ডাইনোসরের মতো মানুষও বদলে দিচ্ছে প্রকৃতির ভবিষ্যৎ

টমাস ফুচস/ সায়েন্টিফিক আমেরিকান

মানুষ আর ডাইনোসরদের মধ্যে একটা মজার মিল আছে। এক সময়ের বিশাল ডাইনোসরেরা যেমন তাদের চারপাশের বন জঙ্গলের ওপর প্রভাব ফেলত, তেমনি আধুনিক যুগে মানুষও প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর। কেউ কেউ তো বলছেন, মানুষই নাকি আধুনিক যুগের ডাইনোসর! কথাটা রূপক অর্থে বললেও হেসে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ফলের বীজের আকারে আজ যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, সেখানে ডাইনোসরের মতো আচরণই যেন ফুটে উঠছে আমাদের মধ্যেও।

সম্প্রতি প্যালিওন্টোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্থলভাগের প্রাণীরা যখন আকারে বড় হচ্ছে, তখন বড় হচ্ছে ফলের বীজও। তবে এর মধ্যে কয়েকটা ব্যতিক্রমও আছে। প্রাচীন যুগে ডাইনোসরদের মতো বিশালদেহী জীবেরা যখন বনের মধ্যে চলাফেরা করত, তখন গাছপালা ভেঙে-চুরে ফেলত। এতে সূর্যের আলো সহজে মাটিতে পৌঁছাত। ফলে গাছের আর বেশি বড় হওয়ার দরকার ছিল না। কারণ, গাছ সহজেই সূর্যের আলো পেয়ে যেত। এতে বড় বীজের প্রয়োজনীয়তাও ছিল কম। আর যখন বন ঘন হয়ে যেত (যেমন ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর), তখন বনে আলো পৌঁছাত কম। এতে গাছ বড় হতো আর সঙ্গে বাড়ত বীজের আকার।

এআই আর্ট

তবে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পর বনের ভেতরের ২০ শতাংশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। তখন আবার বড় বীজের দরকার পড়ে, যাতে গাছগুলো লম্বা হয়ে সূর্যর আলো পেতে পারে। পরিবেশে এমন ভাঙাগড়ার পালা চলতেই থাকে। একে বলে ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং। তবে এই কাজ করে বনের প্রাণীরা। যেমন বর্তমানে আফ্রিকার সাভানার হাতিরা গাছ ভেঙে ফেলে সম্পূর্ণ বনাঞ্চলের চেহারা বদলে দেয়। তবে প্রাচীন যুগের ডাইনোসরদের তুলনায় তা কিছুই নয়।  

বর্তমানে ডাইনোসরের ভূমিকা পালন করছে মানুষ। মানুষের ওজন বা আকার ডাইনোসরদের মতো না হলেও, আমাদের প্রভাব ঠিক সেরকমই। বন কাটা, রাস্তা তৈরি, শহর বানানো—এসব করে আমরা বনভূমিকে পাল্টে দিচ্ছি। এতে গাছের উচ্চতা, ফলের আকার এমনকি বীজের আকৃতিও পাল্টে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিদ ক্লাইভ জি. জোনস বলছেন, ‘মানুষ যে বনভূমির কাঠামো বদলাচ্ছে, তা স্পষ্ট। কৃষিকাজের পাশাপাশি বিদেশি গাছপালা এনে লাগানো, গ্রামকে শহরে বদলে ফেলা, নতুন নতুন রাস্তা আর বসতি গড়া—সব মিলিয়ে আমরা প্রকৃতির অনেক জিনিস পাল্টে দিচ্ছি।

তবে ভবিষ্যতে ফলের বীজ ঠিক কীভাবে পাল্টাবে, তা এখনি নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। কারণ, বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতি খুব দ্রুত হচ্ছে। ফলে আগের যে নিয়মে প্রকৃতি চলত, আজ তার অনেক কিছুই বদলে গেছে। তবু একটা ব্যাপার পরিষ্কার—মানুষ হয়তো ডাইনোসরের মতো বিশালদেহী নয়, কিন্তু প্রভাবের দিক থেকে ঠিক ওদেরই মতো প্রকৃতির ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে।

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান