বিষয়টি এত বিরল যে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র ৩০-৪০ জন রোগী পাওয়া গেছে।
পানির অপর নাম জীবন। আর সেই পানির প্রতিই যদি কারো অ্যালার্জি থাকে, তখন কী হবে? গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা, ঘর পরিষ্কারের কাজে, আর সবার আগে তৃষ্ণা মেটাতে পানি লাগে। প্রতিদিন আরও কত কাজেই না পানির প্রয়োজন। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। এ কারণে পানির প্রতি অ্যালার্জির কথা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, কিছু লোক এই বিরল সমস্যায় আক্রান্ত। পানির প্রতি অ্যালার্জি—চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকেরিয়া এবং অ্যাকুয়াজেনিক প্রুরাইটিস। দুটোই পানিজনিত অ্যালার্জি-প্রতিক্রিয়া সর্ম্পকিত রোগ। বিষয়টি এত বিরল যে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র ৩০-৪০ জন রোগী পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের তথ্যানুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশলি মরিস (বয়স ২১) এবং ইংল্যান্ডের মিশেলা ডুটন (বয়স ২৩)—এই দুই নারী বিরল সেই রোগ, অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকেরিয়ায় আক্রান্ত। পানির সংস্পর্শে এলেই তাঁদের ত্বক ও মুখের ভেতরের ঝিল্লি চুলকাতে থাকে, ফুলে ওঠে লালাভ চাকা চাকা হয়ে। সারা শরীরে দেখা দেয় একই অবস্থা। আর গোসল করা তো খুব কষ্টকর অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য।
অন্যদিকে মিশেলা পানি, চা, কফি কিছুই পান করতে পারেন না। এমন কি ফলও খেতে পারেন না। পানিজাতীয় কিছু খেলেই শুরু হয় সারা শরীরে চুলকানি, মুখ ও গলার ভেতরটা ফুলে ওঠে লালাভ হয়ে। তিনি শুধু ডায়েট কোক পান করতে পারেন। অ্যাশলি যতটা সম্ভব পানি এড়িয়ে চলেন। খেলাধুলাসহ অন্য সব শারীরিক কর্মকাণ্ড, যেগুলোতে ঘাম ঝরে, সব তিনি বন্ধ রেখেছেন। অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকেরিয়া খুব বিরল ধরনের অসুস্থতা হওয়ায় চিকিত্সকদের এই প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।
এর এখনো সেরকম কোনো চিকিৎসা নেই। অবশ্য তেলনির্ভর ময়েশ্চেরাইজার ও অতিবেগুনি রশ্মিনির্ভর কিছু সম্ভাব্য চিকিৎসা রয়েছে, যেগুলোতে কিছু ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেছে। কমেছে রোগীর দুর্ভোগ। তবে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। অতিদুর্লভ রোগ বলেই এই চিকিৎসাগুলো কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে এখনো ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
লেখক: সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল; অ্যাডজাঙ্কট অধ্যাপক, মিলড্রেড এলি (নিউইয়র্ক ক্যাম্পাস), যুক্তরাষ্ট্র