তাপমাত্রা ও স্পর্শের রিসেপ্টর পেল চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল ২০২১

এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস এবং লেবাননের আরডেম পাটাপুটিয়ান। তাঁদের গবেষণা আমাদের তাপমাত্রা ও স্পর্শের অনুভূতি নিয়ে।

এই দুই বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন, তাপমাত্রা আর চাপের অনুভূতি বহন করার স্নায়ুতে স্নায়ুতাড়না কী করে সৃষ্টি হয়, কোন রিসেপ্টরগুলোর প্রয়োজন হয়। তাপমাত্রা, স্পর্শানুভূতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু তাঁদের এ আবিষ্কারের আগে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে পরিবেশ থেকে তাপ-চাপ বুঝতে পারে, তা ছিল এক রহস্য। তাদের এ আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে খুলে যায় নতুন দিগন্ত।

সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনিক রেনে দেকার্ত দেহের বিভিন্ন অংশের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগকারী সুতার কথা কল্পনা করেন। পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয়, অনুভূতি বহন করে নিয়ে যায় স্নায়ু। কিন্তু এই স্নায়ু ঠিক কীভাবে বুঝতে পারে বাইরের পরিবেশে তাপমাত্রা কী, বা স্পর্শের অনুভূতি?

মরিচ আমাদের চামড়ায় জ্বালাপোড়ার অনুভূতি দেয়। এর জন্য দায়ী ক্যাপসাইসিন। বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস মরিচে উপস্থিত ক্যাপসাইসিন ব্যবহার করে এমন এক সেন্সরের উপস্থিতি প্রমাণ করেন, যা তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল। এই সেন্সর বা রিসেপ্টরের নাম TRPV1। এটি আমাদের দেহে তাপমাত্রার অনুভূতি দেয়। দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা, দেহের ভেতরের অঙ্গগুলোতে ব্যথা কিংবা স্নায়বিক কোনো সমস্যায় ব্যথা হলেও এই রিসেপ্টর কাজ করে। প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে এর ভূমিকা।

TRPV1 রিসেপ্টর এবং Piezo2 রিসেপ্টর

অন্যদিকে বিজ্ঞানী আরডেম পাটাপুটিয়ান চাপ-সংবেদনশীল কোষ ব্যবহার করে এক নতুন ধরনের সেন্সর আবিষ্কার করেন। এটি আমাদের চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গে চাপ দেওয়া হলে তা বুঝতে পারে। এই সেন্সর বা রিসেপ্টরের নাম Piezo2৷ এটি কাজ করে স্পর্শানুভূতি তৈরিতে। এছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাস, রক্তচাপ, এমনকি হাড়ের পুনর্গঠনেও রয়েছে এর ভূমিকা।

বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস ও আরডেম পাটাপুটিয়ানের আবিষ্কৃত এই সেন্সরগুলো নিয়ে আরো গবেষণা হয়েছে, আবিষ্কার হয়েছে দেহের অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগুলোর কাজ। দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় এই সেন্সরগুলোর কাজ নিয়ে গবেষণা চলছে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা আবিষ্কারের।

আজ (৪ অক্টোবর, ২০২১) বাংলাদেশ সময়ে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তাঁদের এ পুরষ্কার পাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

সূত্র : নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ