সিনেমার দেখানো ডাইনোসরের গায়ের রং আসলে ভুল, গবেষণায় মিলল ভিন্ন ছবি

ডাইনোসরের ফসিলে দুই ধরনের মেলানোসোম পেয়েছেন বিজ্ঞানীরাছবি: টেস গ্যালাঘার সৌজন্যে

জুরাসিক পার্ক মুভি বা বইয়ের পাতায় ডাইনোসরদের গায়ের রং কেমন দেখেছেন? সাধারণত ধূসর, কালচে সবুজ বা মেটে খয়েরি, তাই তো? শিল্পীরা সাধারণত বর্তমান যুগের কুমির বা টিকটিকির কথা মাথায় রেখে অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই এই রংগুলো দেন। কারণ, হাড়ের ফসিল দেখে তো আর চামড়ার রং বোঝা সম্ভব নয়।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা এবার সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে এক ধাপ এগিয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকার মন্টানায় মাদার্স ডে কোয়ারি থেকে পাওয়া গেছে ডিপ্লোডোকাস নামে ডাইনোসরের ফসিল। লম্বা গলাওয়ালা যে বিশাল ডাইনোসরগুলো মুভিতে দেখেছেন, সেগুলো। আর সেই চামড়ার আণুবীক্ষণিক বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। বিজ্ঞানীরা সেখানে খুঁজে পেয়েছেন মেলানোসোম।

মেলানোসোম কী? মেলানোসোম হলো আমাদের বা প্রাণীদের কোষের ভেতরের ছোট্ট এক অঙ্গাণু, যা পিগমেন্ট বা রঞ্জক তৈরি করে। সোজা কথায়, আপনার গায়ের রং ফর্সা, কালো নাকি শ্যামলা হবে, তা ঠিক করে দেয় এই মেলানোসোম। ডাইনোসরের ফসিলে এটা পাওয়া যাওয়া মানে, আমরা এখন তাদের আসল রঙের রহস্যভেদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি!

এটিই ইতিহাসের প্রথম ঘটনা, যেখানে কোনো সরোপডের ফসিলে মেলানোসোম পাওয়া গেল। কিন্তু এই কাহিনিতে একটু টুইস্ট আছে। বিজ্ঞানীরা এই ফসিলে দুই ধরনের মেলানোসোম পেয়েছেন। একটা লম্বাকৃতি, অন্যটা চ্যাপ্টা। লম্বাকৃতির মেলানোসোম সাধারণ সরীসৃপদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু এউ চ্যাপ্টা বা ডিস্ক আকৃতির মেলানোসোম বিজ্ঞানীদের ভুরু কুঁচকে দিয়েছে।

আরও পড়ুন
মেলানোসোম হলো আমাদের বা প্রাণীদের কোষের ভেতরের ছোট্ট এক অঙ্গাণু, যা পিগমেন্ট বা রঞ্জক তৈরি করে। অর্থাৎ আপনার গায়ের রং ফর্সা, কালো নাকি শ্যামলা হবে, তা ঠিক করে দেয় এই অঙ্গাণু।

এটা কেন অদ্ভুত? কারণ বর্তমান যুগের পাখিদের মধ্যে এমন চ্যাপ্টা মেলানোসোম থাকলে তাদের পালক রোদে চিকচিক করে বা রঙধনু রং ছড়ায়। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ইরিডিসেন্স। অনেকটা ময়ূরের পালক বা হামিংবার্ডের মতো, যা আলো পড়লে রং বদলায়।

তাহলে কি ডিপ্লোডোকাসরাও রোদের আলোয় ডিস্কো বলের মতো চকচক করত? বিজ্ঞানীরা এখনই এতটা নিশ্চিত করে বলছেন না। তবে ওদের চামড়ার গঠন যে আমাদের ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং আধুনিক পাখি বা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতোই উন্নত ছিল, তা এখন প্রমাণিত। ওদের আঁশগুলো ছিল হেক্সাগোনাল বা ষড়ভুজাকার। আর তাতে নিশ্চিতভাবেই রঙের কারুকাজ ছিল।

ত্বকের নমুনায় পাওয়া সব মেলানোসোম একই রকম ছিল না—কিছু ছিল খুবই অদ্ভুত ও ব্যতিক্রমী!
ছবি: টেস গ্যালাঘার সৌজন্যে

গবেষণার প্রধান লেখক টেস গ্যালাঘার বেশ উত্তেজিত। তিনি বলেছেন, ‘এটা তো কেবল শুরু! আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সামনে আরও বড় চমক আসছে। আমরা কেবল শুরু করেছি।’

ভাবুন তো, ছোটবেলায় যে ডাইনোসরকে আমরা ধূসর রঙের বিশাল দানব ভাবতাম, বিজ্ঞান হয়তো প্রমাণ করে দেবে সে আসলে ছিল রঙিন! হয়তো তাদের গায়ে ছিল জেব্রার মতো ডোরাকাটা দাগ কিংবা ময়ূরের মতো উজ্জ্বল আভা।

রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা আমাদের সেই রঙিন অতীতের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কারণ ডাইনোসরের আসল রূপ দেখার সময় হয়তো আর খুব বেশি দূরে নয়!

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

সূত্র: আইএফএল সায়েন্স

আরও পড়ুন