১৮৫০ সাল। ফরাসি চিকিত্সক জোসেফ ক্যাসিমির দাভ্যান রক্তে লোহিত কণিকার চেয়েও বড় একধরনের কোষ দেখতে পেলেন। কোষগুলো ফ্যাকাশে ও আকারও অসমান। আরও পরীক্ষায় দেখা গেল কোষটির চলাফেরা ক্ষুদ্র অণুজীব অ্যামিবার মতো। মাইক্রোস্কপে পুকুর বা ডোবার পানিতে এককোষী অণুজীব অ্যামিবা দেখা যায়। অ্যামিবা যেদিকে যেতে চায়, তাদের শরীরের সেদিকেই সাময়িকভাবে ফুলে উঠতে দেখা যায়। এভাবে তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাফেরা করে। একে বলে অ্যামিবীয় চলন। একইভাবে ফ্যাকাশে কোষটি রক্তের মধ্যে চলাফেরা করতে দেখা গেল। ১৮৬৯ সালে জোসেফ বললেন, রক্তের মধ্যে বাইরে থেকে কিছু এলেই তা শোষণ করে বা গিলে ফেলে এ কোষগুলো।
লোহিত কণিকা থেকে আলাদা করতে এ কোষকে শ্বেতকণিকা (Whitecell) নামে ডাকা হলো। এ কোষে কোনো রক্তের লাল রঙের উত্স হিমোগ্লোবিন থাকে না। তাই এদের ফ্যাকাশে দেখায়। তবে প্রতিটি সাদা কোষে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। ১৮৫৫ সালে বিজ্ঞানীরা একে লিউকোসাইটস (Leukocytes) নামে ডাকতে লাগলেন। গ্রিক শব্দ leukos অর্থ বর্ণহীন বা সাদা এবং cytos অর্থ কোষ। কাজেই লিউকোসাইটস অর্থ সাদা কোষ বা শ্বেতকণিকা। শরীরে লোহিত কণিকার তুলনায় রক্তে শ্বেতকণিকা খুবই কম। ৬৫০টি লোহিত কণিকা বিপরীতে আছে মাত্র একটি শ্বেতরক্তকণিকা। সে কারণে রক্তে শ্বেতকণিকা খুঁজে পেতে বেশি সময় লেগেছিল।
শ্বেতরক্তকণিকা শরীরের প্রতিরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে কোনো জীবাণু ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে কোষটি। আমাদের ক্ষতস্থানে মাঝেমধ্যে সাদা পুজ জমতে দেখা যায়। এগুলো আসলে মৃত শ্বেতকণিকা, যা জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধ করে মারা গেছে। তবে অতিরিক্ত শ্বেতকণিকাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরীরে শ্বেতকণিকার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াকে বলে লিউকোমিয়া (Leukemia)। গ্রিক শব্দ leukos (সাদা) ও haima (রক্ত) যোগ করে তৈরি হয়েছে লিউকোমিয়া শব্দটি, যার অর্থ সাদা রক্ত। আবার শরীরে শ্বেতরক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া রোগকে বলে লিউকোপেনিয়া (Leukopenia)। গ্রিক শব্দ penia অর্থ কমে যাওয়া।
*লেখাটি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত