ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে বসবাস

ব্যাকটেরিয়া মানুষের নিত্যসঙ্গী। শুধু সঙ্গীই নয়, তাদের সংখ্যা এত বেশি যে শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। মানবদেহ গঠিত ছোট্ট ছোট্ট কোষ দিয়ে, ঠিক বিল্ডিং গড়া হয় যেভাবে ইটের পর ইট গেঁথে। সেই কোষের চেয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা শুধু বেশিই নয়, প্রায় ১০ গুণ বেশি। এমনটাই ধারণা করা হতো এত দিন।

কিন্তু সম্প্রতি নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ধারণার চেয়ে আসলে অনেক অনেক কম। প্রায় ১০ গুণ কম। অর্থাত্ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা মানুষের শরীরের কোষের প্রায় সমান। ইসরায়েল ও কানাডার একদল গবেষক নতুন এ তথ্য জানান। তাঁরা হিসাব করে দেখান, মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন। মানুষের শরীরে কোষের সংখ্যা প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন। অর্থাত্ কোষের তুলনায় ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ১ দশমিক ৩ গুণ।

এর আগের গবেষণাটি ছিল গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকের। তখন মানুষের মল পরীক্ষা করে কলম্বিয়ার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের টি ডি লাকি হিসাব করে দেখান, মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়া আছে ১০০ ট্রিলিয়ন। আর মোট কোষের সংখ্যা ১০ ট্রিলিয়ন। অর্থাত্ কোষের চেয়ে ব্যাকটেরিয়া ১০ গুণ বেশি। এত দিন এই ধারণাই অনেকটা মিথের মতো ছড়িয়ে গিয়েছিল।

গবেষণাটিতে সাধারণ একজন মানুষের উচ্চতা ধরা হয়েছে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, আর ওজন ৭০ কেজির কাছাকাছি। আমাদের শরীরের বেশির ভাগ কোষ হলো লোহিত রক্তকণিকা, যার সংখ্যা প্রায় ২৯ ট্রিলিয়ন। বাকি ১ ট্রিলিয়ন অন্য সব কোষের সংখ্যা। যদিও ভরের হিসাবে পেশিই এগিয়ে, কোষের সংখ্যায় কিন্তু লোহিত রক্তকণিকাই এগিয়ে। অর্থাত্ কারও ভর অনেক বেশি হলেই কিন্তু শরীরে কোষের সংখ্যা খুব বেড়ে যাবে না। কারণ, স্থূলতার জন্য মূলত দায়ী পেশি এবং শরীরের চর্বি।

সে ক্ষেত্রে কোষের সংখ্যা কিন্তু খুব একটা বাড়ে না। একইভাবে ভর বেশি হলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও খুব একটা বাড়বে না। আবার মেয়েদের দেহে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ছেলেদের তুলনায় বেশি। কারণ, মেয়েদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকার ঘনত্ব ছেলেদের তুলনায় কম। এ জন্য মেয়েদের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

দেহের প্রায় ৩৯ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া (৪০ ট্রিলিয়নের মধ্যে) আমাদের কোলনে (মলাশয়ে) থাকে। এত বিপুল পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া মাত্র আধা কেজি ওজনের কোলনের মধ্যে রয়েছে। যেহেতু কোলনে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান, তাই আমাদের মলত্যাগের সময় প্রায় ১/৩ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো এত বিপুলসংখ্যক ব্যাকটেরিয়া নির্গমনের কারণে কি আমাদের শরীরে কোনো বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়? উত্তর হলো, না। কারণ শরীরে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রতিনিয়ত বংশবৃদ্ধিতে ব্যস্ত। অর্থাত্ ঠিক যত পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়, প্রায় সমান পরিমাণ ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই।

এই বিপুলসংখ্যক ব্যাকটেরিয়া, এগুলো কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়ই। প্রতিদিনের সঙ্গী এই ৪০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া তাই আমাদের বন্ধুই। এতগুলো বন্ধু আমরা সঙ্গে নিয়ে ঘুরছি, একবার ভাবুন তো!

লেখক: শিক্ষার্থী, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র: পিএলওএস বায়োলজি জার্নাল ও দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন