ডাইনোসর, উল্কাপিণ্ড ও একটি গর্ত

আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে ডাইনোসরের রাজত্ব ছিল। আকারে ডাইনোসর ছিল সবচেয়ে বড় প্রাণী। কিন্তু তা সত্ত্বেও হঠাৎ করেই বিলুপ্ত হয়। কেন, কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা নানাভাবে। দিয়েছেন নানারকম তত্ত্ব। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্ব- উল্কাপিণ্ডের আঘাতে বিলুপ্ত হয় ডাইনোসর। কিন্তু এই উল্কাপিণ্ড মহাকাশের কোথা থেকে এলো? এ ধোঁয়াশা ছিল। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক নতুন এক তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন।

হার্ভার্ডের গবেষকেরা মনে করছেন, হঠাৎ ডাইনোসর হারিয়ে যাওয়ার রহস্য লুকিয়ে আছে পৃথিবীতেই। সে জন্য যেতে হবে মেক্সিকান উপত্যকার চিক্সালাব খাঁদে। খাঁদটি প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত ও প্রায় ১৯ কিলোমিটার গভীর। এই খাঁদ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা কিছু ধুলা ও মাটি সংগ্রহ করেছে। ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে সেই ধুলা-মাটি। জানা গেছে, ধূলা-মাটিগুলো পৃথিবীর বাইরের থেকে এসেছে। এছাড়া ধূলা ও মাটির স্তরে পাওয়া গেছে ইরিডিয়াম। এর আগে ডাইনোসরের জীবাশ্মতেও অনেকবার ইরিডিয়াম পাওয়া গিয়েছিল।

মেক্সিকোর চিক্সালাব খাঁদ

কিন্তু এই বিশাল আকৃতির খাঁদ সৃষ্টি হলো কিভাবে? হার্ভার্ডের গবেষকেরা বলছেন, বিশাল আকৃতির গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। গ্রহাণুটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ঢোকার সময় বায়ুর কণার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে আগুন লেগে যায়। ফলে আগুনের কণা উল্কার মতো ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে। তখনই বিশাল ফাটল বা খাঁদ তৈরি হয়েছিল মেক্সিকান উপত্যকায়। পেট্রোলিয়াম খুঁজতে গিয়ে খাঁদটি খুঁজে পেয়েছিলেন ভূবিজ্ঞানী অ্যান্টিনিও কামারাগো ও গ্লেন পেনফিল্ড।

আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়। গ্রহাণুটি আসে কোথা থেকে? এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন হার্ভার্ডের দুই বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক বার্ড ও আমির সিরাজ। তাদের মতে, গ্রহাণুটি উর্ট মেঘ থেকে সৃষ্টি হওয়া কোন ধূমকেতুর অংশ। মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষের ফলে ধূমকেতু থেকে ছিটকে পড়া কিছু অংশ পৃথিবীতে ঢুকে পড়ে। ফলে পৃথিবীর বুকে অসংখ্য ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল অনেক প্রাণ। সেই সময় ধ্বংস হয়েছে ডাইনোসর।

পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৫০ কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর ৫০ কোটি বছর পৃথিবীপৃষ্ঠ ছিল উত্তপ্ত। সে সময় প্রায়ই গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ত। মেক্সিকান চিক্সালাব খাঁদটিও সেই সময় সৃষ্টি হয়েছে। এই খাঁদে ইরিডিয়াম পাওয়া তারই প্রমাণ। তবে এখন এই ধরনের গ্রহাণু পৃথিবিতে আছড়ে পড়ার সম্ভবনা ২৫০ থেকে ৭৩০ মিলিয়ন বছরে একবার।

অতীতে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল এমন তিনটি গ্রহাণু নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে একটি পড়েছিল ১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায়। এই গ্রহাণুর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেছে বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করে রাইবোজ নামের বায়ো-এসেন্সিয়াল সুগার পাওয়া গেছে। এছাড়াও পাওয়া গেছে আরাবিনোজ ও জাইলেজ নামের দুটি সুগার যৌগ। এছাড়া টাইপ সিআর২ ও টাইপ সিএম২ নামে দুই ধরনের কার্বন পাওয়া গেছে।

সুতারং ডাইনোসর কীভাবে ধ্বংস হলো সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মেক্সিকান উপত্যকার চিক্সালাব খাঁদ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। এমনটাই মনে করছেন এই গবেষকেরা। তাহলে ডাইনোসরদের সময়কার আবহাওয়া সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া কেমন পরিবর্তন হয়েছে তাও জানা যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হার্ভার্ড ডট এডু