র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন ফিরদৌসী কাদরী
এশিয়ার নোবেলখ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো টিকা আবিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা পালন করায় তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। চলতি বছর তিনি ছাড়াও আরও তিন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এশিয়ার নোবেল খ্যাত এই পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ফিলিপাইন থেকে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, লাখো মানুষের উপকারে টিকার উন্নয়নে তাঁর নিবেদিত ভূমিকার জন্য ফিরদৌসী কাদরি এই পুরষ্কার পাচ্ছেন।
ফিরদৌসি কাদরী বর্তমানে বাংলাদেশ উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বিতে সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের সংক্রামক রোগ চিহ্নিতকরণ ও বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার রোধে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম এবং টিকাদান কর্মসূচিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে তিনি পেয়েছেন লরিয়েল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি সামগ্রিক গবেষণার জন্য এশিয়ান সায়েন্টিস্টের এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি।
র্যামন ম্যাগসেসে পুরষ্কার কমিটিকে ধন্যবাদ জানাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করছি। র্যামন ম্যাসসেসেকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশ, আমার জন্মভূমির প্রতি উৎসর্গ করলাম। সেই সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠান ইসিডিডিআর,বিকে উৎসর্গ করছি। এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে আমার কাজ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে।’
ফিরদৌসী কাদরীর জন্ম ৩১ মার্চ ১৯৫১ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যা বিভাগ থেকে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পিএইচডি করেন।
১৯৮৮ সালে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে আইসিডিডিআর'বিতে যোগ দেন তিনি। পরে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও মিউকোসাল ইমিউনোলজি ও ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় ২৫ বছর কলেরার টিকা উন্নয়নে কাজ করেছেন ফিরদৌসী কাদরী।
গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশকে কলেরার টিকা প্রদানে বাংলাদেশে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেন তিনি। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এদেশের উপযোগী টিকা প্রয়োগ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার ফলে দেশের লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। করোনা মহামারি প্রতিরোধেও তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। র্যামন ম্যাগসেসে পুরষ্কার প্রাপ্তী নিসন্দেহে তাঁর অর্জনের খাতাটা আরেকটু ভারি করবে।
ম্যাগসেসে পুরস্কার প্রাপ্তীরে জন্য বিজ্ঞানচিন্তার পক্ষ থেকে গণমানুষের এই গবেষকের প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা রইল।