সকালে গোসল করা ভালো নাকি রাতে
অনেকেই দ্বিধায় থাকেন, সকালে গোসল করবেন নাকি রাতে? অনেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গোসল করতে পছন্দ করেন? যারা সকালে গোসল করেন, তাদের অনেকের বিশ্বাস সকালে গোসল করলে ঘুম পুরোপুরি দূর হয়। সারাদিনের কাজের জন্য তারা তৈরি হতে পারেন। অন্যদিকে, রাতে গোসলকারীরা বলেন, রাতে গোসল করলে সারাদিনের ময়লা ও ক্লান্তি চলে যায়। ফলে শান্তিতে ঘুম আসে। এই দুটি যুক্তির মধ্যে বিজ্ঞান আসলে কোনটিকে সমর্থন করে? আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি সবচেয়ে বেশি উপকারী?
গোসল করলে আমাদের ত্বক থেকে ময়লা, ঘাম ও অতিরিক্ত তেল দূর হয়। সারাদিন পরিবেশের ধুলো, দূষণ ও পরাগরেণু আমাদের শরীরে জমতে থাকে। তাই আপনি যদি রাতে গোসল না করেই ঘুমিয়ে পড়েন, তাহলে এই সব নোংরা জিনিস আপনার বিছানার চাদর ও বালিশের কভারেও চলে আসে। এছাড়া আপনার ত্বকে লাখ লাখ জীবাণুর বাসস্থান রয়েছে। ত্বকের প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে দশ হাজার থেকে দশ লাখ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ঘাম গ্রন্থি থেকে আসা তেল খেয়ে বেঁচে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় একধরনের সালফার যৌগ। এই যৌগের কারণেই ঘাম থেকে বাজে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
আপনি সকালে না রাতে গোসল করছেন, সেটা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। বরং, সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে আপনি দিনের শুরুতে সতেজ থাকতে চান, নাকি রাতে আরাম পেতে চান।
এসব যুক্তির কারণে রাতে ঘুমানোর আগে গোসল করা সবচেয়ে ভালো ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মনে হতে পারে। তবে আসল বৈজ্ঞানিক সত্যটা এত সরল নয়। ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী প্রিমরোজ ফ্রিস্টোন মনে করেন, ‘রাতে গোসল করে ত্বক যতই পরিষ্কার করুন না কেন, সারারাত শরীর থেকে ঘাম বেরোতেই থাকবে’।
রাতে গোসল করলেও ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমাদের শরীর থেকে অনেকটা ঘাম বের হয়। সঙ্গে অনেক মৃত ত্বকের কোষ জমা হয় বিছানায়। এই ঘাম আর মৃত ত্বক হলো হাউস ডাস্ট মাইট নামের একধরণের পোকার খাবার। বিছানায় ঘামে ভেজা স্থানে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় ও অল্প হলেও শরীরের দুর্গন্ধ তৈরি করে। তাই রাতে গোসল করার পরেও সকালে উঠে সামান্য দুর্গন্ধ পেতে পারেন।
আসলে, রাতে গোসল করার পুরো সুবিধা পেতে হলে বিছানার চাদর নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ ব্যাকটেরিয়া, ধুলোর মাইট ও ছত্রাক অনেক দিন ধরে চাদর ও বালিশের মতো ভেজা জায়গাগুলোতে টিকে থাকতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তাদের হয়তো তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু তীব্র হাঁপানিতে ভোগা প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ছত্রাকের কারণে অ্যালার্জিতে ভোগেন। এমনকি টিবি বা ধূমপানজনিত ফুসফুসের রোগে আক্রান্তদের জন্য এই ছত্রাকগুলো ফুসফুসের মারাত্মক রোগ তৈরি করতে পারে।
এ জন্য রাতে গোসলের চেয়ে বিছানার চাদর পরিষ্কার রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই পরিষ্কার হয়ে বিছানায় যান না কেন, চাদর দীর্ঘদিন না ধোয়া হলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া, ময়লা ও ধুলার মাইট পোকা জমে থাকবে। আর এটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি। কারণ এই মাইটের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংস্পর্শে থাকলে অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, নোংরা চাদরে নিয়মিত ঘুমালে ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, রাতে গোসল করলে ঘুম ভালো হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের এক বা দুই ঘণ্টা আগে মাত্র ১০ মিনিটের হালকা গরম পানিতে গোসল করলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, রাতে গোসল করলে ঘুম ভালো হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের এক বা দুই ঘণ্টা আগে মাত্র ১০ মিনিটের হালকা গরম পানিতে গোসল করলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। কারণ, গরম পানির কারণে শরীরের তাপমাত্রা প্রথমে বাড়ে। পরে যখন শরীর আবার ঠান্ডা হতে শুরু করে, তখন মস্তিষ্ক ঘুমের জন্য সংকেত পায়। তবে বিজ্ঞানীদের মতে এই বিষয়ট নিশ্চিত করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, সকালে গোসল করলে রাতে বিছানায় জমা হওয়া ঘাম ও জীবাণু দূর হয় এবং সতেজভাবে দিন শুরু করা যায়।
মজার বিষয় হলো, আপনি সকালে না রাতে গোসল করছেন, সেটা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। বরং, সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে আপনি দিনের শুরুতে সতেজ থাকতে চান, নাকি রাতে আরাম পেতে চান। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি দিনে একবার গোসল করেন, তবে দিনের কোন সময় করছেন, তা জরুরি নয়। তবে যারা বেশি পরিশ্রমের কাজ করেন, তাঁরা দিনে দুবার গোসল করতেই পারেন।