অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনে বিলম্ব কেন?

ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষারয়টার্স

৮ ডিসেম্বর ২০২০ দিনটি দুটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এক, এই দিনটিতেই সকল ধাপের ট্রায়াল এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফাইজারের নবউদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনটি জনসাধারনের ওপর প্রয়োগ শুরু হল। ওইদিন যুক্তরাজ্যের কোভেন্ট্রিতে ৯১ বছরের মার্গারেট কিনান নামে এক বৃদ্ধাকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে শুরু হয় করোনা মহামারী দমনের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা।

এই দিনটিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার ভ্যাকসিনটির ফেজ-৩ ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশিত হয় বিখ্যাত জার্নাল ল্যানসেটে। ফলে ইতিহাসে প্রথম প্রমাণিত হল যে অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর-নির্ভর ভ্যাকসিন কার্যকরি। এছাড়াও অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনই সর্বপ্রথম করোনা ভ্যাকসিন যার ফেজ-৩ ট্রায়ালের ফলাফল কোনো বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে ফাইজার, মর্ডানা, রাশিয়ার গ্যামালেয়া এবং চীনের সিনোভ্যাক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভ্যাকসিনগুলোর ফেজ-৩ ট্রায়ালের অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল ঘোষণা করেছে। তবে কেউ এখনো পূর্ণ ফলাফল কোন জার্নালে প্রকাশ করেনি।

কী আছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ল্যানসেট পেপারটিতে? ফলাফল কীআশাব্যঞ্জক?

এই পেপারটিতে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেজ-৩ ট্রায়ালের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান প্রায় ২৩ হাজার ভলান্টিয়ারের তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ভ্যাকসিনটির নিরাপত্তা বা সেফটি প্রোফাইল নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা বা এফিকেসি নির্ধারনের জন্য শুধুমাত্র যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের মোট ১১,৬৩৬ জন ভলান্টিয়ারের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুটি পূর্ণ ডোজ বা স্ট্যান্ডার্ড ডোজ (৫০ বিলিয়ন ভাইরাস পার্টিকেল) টিকা দেয়াতে ভ্যাকসিনটির কার্যকারীতা ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রথমে অর্ধেক ডোজ বা লো-ডোজ (২২ বিলিয়ন ভাইরাস পার্টিকেল) এবং পরে পূর্ণ ডোজ টিকা দিলে এর কার্যকারিতা পাওয়া যায় ৯০ শতাংশ। গড়ে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা দাড়ায় ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি একশ জনকে ভ্যাকসিন দিলে গড়ে ৭২ জন কোভিডের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এছাড়াও ভ্যাকসিন গ্রহিতাদের ভেতরে কারোরই সিভিয়ার কোভিড হয়নি, অথবা তাঁরা কেউই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হননি। ভ্যাকসিন গ্রহিতাদের ভেতরে কেউ মারাও যাননি। অর্থাৎ অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন সিভিয়ার কোভিড থেকে মানুষকে রক্ষা করে শতভাগ। এই ট্রায়ালে যারা কন্ট্রোল গ্রুপে ছিল, অর্থাৎ যারা প্ল্যাসিবো বা ডামি ভ্যাকসিন পেয়েছিল, তাদের ভেতরে দশ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদের দুইজন আক্রান্ত হয়েছিলেন সিভিয়ার কোভিডে, এদের একজন মারা গেছেন।

অন্যদিকে, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন অ্যাসিম্পটোম্যাটিক করোনা ইনফেকশনও প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রতিরোধক ক্ষমতাটি মূলত পরিলক্ষিত হয় ভ্যাকসিনের অর্ধেকডোজ/পূর্ণডোজ টিকাতে। টিকাটির দুটি পূর্ণডোজ যেখানে অ্যাসিম্পটোম্যাটিক ইনফেকশন প্রতিরোধ করে মাত্র ৪ শতাংশ, সেখানে অর্ধেকডোজ/পূর্ণডোজ টিকা ইনফেকশন প্রতিরোধ করে প্রায় ৬০ শতাংশ। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের এই সক্ষমতাটি সংক্রমণ বিস্তার রোধে বেশ কার্যকরি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছ। ফাইজার বা মর্ডানার ভ্যাকসিনের এ ধরনের সংক্রমণ বিস্তার রোধের সক্ষমতা এখনও প্রমাণিত হয়নি।

সব কিছুর বিচারে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেজ-৩ ট্রায়ালের ফলাফল বেশ ভাল মনে হলেও এখনও বেশ কিছু প্রশ্ন এবং জটিলতা রয়ে গেছে। আর এই কারণেই ভ্যাকসিনটির আন্তর্জাতিক বাজারে অনুমোদনে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। গত দুসপ্তাহ ধরে ব্রিটিশ রেগুলেটরি বডি (এমএইচআরএ) অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সকল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল রোলিং রিভিউয়ের মাধ্যমে পর্যালোচনা করছে। এখনও বোঝা যাচ্ছে না, তারা ভ্যাকসিনটিকে ইমারজেন্সি ব্যাবহারের অনুমোদন দেবে কিনা। যদি দেয়ো, তা হবে মূলত যুক্তরাজ্যের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের রেগুলেটরি বডি এফডিএ এবং বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছে , অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেজ-৩ ট্রায়ালের অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল আপাতত অনুমোদন দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

এফডিএ এবং ডাব্লিএইচও কেন বলছে যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল পর্যাপ্ত নয়?

১. অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের পূর্বপরিকল্পিত দুটি পূর্ণডোজ কার্যকারীতা দেখিয়েছে মাত্র ৬২ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই এই সংখ্যাটি আশাব্যঞ্জক নয়। আর একারণেই অক্সফোর্ড বা অ্যাস্ট্রাজেনিকা সাধারণের মাঝে এই ডোজ প্রয়োগে আগ্রহী নয়।

২. ফেজ-৩ ট্রায়ালের সময় ভুলবশত ১,৩৬৭ জনকে প্রথমে দেয়া হয় অর্ধেকডোজ ভ্যাকসিন এবং দ্বিতীয় বারে দেয়া পূর্ণডোজ ভ্যাকসিন। সমসংখ্যক ভলান্টিয়ারকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় কন্ট্রোল গ্রুপে, যাদের দেয়া হয় মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন। প্রটোকল অনুযায়ী দুই ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান থাকার কথা ১ মাস বা ৪ সপ্তাহ। কিন্তু সরবরাহ বিলম্বিত হওয়ার কারণে, বাস্তবে এই গ্রুপের ৫৩ শতাংশ ভলান্টিয়ারকে এই ডোজ দুটো দেয়া হয় ৩ মাসেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে। মাত্র ১ শতাংশেরও কম ভলান্টিয়ারকে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয় ২ মাস ব্যবধানে। এভাবে লম্বা সময়ের ব্যবধানে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়ায় ভ্যাকসিনটির কার্যকরিতা পাওয়া যায় ৯০ শতাংশ। কিন্তু এই ট্রায়াল থেকে কোনভাবেই বলা যাবে না যে টিকার এই ডোজ দুটি যদি প্রটোকল অনুযায়ী ১ মাস ব্যবধানে দেয়া হত তাহলে ভ্যাকসিনটির কার্যকারীতা কত শতাংশ হত? তাদেরই দুটি পূর্ণডোজ পাওয়া অন্য গ্রুপের ট্রায়ালে দেখা যায়, দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময় কমে এলে টিকার কার্যকারীতাও কিছুটা কমে যায়। সুতরাং এই ট্রায়াল থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে ভ্যাকসিন দিলে তা কতটুকু কার্যকর হবে। আর এ কারনেই অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনিকাকে এই ট্রায়ালটি আবার করতে হবে।

৪. শুধু তাই নয় এই অর্ধেকডোজ/পূর্ণডোজ ট্রায়াল গ্রুপের ভলান্টিয়ারদের কারও বয়সই ৫৫ বছরের বেশি ছিল না। একারণেই এই ডোজে ভ্যাকসিনটি ৬০-৮০ বছরের বৃদ্ধদের উপর কতটুকু কার্যকর তা রয়ে গেছে অজানা। যেহেতু বৃদ্ধরা করোনা আক্রান্ত হলে মারা যায় বেশি, তাই তাদের জীবন রক্ষার জন্যই ভ্যাকসিন বেশি প্রয়োজন। ব্রিটেনে প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন দেয়া হবে ৮০ বছরের বেশী বয়সের মানুষকে। সুতরাং অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন প্রকৃতপক্ষেই বৃদ্ধদের সুরক্ষা দেয় কিনা তা দেখার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনিকাকে আবারও ৭০-৮০ বছরের বৃদ্ধদের উপর বাড়তি একটি ট্রায়াল করতে হবে।

৫. ফেজ-৩ ট্রায়ালে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার সার্বজনীনতা দেখা হয়। অর্থাৎ ভ্যাকসিনটি বিভিন্ন এথনিক সম্প্রদায়, যেমন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়ানদের উপর সমভাবে কার্যকর কিনা তা দেখা হয়। অক্সফোর্ডের ট্রায়ালে এই অর্ধেকডোজ/পূর্ণডোজ গ্রুপে এথনিক ডাইভারসিটি ছিল মাত্র ৮ শতাংশ এবং ৯২ শতাংশই ছিল ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ। ফাইজার বা মর্ডানার ক্ষেত্রে এই এথনিক ডাইভারসিটি ছিল প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ।

৬. একটা ভ্যাকসিনকে আপামর জনসাধারণের ওপর প্রয়োগের জন্য অনুমোদন পেতে হলে, এটা দেখাতে হয় যে ভ্যাকসিনটি সকল বয়স এবং সকল গৌত্রের মানুষের ওপর কার্যকরি। একারণেই অ্যাস্ট্রাজেনিকা এখন এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে নতুন করে আরেকটি ফেজ-৩ ট্রায়াল চালাবে খুব শীঘ্রই। নতুন ট্রায়াল ছাড়া তাদের ভ্যাকসিনটি এফডিএ এবং ডাব্লিউএইচও-এর অনুমোদন নাও পেতে পারে।

৭. ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভুল ওষুধ বা ভুল ডোজ প্রয়োগের কোনো অবকাশ নেই। তবুও কেন অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ১৩ শ জনের ওপরে ভুল করে পূর্ণ ডোজের পরিবর্তে অর্ধেক ডোজ প্রয়োগ করা হল? এর ব্যাখ্যায় ল্যানসেট পেপারটিতে বলা হয়েছে, এই ভুলটি হয়েছে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের পরিমাপ নির্নয়ের পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে। অ্যাস্ট্রাজেনিকার ট্রায়ালে ব্যবহৃত ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয় দুটি থার্ড-পার্টি কোম্পানি থেকে। এদের মধ্যে একটি হল যুক্তরাজ্যের কিলি ইউনিভার্সিটির কোবরা বায়োলজিকস্ এবং আরেকটি ইতালির অ্যাডভেন্ট। এদের ভেতর একটি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজে ভাইরাসের সংখ্যা পরিমাপ করেছিল স্পেকট্রোফটোমেট্রির মাধ্যমে। পরবর্তিতে দেখা যায় এই পদ্ধতিতে যেই পূর্ণ ডোজে ৫০ বিলিয়ন ভাইরাস পার্টিকেল নির্নীত হয়েছে, পিসিআর টেস্টে দেখা যায় সেখানে আসলে রয়েছে ২২ বিলিয়ন ভাইরাস পার্টিকেল! আর এভাবেই একটি ভুল পদ্ধতির কারণে হাজার খানেক ভলান্টিয়ারকে পূর্ণ ডোজ ভেবে অর্ধেক ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে অবশ্য এই ত্রুটি রেগুলেটরি বডিকে অবহিত করা হয়েছে এবং ডোজ পরিমাপের পদ্ধতি পিসিআর স্থির করা হয়েছে, কারণ পিসিআরই সবচেয়ে সঠিক ভাবে ভ্যাকসিনের ভাইরাসের পরিমাণ নির্নয় করতে পারে।

এখন আরেকটি প্রশ্ন সবার সামনে। তা হল কেন সমপরিমাণে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেয়াতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যায়, কিন্ত প্রথমে কম ডোজ দিলে কার্যকারিতা বাড়ে?

অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স-১ ভ্যাকসিনটি একটি অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টরভিত্তিক ভ্যাকসিন। এক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জির অ্যাডিনোভাইরাসের ভেতরে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিন প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এখানে জীবিত অ্যাডিনোভাইরাস জিনটির বাহক হিসেবে কাজ করে। ভ্যাকসিন হিসেবে এই রূপান্তরিত অ্যাডিনোভাইরাসকে যখন মাংসপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়, তখন ওই অ্যাডিনোভাইরাস শরীরে গিয়ে স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। পরে যার বিপরীতে আমাদের ইমিউন সিস্টেম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আর এভাবেই রূপান্তরিত অ্যাডিনোভাইরাস আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে করোনাভাইরাসের বিপরীতে ট্রেইন-আপ করে।

তবে এক্ষেত্রে আরেকটি ঘটনাও ঘটে সমান্তরালে। আমাদের ইমিউন সিস্টেম অ্যাডিনোভাইরাসের বিপরীতেও রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলে। একে বলে অ্যান্টি-ভেক্টর ইমিউনিটি। এই ইমিউনিটি নিরীহ ভেক্টর-ভাইরাসকে খারাপ জীবাণু ভেবে ধ্বংস করে ফেলে! আর এতে করে প্রথম ডোজে সমস্যা না হলেও পরবর্তী ডোজে রুপান্তরিত অ্যাডিনোভাইরাসটি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। একারণেই অ্যান্টি-ভেক্টর ইমিউনিটি এ ধরনের ভাইরাল ভেক্টরভিত্তিক ভ্যাকসিনের জন্য একটা বড় অন্তরায়।

এ সমস্যা এড়াতেই কিন্তু অক্সফোর্ড তাদের ভ্যাকসিনে মানুষের অ্যাডিনোভাইরাস ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছে শিম্পাঞ্জির অ্যাডিনোভাইরাস। কারণ আমাদের শরীরে সাধারণত শিম্পাঞ্জি অ্যাডিনোভাইরাসের বিপরীতে কোন ইমিউনিটি থাকে না। তবে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রথম ডোজ অ্যাডিনোভাইরাস প্রবেশ করানোতে আমাদের ইমিউন সিস্টেম এই শিম্পাঞ্জি ডিনোভাইরাসের বিপরীতেও ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে বেশি ডোজের ভাইরাস প্রবেশ করালে শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টি-ভেক্টর ইমিউনিটি তৈরি হতে পারে। যা পরবর্তিতে দ্বিতীয় ডোজের ভাইরাসকে নিস্ক্রিয় করে ফেলতে পারে। তবে প্রথমে কম ডোজ দিলে দুর্বল অ্যান্টি-ভেক্টর ইমিউনিটি তৈরি হয় যা হয়তো দ্বিতীয় ডোজের অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টরকে তেমন প্রভাবিত নাও করতে পারে। ল্যানসেট পেপারটিতে এরকম ঘটনা অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের বেলায় ঘটছে বলেই কিছুটা ধারণা দিয়েছে। এর স্বপক্ষে এখনও অবশ্য কোন পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ নেই।

এযাবৎ চালানো ফেজ-১/২/৩ ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটির তেমন মারাত্মক কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং ভ্যাকসিনটি নিরাপদ হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। তবে সামনে এসেছে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: (১) অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি কি বৃদ্ধদের উপর কার্যকরী? (২) ভ্যাকসিনটি কি সকল বর্ণ এবং গৌত্রের মানুষের উপর সমভাবে কার্যকরী?

অর্ধেকডোজ/পূর্ণডোজ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এ দুটো প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য ভ্যাকসিনটিকে সার্বজনীন করতে হলে এই প্রশ্নগুলির উত্তর জানা একান্তই জরুরী। আর এ কারণেই এসবের যথাযথ উত্তর ছাড়া ভ্যাকসিনটি অত সহজে এফডিএ বা ডাব্লিউএইচওর অনুমোদন পাবে না।

এটা অনুধাবন করতে পেরেই অ্যাস্ট্রাজেনিকা এখন তাদের ভ্যাকসিনটির অর্ধেকডোজ/পূর্ণডোজের নতুন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার কথা ভাবছে। এই ট্রায়ালটি হবে আন্তর্জাতিক পরিসরে। এ মাসের শেষে বা আগামী বছরের প্রারম্ভেই ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা। অনুমান করা যায় যে এই নতুন ট্রায়ালটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে। অতএব, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিনটি পেতে হয়তো পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন মাস বেশী সময় লাগবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ভ্যাকসিনটি হয়তো আগামী বছরের মে-জুনের দিকে আসতে পারে। তবে কিছুটা দেরি হলেও অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন আসবে, এবং তা মানব সভ্যতায় আশির্বাদ হয়েই আসবে। এ আশাটুকু করা যেতেই পারে।

লেখক: সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য