স্বপ্ন দেখি কেন

দিন শেষে সবচেয়ে প্রশান্তিদায়ক কাজ হলো ঘুম। তবে ঘুমের মাঝেও আমরা কাজ করি, বাস্তব কোনো কাজ নয় অবশ্য। স্বপ্নের ভেতর কাজ। স্বপ্নে কখনো আনন্দের বা কখনো ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতা লাভ করি।

স্বপ্ন নিয়ে একটা প্রশ্ন করি! নিজে নিজেকে কি কখনো দেখেছেন? বলতে পারেন এটা আবার কেমন প্রশ্ন? প্রতিদিনই তো আয়নায় নিজেকে দেখি। হ‍্যাঁ, সেটা ঠিক, কিন্তু আয়না বা আলোর প্রতিফলন হয় এমন বস্তু ছাড়া কখনো দেখেছেন? উত্তরটা, হ‍্যাঁ। আয়না ছাড়া আমরা নিজেদেরকে শুধু স্বপ্নেই দেখতে পাই! আবার স্বপ্নে কিন্তু আমাদের চেহারা খানিকটা বদলে যায়। তবে আমরা তা বুঝি না।

স্বপ্নে কখনো নিজেকে আয়নায় দেখেছেন? ভাবতে থাকুন।

আচ্ছা, আমরা স্বপ্ন কেন দেখি? এ প্রশ্নের উত্তর অনেক। তবে বেশি প্রচলিত থিওরি হলো, আমরা স্বপ্নের মাধ‍্যমে সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ তথ‍্যগুলো স্মৃতিতে স্থায়ী করি আর অপ্রয়োজনীয় তথ‍্য মুছে ফেলি। আসলে রাতে আমরা ঘুমালেও আমাদের মস্তিষ্কের অবচেতন অংশ বা সাবকনশাস পার্ট জেগে থাকে। অবচেতন অংশ সারাদিনের সব তথ‍্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করে। কিছু তথ‍্য স্থায়ী করে আবার কিছু মুছে ফেলে।

আমরা যা খেয়াল করি না তাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবচেতন অংশ মনে রাখে। যেমন স্বপ্ন অনেক অপরিচিত চেহারা দেখি। কিন্তু মস্তিষ্কের অবচেতন অংশ কোন নতুন চেহারা তৈরি করতে পারে না। অর্থাৎ রাস্তায় চলার পথে বা অন্য কোন সময় কোন না কোন ভাবে আমরা ওই চেহারাটি দেখেছি। হয়তো আমরা গুরুত্ব দিয়ে না দেখলেও মস্তিষ্কের অবচেতন অংশ সেটা ধরে রেখেছে। এমনকি রাস্তায় দেখা শত শত মানুষের চেহারাও আমাদের মস্তিষ্কের অবচেতন অংশ ধরে রাখে। এত এত তথ্য সব ধারণ করে রাখার মানেই হয় না। তাই মস্তিষ্ক তথ‍্য ডিলিট করে!

আমরা স্বপ্নে কোনো লেখা পড়তে পারি না। কারণ লেখা পড়ার কাজ আমাদের মস্তিষ্কের সচেতন বা কনশাস অংশের। ঘুমের সময় কনশাস অংশও ঘুমিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি স্বপ্ন দেখছি বা এসব সত‍্যি নয়। সুতরাং আমি যা ইচ্ছা করতে পারি! যদি হয় তবে আপনাকে অভিনন্দন! কারণ এমন স্বপ্ন পৃথিবীর মাত্র ২৩% লোক দেখেন। এমন স্বপ্নের নাম লুসিড ড্রিম।

আশ্চর্য হলেও সত্যি, জন্মান্ধরাও স্বপ্ন দেখতে পারে। তবে তার বেশিরভাগই গন্ধ বা শব্দ। স্বপ্নে কখনো সময় দ্রুত চলে। কখনো মনে হয়, মাসের পর মাস স্বপ্নে আটকে আছি। কিন্তু বাস্তবে তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডও হতে পারে! আবার রেম ( REM- Rapid Eye Movement ) নামে একটা ব্যাপার আছে। ঘুমের এই ধাপে আমাদের চোখের মণি দ্রুত কাপতে থাকে। আসলে এই সময় স্বপ্নে দ্রুত দৃশ্য পরিবর্তন হতে থাকে। এই ধাপে আমাদের বেশিরভাগ অঙ্গ শিথিল হয়ে থাকে।

আর যাই হোক বিনা পরিশ্রমে প্রতিদিন দারুন সব অভিজ্ঞতা অর্জন ও টাইম ট্রাভেল কিন্তু মন্দ নয়!

লেখক: শিক্ষার্থী, ঘাটাইল ক‍্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল, টাঙ্গাইল

সূত্র: নেচার ও হেলথলিাইন ডট কম