হেডফোন ব্যবহারে কি কানে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে 

আমাদের কান স্বাভাবিকভাবে গর্তের মতো। অন্ধকার, আর্দ্রতা, তেল ও মরা চামড়া থাকে প্রচুর। ব্যাকটেরিয়ার জন্য এ এক বিশাল ভোজনালয়। আমরা অনেকেই কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনি বা সিনেমা দেখি। হেডফোন গুঁজলে কানের গর্ত বন্ধ হয়ে যায়। এতে পরিবেশটা জীবাণুর ভোজনের আরেকটু উপযোগী হয়। ভাবছেন, কীভাবে? 

২০০৮ সালে ভারতের মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক আবিষ্কার করেন, ঘনঘন হেডফোন (ইয়ারবাড) ব্যবহারের কারণে কানে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। বেশির ভাগই স্ট্যাফিলোকক্কাস ধরনের ব্যাকটেরিয়া। অর্থাৎ ত্বকের সাধারণ ব্যাকটেরিয়া। আবার ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা যায়, উড়োজাহাজে চালক বা যাত্রী হেডফোন ব্যবহার করার মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে হেডফোনে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে প্রায় ১১গুণ। এ কথা শুনে অবশ্য ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই গবেষণায় ব্যবহৃত হেডফোনগুলো ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছিল। তাই ১১ গুণ শব্দটা অনেক বেশি শোনাচ্ছে। কিন্তু এ সংখ্যা আসলে অত বেশিও নয়।

ওই পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়ার যে বৃদ্ধি দেখা গেছে, তা এর স্বাভাবিক জন্মহারের চেয়ে অনেক বেশি। গবেষকেরা জানান, বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া আগে থেকেই কানের ত্বক ও মোম উৎপাদনকারী সেবেসিয়াস গ্রন্থিতে আটকে ছিল। হেডফোনের কারণে তৈরি অন্ধকার এবং উষ্ণ পরিবেশ এদের বের করে এনেছে সুপ্তাবস্তা থেকে।

কানে ইয়ারফোন ব্যবহার করলে বড় কোনো সমস্যা নেই এমনিতে। শব্দদূষণ কমাতে জনবহুল এলাকায় সেটাই আসলে করা উচিত। কিছু গবেষণা আবার বলে, কানে ইয়ারফোন লাগানো বা খোলার সময় সাবধান হওয়া উচিত।

এসব ব্যাকটেরিয়া সাধারণত কানের ক্ষতি করে না। ২০০২ সালে মালয়েশিয়ার এক কল সেন্টারের কর্মীদের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা যায়, তাদের কানের রোগ ও হেডফোনের ব্যবহারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ হেডফোনের কারণে কানে ব্যাকটেরিয়ার উৎপাত বাড়ে। তবে সংখ্যা বাড়ে না। কারণ ওগুলো আগে থেকেই ওখানে ছিল। পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় কানের ভেতর থাকা ওসব ব্যাকটেরিয়াই সক্রিয় হয়। এগুলোর ক্ষতি থেকে বাঁচতে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আগে থেকেই প্রস্তুত। তাই ভয়ের কিছু নেই।

কানে ইয়ারফোন ব্যবহার করলে বড় কোনো সমস্যা নেই এমনিতে। শব্দদূষণ কমাতে জনবহুল এলাকায় সেটাই আসলে করা উচিত। কিছু গবেষণা আবার বলে, কানে ইয়ারফোন লাগানো বা খোলার সময় সাবধান হওয়া উচিত। বারবার ইয়ারফোনের ঘর্ষণ কানের ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে হতে পারে ইনফেকশন। যদিও এর পক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই। তারপরও সাবধান থাকতে তো ক্ষতি নেই।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস