গোল্ডেন স্টেট কিলার

কয়েক দশক আগের অপরাধীর পুরোনো ফাইল নতুন করে খোলা হলো। ১৯৭০ থেকে ১৯৮৬—এই ১৬ বছরে ত্রাস সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী জোসেফ জেমস ডি অ্যাঙ্গেলোর ফাইল, যে কিনা গোল্ডেন স্টেট কিলার নামে বেশি পরিচিত। বছরের পর বছর ১২টি খুন, ৪৫টি ধর্ষণ আর ১২০টির বেশি বাড়িতে ডাকাতি করা এই সিরিয়াল কিলার ছিল পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে অবশেষে ৭২ বছর বয়সী কিলারকে ধরতে পারল মার্কিন পুলিশ। দুর্ধর্ষ এই সিরিয়াল কিলার শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ল কিনা ক্যালিফোর্নিয়ার এক দোকানে বাজার করতে গিয়ে! পুরো কৃতিত্ব মার্কিন পুলিশ বা গোয়েন্দাদের দেওয়ার কারণ নেই। কারণ, বছরের পর বছর তাঁরা ছুটেছেন জোসেফের পেছনে। জোসেফ নিজেও ছিলেন পুলিশের সাবেক কর্মচারী! নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো খুনিকে পুলিশ কিছুতেই ধরাশায়ী করতে পারছিল না। শেষে আশীর্বাদ হয়ে এল জিনোম সিকোয়েন্সিং! হ্যাঁ, সত্যি জোসেফকে ধরা হয়েছিল ডিএনএ স্যাম্পল পরীক্ষা করার মাধ্যমে। ১০টি দেশে একের পর এক অপরাধ সংঘটনের সময় ফরেনসিক নমুনায় প্রমাণিত হয়েছিল যে সব কটি অপরাধ করেছে একই ব্যক্তি। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মধ্যে শুধু ডিএনএ নমুনার মাধ্যমে কি ওই একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব? যদি পৃথিবীর সব মানুষের ডিএনএ সিকোয়েন্সের ডেটা থাকে, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু কোটি কোটি মানুষ নয়, বরং আমেরিকার একটি পাবলিক ডিএনএ ডেটাবেস থেকে সংগৃহীত ডিএনএ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ধরা হয়েছে জোসেফকে।

‘ডিনএনএ ডোয়ি প্রজেক্ট’ আমেরিকার একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, যাদের কাজ বিভিন্ন ক্রাইম সাইট বা দুর্ঘটনাস্থল থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো সিকোয়েন্স করে ফেলা। অন্যদিকে আমেরিকার অনেক বেসরকারি ল্যাবরেটরি আছে, যারা চাইলেই আপনার ডিএনএ সিকোয়েন্স করে দেবে অর্থের বিনিমিয়ে। চাইলে পুরো পরিবারের ডিএনএ সিকোয়েন্সও করা যায়, তৈরি করা যায় ফ্যামিলি ট্রি। আবার গেডম্যাচের মতো উন্মুক্ত ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনার ডিএনএ সিকোয়েন্স আপলোড করে বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে নানা ধরনের বিশ্লেষণ করা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, জোসেফের কোনো পূর্বপুরুষের ডিএনএ সিকোয়েন্সের তথ্য কোনোভাবে আপলোড করা হয়েছিল গেডম্যাচের মতো ওয়েবসাইটে। জোসেফের নমুনা তো আগেই ছিল। তার সঙ্গে তার দাদা, পরদাদার ডিএনএ সিকোয়েন্সে মিল খুঁজে পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত ছিল, সিরিয়াল কিলার জোসেফের পরিবারেরই কোনো সদস্য। তবে কে সেই সদস্য, তা সঠিকভাবে বের করার জন্য হয়তো নানাভাবে জোসেফের পরিবারের সব সদস্যের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছিল গোপনে। ঠিক যেমনভাবে বাজার করতে যাওয়ার সময় জোসেফের গাড়ি থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করে একেবারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল গোল্ডেন স্টেট সিরিয়াল কিলারের আসল পরিচয়। মার্কিন পুলিশ যদিও খোলাসা করে নির্দিষ্ট কোনো জিনিওলজিক্যাল (পারিবারিক জিনোম অ্যানালাইসিস–সংক্রান্ত) ওয়েবসাইটকে উল্লেখ করতে নারাজ। কমার্শিয়াল জিনিওলজিক্যাল কোম্পানিগুলোও এ ক্ষেত্রে চুপ। কারণ চোর ধরার এ এক অভিনব পদ্ধতি হলেও এতে বহু লোকের ব্যক্তিগত তথ্যের কোনো নিরাপত্তা থাকে না।