ভেঙে গেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ ‘এ২৩এ’

এ২৩এ আইসবার্গ

দক্ষিণ আটলান্টিক সাগরে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে ‘এ২৩এ’ নামের আইসবার্গটি। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন আইসবার্গ। ৪০ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এটি। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (BAS) সমুদ্রবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজার্স জানিয়েছেন, ‘এটি এখন বেশ কয়েকটি বড় বড় খণ্ডে ভেঙে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে এই আইসবার্গ।

বিজ্ঞানীরা এই আইসবার্গকে ১৯৮৬ সাল থেকেই খুব মনযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। কারণ তখন এটি অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার-রন বরফের স্তর থেকে ভেঙে পড়ে। একসময় এর ওজন ছিল প্রায় এক ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন। ৩ হাজার ৬৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এটি। এটা যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড রাজ্যের চেয়েও কিছুটা বড়। মাঝে ২০১৭ সালে এ৬৮ এবং ২০২১ সালে এ৭৬-এর মতো কিছু হিমশৈল এটিকে আকারের দিক থেকে ছাড়িয়ে যায়। তবে এ২৩এ দীর্ঘকাল সবচেয়ে বড় হিমশৈল খেতাব ধরে রেখেছিল। কিন্তু এখন এটি নিয়মিত ভাঙতে থাকায় সবচেয়ে বড় হিমশৈল খেতাব হারিয়েছে।

বর্তমানে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমশৈল। হয়তো আগামী সপ্তাহে এটি এত ছোট খণ্ডে বিভক্ত হবে যে তা আর সহজে শনাক্ত করা যাবে না। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপের গবেষণা জাহাজ আরআরএস-এর সাহায্যে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো হিমশৈল এ২৩এ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তখন হিমশৈলটি দক্ষিণ জর্জিয়ার কাছে আটকে ছিল। বিজ্ঞানীরা সেখান থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সেই নমুনা এখন বিশ্লেষণের জন্য রয়েছে যুক্তরাজ্যে।

১৯৮৬ সালে যখন বরফের তাক থেকে ভেঙে পড়ে, তখন তা ওয়েডেল সাগরের গভীরে তলিয়ে যায়। ৩০ বছরেরও বেশি সময় এটি সাগরের তলদেশে আটকে ছিল। ২০২০ সালে হিমবাহটি আবার ভেসে ওঠে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে গলতে শুরু করায় কমে যায় বরফের ওজন। তখন এটি আবার ভেসে চলতে শুরু করে। অ্যান্টার্কটিকার শক্তিশালী স্রোতের টানে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে এগিয়ে যায় এটি।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থ অবজারভেশন মনিটরের স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ২৩এ হিমশৈলের আয়তন মূল আকারের অর্ধেকেরও চেয়েও কমে গেছে।

গত মার্চে এটি দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের কাছে চলে এসেছিল। তখন আশঙ্কা করা হয়েছিল, এটি সেখানে বসবাসকারী পেঙ্গুইন ও সিলের মতো প্রাণীদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তবে মে মাসের শেষ দিকে এটি উত্তর দিকে চলতে শুরু করে। বর্তমানে এটি প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে চলছে।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থ অবজারভেশন মনিটরের স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ২৩এ হিমশৈলের আয়তন মূল আকারের অর্ধেকেরও চেয়েও কমে গেছে। এখন এর আয়তন ১ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার। আর এর সবচেয়ে চওড়া স্থানে প্রায় ৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত।

সমুদ্রবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজার্স বলেন, ‘বেশির ভাগ হিমশৈল এতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। হিমশৈলটি এখন এমন জায়গায় চলে এসেছে, যেখানে পানি আগের চেয়ে অনেক উষ্ণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাগরের বিশাল ঢেউ। ফলে নিচের দিক থেকে গলতে শুরু করেছে বরফ। খুব দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে এর চারপাশ। যদিও বরফখণ্ড ভেঙে যাওয়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকা থেকে এ ধরনের বরফখণ্ডের বিচ্ছিন্ন হওয়ার হার দিন দিন বাড়ছে।

এ২৩এ হিমশৈলটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈলের খেতাব এখন ডি১৫এ-এর হাতে। এই বিশাল হিমশৈলটির আয়তন প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিসের কাছে মোটামুটি স্থির অবস্থায় রয়েছে।

সূত্র: সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান