্রযুক্তিনির্ভর ডিভাইস নিয়ে কাজ করছেন, যা খুব দ্রুত ও আগাম রোগ নির্ণয় করতে পারবে। এ ছাড়া তিনি চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটি ও আইসিডিডিআরবির একটি যৌথ প্রকল্পে কাজ করছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করে ফিরে আসবেন দেশে, কাজ করবেন দেশের জন্য।
সম্প্রতি এই বিজ্ঞানী এসেছিলেন বিজ্ঞানচিন্তা কার্যালয়ে। সে সময় তাঁর সাক্ষাৎকার নেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার ও সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তায় আপনাকে স্বাগত। যেকোনো মানুষের জীবনে বেড়ে ওঠাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য শুরুতেই আপনার শৈশব-কৈশোর সম্পর্কে জানতে চাই।
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমার শৈশব কাটে বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জয়শ্রী গ্রামে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ওখানেই—জয়শ্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর জয়শ্রীতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে যখন হাইস্কুলে উঠি, তখন লেখাপড়ায় কিছুটা বিচ্ছেদ ছিল আমার। এটি একটি কৌতূহলোদ্দীপক গল্প আমার জীবনের।
এমন না যে আমার পরিবার একদম অসচ্ছল ছিল। কিন্তু ওই সময়ে বাংলাদেশের আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো ছিল। আমরা ছিলাম পাঁচ ভাই। সবাই নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করেছি। বাবা ছিলেন কৃষক। সেই সময় নানা কারণে ফসল হয়নি বছরের পর বছর। আরও কিছু অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল, যার জন্য পড়াশোনা থেকে অনেক দিন বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে। আমি ছিলাম পরিবারের ছোট ছেলে। পাস করার পর যে নতুন স্কুলে ভর্তি হব, সে ধরনের কোনো চিন্তা ছিল না কারও মাথায়। ফলে বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমি উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমার প্রথম উচ্চবিদ্যালয়ের নাম বাদশাগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুল। সেখানে আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। লজিং থাকতাম। কারণ, বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। স্কুল ছিল অনেক দূরে। ওই সময় লজিং থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে যাতায়াতের দুরবস্থা। আমি এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতাম। সেখানে থেকে সপ্তম শ্রেণি শেষ করেছি।
অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর আরেকটা দুর্যোগ আসে। তখন সেখানে লজিং থাকার সুযোগ ছিল না। সে সময় প্রায় এক বছর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। আমার বড় ভাই তখন সিলেটে ছিলেন। বছরের শেষ দিকে তিনি আমাকে সিলেটে নিয়ে আসেন। খালোমুখ বাজার নামের একটা জায়গা আছে দক্ষিণ সুরমায়। সেখানকার সৈয়দ কুতুব জালাল হাইস্কুলে আমাকে ভর্তি করে দেন। ভর্তি হলাম অষ্টম শ্রেণিতে। এর কিছুদিন পর বৃত্তি পরীক্ষা হয়। অল্প কিছুদিন পড়াশোনা করেই আমি ওই স্কুল থেকে প্রথম বৃত্তি পেয়েছিলাম। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর আমার ভাই সিদ্ধান্ত নেন, আমাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করবেন। তখন আমি মোগলা বাজার রেবতী রমণ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেই স্কুলে যাওয়ার পর ওখানকার সব শিক্ষকের নজর ছিল আমার দিকে। সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতেন। ওই স্কুল থেকে আমি ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করি।
এসএসসির পর আমি সিলেটের এমসি কলেজে ভর্তি হই। কলেজের হোস্টেলে থাকতাম। এমসি কলেজের হোস্টেলে এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে থাকতে দেওয়া হতো। অন্য সবার চেয়ে ভালো নম্বর ছিল, তাই সেখানকার ১০৩ নম্বর কক্ষটিতে থাকতে দেওয়া হয় আমাকে। ।ওই হোস্টেলে আমার হাতে অফুরন্ত পড়ার সময় ছিল। তখন আমি অনেক বই পড়েছি। কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সে সময় বাংলা সাহিত্যের অনেক বিখ্যাত বই পড়েছি। হোস্টেলে আমার ভালো কিছু বন্ধু জুটে গিয়েছিল। দু-একজন ছাড়া এইচএসসিতে সবাই স্টার মার্কস পেয়েছিল, একজন তো বোর্ড স্ট্যান্ডধারী।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: অনার্স করার জন্য সাস্ট বেছে নিলেন কেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: ইন্টারমিডিয়েট (এইচএসসি) পরীক্ষার পর আমি বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ও সাস্টে (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি পরীক্ষা দিই। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার গল্প বলতে গেলে অনেক সময় পেরিয়ে যাবে, এ নিয়ে আমার একটি গল্প লেখা আছে।
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার সময় আমার ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা ছিল না। ভর্তি পরীক্ষার কোনো ধরনের প্রস্তুতিও ছিল না। এমনকি কোনো মডেল টেস্ট দেওয়ারও সুযোগ ছিল না। তবু পরীক্ষা একেবারে খারাপ হয়নি। তবে সাস্টে আমার ভর্তি পরীক্ষার ফল অনেক ভালো ছিল। বিষয় নির্বাচনের সময় তেমন কিছু চিন্তা না করেই রসায়নে ভর্তি হয়ে যাই। কারণ, আমি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম, হয় রসায়ন, নয়তো পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করব।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার পিএইচডি ও পোস্টডক সম্পর্কে বলুন।
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: সাস্ট থেকে রসায়নে স্নাতক করার পর আমি বুয়েটে এমফিলে ভর্তি হই এবং শহীদ স্মৃতি হলে থাকা শুরু করি। কারণ, ঢাকায় আমার থাকার জায়গা ছিল না। এরপর দেড় মাসের মধ্যে আমার পিএইচডি স্কলারশিপ (বৃত্তি) হয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। পিএইচডির সময় বেশ কিছু ভালো কাজ করেছিলাম। আমার কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড হয়, গোল্ড মেডেল পাই। এরপর পোস্টডকের জন্য আবেদন করি বিভিন্ন জায়গায়। আমি যে বিষয়ে পিএইচডি করেছি, এ বিষয়ে সেই সময় কে কোথায় কী করছেন, তাঁদের সবার কাজই আমি কমবেশি জানতাম। কে কোথায় কোন কাজ কীভাবে করছেন, তার খোঁজ রাখতাম। বিশেষ করে আমার গবেষণাসংক্রান্ত প্রায় সব গবেষণাপত্র আমি পড়তাম। এরপর সেখান থেকে বাছাই করে পোস্টডকের জন্য ছয় অধ্যাপকের কাছে ই-মেইল করলাম। একজন ছাড়া বাকি পাঁচজনই আমার মেইলের উত্তর দিয়েছিলেন। দেখলাম সবাই আগ্রহী। আমি ফেলোশিপের জন্য আবেদন করি।
আমার পাবলিকেশন রেকর্ড ছিল খুব শক্তিশালী। আমি একসঙ্গে জার্মানির হাম্বল্ট (রিসার্চ) ফেলোশিপ, জাপানের জেএসপিএস, ফ্রান্স থেকে মেরি কুরি—এ তিন ফেলোশিপ পাই। তখনো আমার পিএইচডির ডিফেন্স (শেষ পর্যায়ে ভাইভার মতো যে পরীক্ষায় নিজের গবেষণার যথার্থতা প্রমাণ করতে হয়) হয়নি। আমি সুপারভাইজারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে তিনটি ফেলোশিপ পেয়েছি, ‘এখন কী করব?’ তিনি আমাকে বললেন, ‘দেখো, অপেক্ষা করো। তোমার তো এখনো ডিফেন্স শেষ হয়নি, অনেক সময় আছে।’ এরপর ফিনল্যান্ডের আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ পাই। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম যে কী করব।
এরপর আরেক অধ্যাপক, যিনি আমাকে আগে রিপ্লাই দেননি, আমার ডিফেন্সের কয়েক দিন আগে তিনি ই-মেইল করলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত অধ্যাপক আল্যান বন্ড। অধ্যাপক বন্ডের ই-মেইল পাওয়ার পর আমি বাকি চারটি অফার বাতিল করে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলাম।
মোনাশে অধ্যাপক বন্ডের ল্যাবে জয়েন করার পরদিনই বুঝলাম, আমি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোরিয়া আমাকে রোবটের মতো বানিয়ে ফেলেছিল। আমি বুঝতে শিখলাম, সারা দিন গবেষণাগারে পড়ে থাকা জীবন নয়। আমাদের চারপাশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাঁর ল্যাবে ওই তিন বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি। মোনাশে পোস্টডকের পর ভাবলাম, এবার আমার বায়োলজি শেখা দরকার। এরপর আবার বিভিন্ন জায়গায় আবেদন শুরু করলাম।
আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে ফেলোশিপ পেলাম। ওখানে প্রধানত প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার নির্ণয়ের সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবনের ওপর কাজ করতাম। সেখানে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের বড় দুটি ফেলোশিপ পেয়ে গেলাম—ডেক্রা (Discovery Early Career Researcher Award) এবং এনএইচএমআরসি (NHMRC) ফেলোশিপ। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এই দুটি ফেলোশিপ আমাকে অস্ট্রেলিয়ার অনেক নামকরা বিজ্ঞানী ও গবেষকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল। সেখানে টানা পাঁচ বছর কাজ করার পর ২০১৫ সালে গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে স্থায়ী একাডেমিক হিসেবে যোগ দিই। গ্রিফিথে আমি টানা আট বছর কাজ করেছি।
কোরিয়া আমাকে রোবটের মতো বানিয়ে ফেলেছিল। আমি বুঝতে শিখলাম, সারা দিন গবেষণাগারে পড়ে থাকা জীবন নয়। আমাদের চারপাশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: অস্ট্রেলিয়ায় কী নিয়ে গবেষণা করেছেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমি মূলত ক্যানসার নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করি। ২০১৫ থেকে ক্যানসারের পাশাপাশি মানুষের অন্যান্য রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়েও কাজ করছি। সাম্প্রতিক আমি শস্যের বিভিন্ন রোগ দ্রুত ও স্বল্প মূল্যে কীভাবে নির্ণয় করা যায়, তা নিয়েও কাজ শুরু করেছি। গত ১৫ বছরে আগাম রোগ নির্ণয় করা যায়, এমন কিছু ডিভাইস তৈরি করেছি। এগুলো বিভিন্ন জায়গায় অনেক সাড়া ফেলে। এ বছরের জুন মাসে আমি চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটিতে ন্যানোটেকনোলজির (ন্যানোপ্রযুক্তি) ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে যোগ দিই। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলোজি (জীবপ্রযুক্তি) ও ন্যানোটেকনোলজি (ন্যানোপ্রযুক্তি) নিয়ে কাজ করব। ৪৫ বছর বয়সে ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে বিরল। সাধারণত ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে কেউ ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হন। এ ক্ষেত্রে আমি অনেক ভাগ্যবান যে এমন একটি সুযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি তারা আমাকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের একটি গবেষণা প্যাকেজ দিয়েছে। এ প্যাকেজের আওতায় আমার ল্যাব সেটআপ, মানে গবেষণাগার গুছিয়ে নেওয়া এবং কয়েকজন গবেষণা সহযোগী ও ১০ জনের মতো পিএইচডি স্টুডেন্টের অ্যাপয়েনমেন্ট হবে।
আমি চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়ার পরই লক্ষ করি, এই ইউনিভার্সিটির সঙ্গে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবির ভালো সম্পর্ক আছে। ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের একটি স্যান্ডউইচ প্রজেক্টের আওতায় চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ১২ শিক্ষার্থী নেবে। একটি ব্যাপার আমার খুব ভালো লেগেছে। এই ১২ জন পিএইচডি গবেষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে, তাঁদের আবার আইসিডিডিআরবিতে ফিরতে হবে। তাঁরা কেউ অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে পারবেন না। এতে চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটির লাভ হচ্ছে, এই যৌথ প্রজেক্টের মাধ্যমে কিছু গবেষণা হবে, কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে; আর বাংলাদেশের লাভ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের গবেষক হবেন, পরে বাংলাদেশে থাকবেন। তাঁরা আইসিডিডিআরবিতে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেবেন, বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মকে ভালো গবেষণা শেখাবেন। এ ধারণা আমার খুব ভালো লেগেছে বলে আমি এটার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। পরে আমি নিজের দলের জন্য আরও দুজন পিএইচডি শিক্ষার্থী যুক্ত করলাম। সব মিলে এখন এই স্যান্ডউইচ প্রজেক্টের আওতায় মোট ১৪ শিক্ষার্থী যাচ্ছেন।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: আমরা বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর ইতিমধ্যে পেয়ে গেছি। এবার জানতে চাই, আপনি যখন রসায়ন নিয়ে পড়ার চিন্তা করলেন, তখন তো বাংলাদেশে রসায়ন এত জনপ্রিয় ছিল না। সত্যি বলতে, এখনো রসায়ন এত জনপ্রিয় নয়। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিজে থেকে রসায়নে উচ্চতর পড়াশোনা করতে চান না। তাহলে আপনার রসায়ন নিয়ে পড়ার আগ্রহ কীভাবে তৈরি হলো?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমার রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অনেক আগে থেকে আগ্রহ ছিল। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত ভালো লাগত সব সময়। কারণ, এগুলো খুব বেসিক। যেকোনো কিছু জানতে এই তিন বিষয়ের জ্ঞান লাগে। এর মধ্যে আমার বেশি ভালো লাগত পদার্থবিজ্ঞান। সাস্টে ভর্তির সময় ভোরের কাগজ পত্রিকায় একটি কলাম পড়েছিলাম। কে লিখেছিলেন, তা এখন আর মনে নেই। তবে সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, রসায়ন পড়লে ভবিষ্যতে যে কেউ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল বায়োলজি, ন্যানোটেকনোলজি—এসব বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা বা গবেষণা করতে পারবে। এ কারণেই আমি রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেছি।
দেখুন, গত ১০০ বছর পদার্থবিজ্ঞান পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। চলতি ও ভবিষ্যতের ১০০ বছর আপনি দেখবেন, জীববিজ্ঞান রাজত্ব করছে ও করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের অবশ্যই বায়োলজিক্যাল টেকসই সলিউশন (জীববৈজ্ঞানিক সমাধান) খুঁজতে হবে
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: দক্ষিণ কোরিয়ায় আপনি যে পিএইচডি করলেন, তখন আপনার গবেষণা ছিল কী নিয়ে?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: ১৯৯৭-৯৮ সালে মাইক্রোফ্লুইডিক ডিভাইস জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ওই ডিভাইস দিয়ে ছোট্ট একটি নিয়ন্ত্রিত জায়গায় একাধিক কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সেই ডিভাইসে বিভিন্ন রোগ শনাক্তকারী নির্দিষ্ট নির্দেশক (মার্কার) ও পরিবেশের বিভিন্ন দূষণও শনাক্ত করা যেত। এটি এমন কোনো বড় কাজ নয়। তবে হ্যাঁ, এখন বড় বড় কাজ করতে ওই সব ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে। আমার গবেষণা ছিল এ ধরনের ডিভাইস নিয়ে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি রসায়ন নিয়ে কাজ করার পর জীববিজ্ঞানে আগ্রহী হয়েছেন এবং এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু জীববিজ্ঞানে কেন আগ্রহী হলেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: দেখুন, গত ১০০ বছর পদার্থবিজ্ঞান পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। চলতি ও ভবিষ্যতের ১০০ বছর আপনি দেখবেন, জীববিজ্ঞান রাজত্ব করছে ও করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের অবশ্যই বায়োলজিক্যাল টেকসই সলিউশন (জীববৈজ্ঞানিক সমাধান) খুঁজতে হবে। আর আমি যেহেতু রোগনির্ণয়ের যন্ত্র নিয়ে কাজ করি, তাই আমি যদি রোগ কীভাবে হয়, তা না জানি, তাহলে কীভাবে হবে? তবে আমার গবেষণাক্ষেত্রকে বায়োলজি না বলে বায়োটেকনোলজি বা ন্যানোবায়োটেকনোলজি বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটিতে আপনি এখন কী নিয়ে কাজ করছেন, একটু সহজ করে বলুন।
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: এমন একটি ডিভাইস নিয়ে কাজ করছি, যা খুব দ্রুত ও আগাম রোগ নির্ণয় করবে। এটি খুব সাধারণ ও পরিবর্তনযোগ্য (Adaptable) হবে, যেন বিভিন্ন রোগনির্ণয়ে সাধারণ মানুষ ঘরে বসে ব্যবহার করতে পারে। আর এটি শুধু মানুষ বা প্রাণীর নয়, শস্যেরও রোগ নির্ণয় করতে পারবে। আমরা এখন এই মুহূর্তে ক্যানসার, স্ট্রোক, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, মাতৃস্বাস্থ্য ও অন্তঃসত্ত্বাকালে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি প্রধান কয়েকটি শস্যের রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছি।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার গবেষণায় ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার নিয়ে বলুন।
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে মানুষের কিছু ভুল ধারণা আছে। সহজ করে যদি বলি, ন্যানোটেকনোলজি বা ন্যানোপ্রযুক্তি হলো পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরির জন্য ধাতব কণা ও বস্তুকে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান। বেশির ভাগ মানুষ ন্যানোপ্রযুক্তি বলতে আইসি বা বিভিন্ন ধরনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট মনে করেন। এগুলো আসলে ন্যানোপ্রযুক্তির একটি অংশ। আমরা ন্যানোকণাভিত্তিক ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করি। ন্যানোপার্টিকেল সংশ্লেষণ করি এবং এই ন্যানোপার্টিকেলগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করি। গত কয়েক বছরে এটি প্রমাণিত যে কিছু ধাতব ন্যানোকণা আমাদের শরীরে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রাকৃতিক এনজাইমের মতো কাজ করে। এই ধাতব কণাগুলো প্রাকৃতিক এনজাইমের অনেক বৈশিষ্ট্যকে অনুকরণ (মিমিক) করতে পারে। এই কণাগুলোকে ন্যানোজাইম বলা হয়। মানে, ন্যানোকণাভিত্তিক এনজাইম। এখন এই ন্যানোজাইম উদ্ভাবনও কিন্তু একপ্রকার ন্যানোটেকনোলজি উদ্ভাবন। এই যে আমরা বিভিন্ন রোগের ডিভাইস বানাচ্ছি, সেখানেও এ রকম ধাতব ন্যানোকণার ব্যবহার আছে। এ ছাড়া পুরো ডিভাইস বানানোর প্রক্রিয়াটিই তো ন্যানোটেকনোলজি।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: যে জিনিস আপনারা বানানোর চেষ্টা করছেন, তা কবে নাগাদ মানুষের হাতে এসে পৌঁছাতে পারে?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এখন ক্যানসার, মাতৃস্বাস্থ্য ও শস্যের রোগ নিয়ে যে কাজ করছি, তার কিছু পূর্ণাঙ্গ ডিভাইস ইতিমধ্যে আমাদের গবেষকদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এটি গণমানুষের কাছে এসে পৌঁছাতে বেশ কিছু নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গতানুগতিক ধারায় স্বীকৃত ডিভাইসের সঙ্গে তুলনা করে নানাভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এতে প্রায় দু-তিন বছর থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় নিয়ে ট্রায়াল বা পরীক্ষার কাজ করতে হয়, তারপর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার উপযোগী হবে।। তবে এসব ডিভাইসের পূর্ণ সুবিধা মানুষের নাগালে পৌঁছাতে গবেষণায় ভালো বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের সহযোগিতা খুব দরকার।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: ভবিষ্যতে আপনার পরিকল্পনা কী?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমি মানবস্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে চাই। খাদ্য উৎপাদন ও অগ্রিম রোগনির্ণয় বিষয়ে আরও ভালো কাজ করতে চাই। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের ব্যবহারোপযোগী বিভিন্ন ডিভাইস বানাতে চাই, যা সবাই ব্যবহার করতে পারবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো এই মানবস্বাস্থ্য ও কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে জৈব নিরাপত্তা (Biosecurity) নিশ্চিত করতে হবে। আপাতত ১০ বছর এ কাজ করার ইচ্ছা আছে। এরপর হয়তো আমি কোনো শিল্পোদ্যোগ নেব। কারণ, উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে আমি দরিদ্র জনসাধারণের জন্য অনেক কিছু করতে পারব।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও ভাবতাম যে আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব। দেশের জন্য কিছু একটা করব। এখনো এটা ভাবি। তবে একটু অন্যভাবে। আমি আমার গ্রামে জায়গা কিনে রেখেছি। হাওর এলাকায়। সেখানে আমি কিছু একটা করব দেশের জন্য। কারণ, আমি জানি, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী, বিভিন্ন কারণে তারা তাদের মেধা কাজে লাগাতে পারে না। বাংলাদেশেও পরিবর্তন আসবে, তবে একটু সময় লাগবে। দেশের আয়োজিত বিজ্ঞান মেলাগুলোতে কাজ করার আরও অনেক কিছু আছে। মৌলিক কাজ, নিজস্ব চিন্তাভাবনা—এ বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করা ও তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে কী করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: প্রথমে দরকার দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানমনস্ক কিছু শিক্ষক। একটি বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানমনস্ক একজন শিক্ষক ওই সমাজে যে পরিবর্তন আনতে পারবেন, তা জনপ্রতিনিধিরাও পারবেন না। এ জন্য বলা হয়, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আমরা জানি, সত্য, সুন্দর ও ন্যায়—এই তিন বিষয়ই বিজ্ঞানের মধ্যে পাওয়া যায়। তিনটি বিষয় মুখ্য বিবেচনা করে বিজ্ঞানকে চেনাতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত কিছু বিজ্ঞানায়োজন করা যেতে পারে। যেমন দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা। সেসব ক্লাবে নিয়মিত বিজ্ঞানবিষয়ক আলোচনা হতে পারে, যেখানে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা কথা বলবেন। সংবাদপত্র, টেলিভিশনও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই যেমন বিজ্ঞানচিন্তা যেভাবে নিয়মিত প্রকাশ ও প্রচার করে বাংলাদেশের তরুণদের বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলছে, সে রকম। এভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করতে হবে। তারা আগ্রহী হলে বাকিটা এমনিতেই এগিয়ে যাবে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: শুরুতেই বলেছেন, আপনি প্রচুর বই পড়তেন। পাঠ্যবইয়ের বাইরে এমন কোনো বই আছে যে আপনার মনে হয়, সেটা আমাদের সবার পড়া উচিত?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: অনেক বই, অনেকগুলো বই। তবে একটা যদি বলতে হয়, তবে জীবনানন্দ দাশের কবিতাসমগ্রের কথা বলব। এটি আমার এত প্রিয় যে ৩২ বছর ধরে আমার সঙ্গে আছে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: অবসর সময়ে বই পড়ার পাশাপাশি কী করেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: প্রচুর তথ্যচিত্র দেখি। ইতিহাস ও ভূগোলের প্রতিও আমার আগ্রহ আছে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: প্রিয় মুভি?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভি আমি অনেকবার দেখেছি। আর হচ্ছে ‘ফরেস্ট গাম্প’। বলতে পারেন, এটি অন্য সব মুভির চেয়ে এগিয়ে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: পছন্দের গান?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমি অনেক গান শুনি। অনেক প্রিয় গান আছে। এর মধ্যে কার্পেন্টার্সের ‘টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, সঞ্জীবদার (সঞ্জীব চৌধুরী) ‘সাদা ময়লা রঙিলা পালে’, কবীর সুমনের ‘জাতিস্মর’, ইংরেজি লোকসংগীত ‘ফাইভ হানড্রেড মাইলস’কে আমি এগিয়ে রাখব। এ ছাড়া রবীন্দ্রসংগীত তো আছেই। কিশোর কুমার আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রায় সব গান শুনি। আশি–নব্বইয়ের দশকের ব্যান্ড সংগীতের মধ্যে অনেকগুলো প্রিয় গান আছে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশের প্রিয় লেখক?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: হুমায়ুন আজাদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: বই পড়া, গান শোনা বা মুভি দেখা—এগুলো কি কখনো আপনার বৈজ্ঞানিক জীবনে সহায়ক হিসেবে কাজ করে?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: হ্যাঁ, মৌলিক কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের জন্য আনন্দে থাকা ও কেন্দ্রীভূত (Focused) থাকা খুব জরুরি। যখন একটু অবসর পাই, তখন চেষ্টা করি নিজের মতো খুশি থাকতে। বই পড়া, গান শোনা বা মুভি দেখার চেয়ে আমার কাছে আনন্দের কিছু নেই। ইতিহাস ও ভূগোল আমার প্রিয় বিষয়। তাই ইতিহাস ও তথ্যসংশ্লিষ্ট সিনেমা দেখলে আমার খুব প্রশান্তি লাগে এবং নিজের কাজে মনোযোগী হতে পারি।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: বর্তমান প্রজন্মকে দেখে কী মনে হয়? বই পড়া কি হারিয়ে যাবে?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: মুঠোফোন, ইন্টারনেটের কারণে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঠিক দিকনির্দেশনা নেই। লাইব্রেরিতে যাওয়ার সংস্কৃতি নেই বললেই চলে। প্রতিটি গ্রামে পাঠাগার হওয়া প্রয়োজন। আর পড়ায় মনোযোগী হতে হবে। পড়ার অভ্যাস ও আগ্রহ থাকলে এটি ভবিষ্যতে নানাভাবে সহায়তা করে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: উদ্দেশ্য ভালো থাকলে অবশ্যই ভালো।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: এবার জানতে চাই, বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল কখন?
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আমি কখনো ভাবিনি বিজ্ঞানী হব। কোরিয়ায় পিএইচডির সময় মনে হলো, আমার বিজ্ঞানী হতে হবে। আমি কখনো চাকরির জন্য কোথাও আবেদন করিনি। সব ফেলোশিপের ওপর চলেছে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকেরা কিশোর-তরুণ। তাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু বলুন।
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে, পড়তে হবে প্রচুর, বিভিন্ন ইংরেজি আর্টিকেল পড়াও জরুরি। খেলাধুলা করতে হবে, লেগে থাকতে হবে। পৃথিবী অনেক বড়, একটির পর আরেকটি বিষয় আসবে। সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আর আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে পড়া ও জানার মাধ্যমে।
প্রশ্ন :
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিজ্ঞানচিন্তাকে সময় দেওয়ার জন্য।
মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী: আপনাদেরও ধন্যবাদ।