বই পড়তে গেলে ঘুম আসে কেন

কাজকর্ম শেষে বাসায় ফিরে রাতের খাবারটা সেরে ফেললেন। বসলেন একটা বই নিয়ে। ভেতরে তীব্র উত্তেজনা। পড়তে শুরু করলেন… তারপর টের পেলেন, ভোর হয়ে গেছে। বই পড়ে সারা রাত কাটেনি, আসলে পড়তেই পারেননি। হারিয়ে গেছেন ঘুমের দেশে। কিন্তু কেন এমন হয়? চলুন জেনে নিই, বই পড়তে বসলেই কেন পৃথিবীর সব ঘুম এসে ভর করে চোখে?

বই পড়তে বসলেই পৃথিবীর সব ঘুম এসে ভর করে আমাদের চোখেসংগৃহীত

খুব আগ্রহ নিয়ে দোকান থেকে চমৎকার একটা বই কিনেছেন। কাজকর্ম শেষে বাসায় ফিরলেন। চট করে রাতের খাবারটা সেরে নিয়েই বসলেন বইটা নিয়ে। ভেতরে তীব্র উত্তেজনা। পড়তে শুরু করলেন… তারপর টের পেলেন, ভোর হয়ে গেছে। বই পড়ে সারা রাত কাটেনি, আসলে পড়তেই পারেননি। নিজেও টের পাননি, কখন হারিয়ে গেছেন ঘুমের দেশে।

কিন্তু কেন এমন হয়? বই পড়তে বসলেই কেন পৃথিবীর সব ঘুম এসে ভর করে চোখে? এই প্রশ্ন মাথায় আসেনি, এমন বইপ্রেমী খুঁজে পাওয়া বোধ হয় একটু কঠিনই হবে। যাঁরা বই পড়েন, তাঁদের অনেকের মনেই নিশ্চয়ই প্রশ্নটা উঁকি দিয়ে গেছে নানা সময়ে। এ নিয়ে একটা মজার কথা প্রচলিত আছে। বই যে কালিতে ছাপা হয়, ওতে বোধ হয় ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকে!

না না, এমন কিছু নয়। সত্যি বলতে, সবাই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েন না। অনেকে বরং পড়ে সারা রাত কাটিয়ে দেন। যাঁদের ঘুম চলে আসে, তাঁরাও যে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণে ঘুমিয়ে পড়েন, বিষয়টা তা নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন কারণেই এমনটা হতে পারে।

আরও পড়ুন
আমাদের বেশিরভাগই পড়ার সময় আরামদায়ক কোথাও বসি। শরীর আরাম পেলে একটু ছেড়ে দেয়। আয়েশ করতে চায়। সেটাও ঘুমিয়ে পড়ার একটা কারণ।

পড়ার সময় আমাদের চোখ সারা পৃষ্ঠায় ঘুরে বেড়ায়। সেজন্য চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়তে থাকে ধীরে ধীরে। তা ছাড়া, পড়ার জন্য মস্তিষ্ক খাটাতে হয়। শব্দে আঁকা নানা ছবি, দৃশ্যকল্প তৈরি হয় মাথায়। তাই প্রতিটি শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ বুঝতে পরিশ্রম হয় মস্তিষ্কের। ফলে একদিকে চোখ যেমন বিশ্রাম চায়, তেমনি মস্তিষ্কও চায় একটু জিরিয়ে নিতে। এই দুইয়ে মিলে ঘুমিয়ে পড়া তাই অস্বাভাবিক নয়।

তাই বলে ভাববেন না, পড়াটা চোখের জন্য খারাপ। তবে আপনি যেমন একটানা অনেক কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, চোখও তেমনি কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই ডাক্তাররা বলেন, পড়লে বা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে প্রতি ২০ মিনিট পরপর দূরে কোথাও তাকিয়ে বা চোখ বন্ধ করে চোখকে ২০ সেকেন্ড করে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। এই বিশ্রাম দিলেও, একদিনে চোখ নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করার পর ক্লান্ত হয়েই পড়বে। ফলে সে সময় তার বিশ্রাম লাগবেই। চোখের এই চাওয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের চাওয়া এক হলে ঘুম নেমে আসাই স্বাভাবিক।

আবার আমাদের বেশিরভাগই পড়ার সময় আরামদায়ক কোথাও বসি। শরীর আরাম পেলে একটু ছেড়ে দেয়। আয়েশ করতে চায়। সেটাও ঘুমিয়ে পড়ার একটা কারণ। আরেকটা কারণ, অনেকেই পড়তে বসেন সব কাজ শেষে, একদম রাতের খাবারের পর। সারাদিনের ক্লান্তি তখন আপনাকে এমনিতেই ঘুমের দেশে টেনে নিতে চাইবে।

আরও পড়ুন
খুব বেশি ক্লান্ত না হলে কিছু সময় অবশ্যই পড়তে পারবেন। তবে যে বইটা পড়ছেন, তার ওপরও বিষয়টা কিছুটা নির্ভর করে। পড়ে যদি মজা না পান, তাহলে বিরক্তি জেঁকে বসবে। এই বিরক্তি এড়াতেও মস্তিষ্ক পালাই পালাই করে উড়ে যেতে পারে ঘুমের দেশে।

খাবারেরও একটা প্রভাব আছে। ভরপেট খেয়ে যদি পড়তে বসেন, তাহলে ঘুম আসি আসি করবেই। এর কারণও আছে।

ভরপেট খাবার পর পাকস্থলীর ওপর ওসব খাবার হজম করার গুরু দায়িত্ব বর্তায়। শুরু হয় খাবার হজম প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এ সময় স্বাভাবিকের তুলনায় পাকস্থলীতে কাজ বেড়ে যায়। তাই বেশি রক্তের প্রয়োজন হয় সেখানে। এই বাড়তি রক্ত পাকস্থলীতে জমা হতে থাকে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে। এর প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। সেখানে রক্তের খানিকটা অভাব পড়ে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় মস্তিস্কের সক্রিয়তা। এ সময় যদি আপনি পড়ার কাজ চাপিয়ে দেন তার ওপর, সেই সঙ্গে কল্পনা করা ও বুঝে বুঝে শব্দের রেললাইন ধরে এগোনোর গুরু দায়িত্বটাও দিয়ে দেন, বেচারা একটু বিশ্রাম তো চাইবেই!

আরও পড়ুন

খুব বেশি ক্লান্ত না হলে কিছু সময় অবশ্যই পড়তে পারবেন। তবে যে বইটা পড়ছেন, তার ওপরও বিষয়টা কিছুটা নির্ভর করে। পড়ে যদি মজা না পান, তাহলে বিরক্তি জেঁকে বসবে। এই বিরক্তি এড়াতেও মস্তিষ্ক পালাই পালাই করে উড়ে যেতে পারে ঘুমের দেশে। পাঠ্যবই পড়তে গেলে ঘুমিয়ে পড়ার পেছনে এটা একটা বড় কারণ। কিন্তু পাঠ্যবই পড়া আমাদের জন্য জরুরি। এরকম জরুরি পড়াশোনার জন্য শুয়ে বা হেলান দিয়ে পড়ার চেয়ে খাড়া পিঠের কোনো চেয়ারে বসে পড়লে ঘুম আসার সম্ভাবনা কমে যায়।

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: বিবিসি ফোকাস, ওয়ান্ডারোপোলিস, বিজ্ঞানচিন্তা

আরও পড়ুন