অ্যাপেনডিক্স অপ্রয়োজনীয় নয়

তখন সবেমাত্র ক্লাস নাইনে। জীববিজ্ঞান ক্লাসে বন্ধুর সাথে গল্প করছি। স্যার আমাদের গল্প করতে দেখে ফেললেন। ব্যস, দিলেন দুজনকে বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে।

মিনিট তিনেক পর স্যার বললেন, তোদের দুজনকে একটা করে প্রশ্ন করব। উত্তর দিতে পারলে শাস্তি মাফ। প্রশ্নটা ছিল—মানবদেহের নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম কী?

সেদিন উত্তরটা দিতে পারিনি। পরে জেনেছিলাম, সেই নিষ্ক্রিয় অঙ্গটি হলো অ্যাপেনডিক্স। তারপর থেকে জানতাম অ্যাপেনডিক্স কোনো কাজের জিনিস নয়। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, অ্যাপেনডিক্স কোনো নিষ্ক্রিয় অঙ্গ নয়। বরং মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এর উপস্থিতি-অনুপস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

১৫২১ সাল। সিকামের সঙ্গে যুক্ত এবং আঙুলের মতো দেখতে অঙ্গটির সর্বপ্রথম বিবরণ দেন ইতালিয়ান অ্যানাটমিস্ট জাকোপো বেরিঙ্গারিও দা কারাপি। ৯ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৬ মিলিমিটার ব্যাসের এই অঙ্গটিকে মূলত অনেক আগে থেকেই নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলা হত। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, অ্যাপেনডিক্স কোনো নিষ্ক্রিয় অঙ্গ নয়, বরং মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অ্যাপেনডিক্সের ভূমিকা অপরিসীম।

যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, অ্যাপেনডিক্স একটি সেকেন্ডারি অথবা গৌণ প্রতিরক্ষা অঙ্গ। এতে লিম্ফয়েড টিস্যুর গড় ঘনত্ব বেশি। এই কোষগুলো প্রতিরক্ষা কোষ হিসেবে কাজ করে। লিম্ফয়েড কোষ তিন ধরনের। বি-সেল, টি-সেল ও এনকে-সেল।

বি-সেল ও টি-সেল ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং পরিপাকতন্ত্রের যথাযথ চলাচল ও বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে। এগুলো রোগজীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও অ্যাপেনডিক্স মানবদেহের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভাণ্ডার হিসেবেও কাজ করে। একে বলা হয় প্রোবায়োটিক।

প্রোবায়োটিকের প্রধান কাজ শরীরের সুস্থতার ভারসাম্য বজায় রাখা। যেমন, আপনার শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে শরীরকে ভারসাম্যহীন করে ফেলতে পারে। তখন এ প্রোবায়োটিক বা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের সুস্থতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। এছাড়াও প্রোবায়োটিকগুলো খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং দেহে ভিটামিন তৈরি করে।

২০১৭ সালে ডায়রিয়ায় মারা যায় সারাবিশ্বে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। এমনকি এখনো কিছু দেশে ডায়রিয়ার ভয়াবহতা লক্ষ করা যায়। অন্ত্র ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রোবায়োটিকগুলো অন্ত্র পরিষ্কার করে, হজমতন্ত্রকে পুনরায় কর্মক্ষম করে এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এত উপকারী হওয়ার সত্ত্বেও অ্যাপেনডিক্সকে নিষ্ক্রিয় মনে করে অনেকেই কেটে ফেলে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যা অ্যাপেনডিক্সবিহীন মানুষের শরীরে সংক্রমণের হার বেশি হয়। তাঁদের অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে সময় বেশি লাগে। সুইডেনের নাগরিকদের ওপর করা এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, ২০ বছর বয়সের আগে যাদের অ্যাপেনডিক্স অপসারণ করা হয়েছে, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ বেশি। এছাড়াও অ্যাপেনডিক্সের অপসারণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং কিছু অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই অ্যাপেনডিক্সকে নিষ্ক্রিয় বা অপ্রয়োজনীয় মনে করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

লেখক: ঠিকানাবিহীন

সূত্র: ইনোভেট আস ডট নেট