পার্সোনালাইজড মেডিসিন

প্রতিকী ছবিপ্রথম আলো

রিতা-মিতা দুই বোন। কিছুদিন আগে বৃষ্টিতে ভিজে দুজন একই সঙ্গে জ্বর বাঁধাল। ডাক্তার দুজনকে একই ওষুধ খেতে বললেন। দেখা গেল, একই ওষুধ খেয়ে রিতা সুস্থ হলেও মিতার অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না। একই রোগের ক্ষেত্রে একই ওষুধ সবাইকে নিতে হয়, এ কথা সব সময় জেনে এসেছে রিতা কিন্তু আজ সে এবং তার বোন একই ওষুধ খেয়ে সুস্থ না হওয়ার ব্যাপারটি তাকে ভাবিয়ে তুলল। তখন তার মনে হলো নিশ্চয়ই ব্যক্তিবিশেষে ওষুধের প্রভাব আলাদা হয়। সে পার্থক্য কী, সেটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে পার্সোনালাইজড মেডিসিন সম্পর্কে সে অবগত হয়।

মজার ব্যাপার হলো, প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জিনের বিন্যাস (Gene sequence) রয়েছে। এই জিনের বিন্যাসের কোনো মিউটেশন হলে দেহে এক নতুন অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং সেটি কখনো কখনো রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। জিনের বিন্যাসের কোনো মিউটেশন হলে তা কোনো নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী কি না, তা জানার জন্য একধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যাকে বলে Genom wide association study, সংক্ষেপে GWAS|

মনে করুন, কিছু মানুষ এক্স নামক রোগে আক্রান্ত। প্রথমে তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় এবং তাদের সিকোয়েন্সের মিউটেশনগুলো কোথায় তা খুঁজে বের করে তুলনা করা হয়। যদি কোনো নির্দিষ্ট নিউক্লিওটাইডের মিউটেশন সব রোগী বা বেশির ভাগের মধ্যেই পাওয়া যায়, তবে ভবিষ্যতে রোগটি নির্ণয়ে তা ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে কোনো রোগীর জিনোম সিকোয়েন্স করে যদি একই ধরনের মিউটেশন পাওয়া যায়, তবে সেই রোগীটিও যে এক্স রোগে আক্রান্ত, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

২০০৫ সালে, পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো GWAS পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এআরএমডি বা এইজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশনতে। জিনের বৈচিত্র্যের কারণে যেসব রোগ হয়, তাদের শনাক্তকরণে GWAS খুবই কার্যকর পদ্ধতি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৩০০-এর বেশি রোগের ক্ষেত্রে এই GWAS স্টাডি করা হয়। যেমন ধরুন, একটি ডিএনএ মিউটেশন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়। যদি কোনো ব্যক্তিতে ওই মিউটেশন পাওয়া যায়, তবে ওই ব্যক্তি তার জীবনযাপন পদ্ধতি ব্যবহার করে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।

বর্তমানে পার্সোনালাইজড মেডিসিন ক্যানসার এবং অটিজমে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন Tamoxifen একটি বহুল ব্যবহৃত মেডিসিন, যা মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যানসারে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ৬৫% ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হলেও অন্য একটা জিনের মিউটেশনের কারণে এই মেডিসিন তার কার্যকারিতা হারায়।

সে ক্ষেত্রে পার্সোনালাইজড মেডিসিন একজন ব্যক্তির বয়স, উচ্চতা, তার জিনোম সিকোয়েন্স পর্যালোচনা করে তার জন্য উপযুক্ত ওষুধ প্রেসক্রাইব করে। সুতরাং, পার্সোনালাইজড মেডিসিনের মূল উদ্দেশ্য হলো উপযুক্ত ড্রাগ সঠিক সময়ে উপযুক্ত রোগীকে সঠিক ডোজে প্রদান করা। বর্তমানে পার্সোনালাইজড মেডিসিন শুধু কোনো রোগের মেডিসিন দেওয়া নয়, এটা প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্দিষ্টভাবে মেডিসিন প্রেসক্রাইব করার যথোপযুক্ত উপায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র: ল্যানসেট