মানুষ কৌতূহলী। কৌতূহল থেকেই মনে প্রশ্ন জাগে। আর প্রশ্ন থেকেই জন্ম প্রাথমিক বিজ্ঞানের। প্রতিদিনের জীবনে জেনে অথবা না জেনে বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব ও মেকানিজম ব্যবহার করছি। এসব ব্যাপার এতই স্বাভাবিক যে এগুলো কেন হয়, কীভাবে হয়, তা নিয়ে মাথাই ঘামাই না। অথচ এগুলো জানা থাকলে অনেকখানিই এগিয়ে থাকবেন আপনি। তা ছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে হলেও জেনে রাখা ভালো। কেন ভালো?
বলুন তো গাড়ি বা প্লেনে কেন সিটবেল্ট পরে বসতে হয়। গাড়িতে আমরা সচরাচর সিটবেল্ট বাঁধতেই চাই না। কিন্তু আপনি যদি না জানেন কেন সিটবেল্ট বাঁধার রীতি চালু হয়েছে, এর উপকারিতা কী—তাহলে একটি তথ্য জানিয়ে রাখি, এই সিটবেল্ট রাখার ব্যাপারটা আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় হয়তো আপনার প্রাণটা বাঁচিয়ে দেবে।
তারপর ধরুন, বাস থেকে নামার একটি নিয়ম আছে। সেটি না জানলে যেকোনো সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, প্রাণ হারাতে পারেন আপনি। তাই বাঁচতে হলে জানতে হবে। আর সেই জানার কাজটি করতে পারেন আপনি বিজ্ঞানের রাজ্যে কী ও কেন বইটি পড়ে।
শুধুই কি বেঁচে থাকার জন্য যতটা জানার, ততটুকুই জানবেন। নাকি আপনার মন আরেকটু কৌতূহলী হবে, যে প্রশ্ন কেউ করে না, সে প্রশ্ন আপনি করতে শিখবেন? প্রশ্ন করলে তো ক্ষতি নেই। কিন্তু কী প্রশ্ন করবেন বা করতে হয়, তা যদি না জানেন, উত্তর পাবেন কী করে?
বাজ কি আকাশ থেকে পড়ে? চুম্বকের আকর্ষণে কাঁপে অগ্নিশিখা? জাহাজ কীভাবে সমুদ্রের গভীরতা মাপে? শব্দেরও কি আয়না হয়? এমন ৩৭টি প্রশ্নের জবাব পাবেন বিজ্ঞানের রাজ্যে কী ও কেন বইটির প্রথম অংশ থেকে।
দ্বিতীয় অংশটিও কিন্তু কম যায় না। তাপবিজ্ঞানের আঠারোটি মজার প্রশ্ন ও উত্তর রয়েছে এই অংশে। সকাল আর বিকেলের রোদ এত ঠান্ডা হয় কেন? বরফ কি গরম হতে পারে? পানি কেন আগুন নেভায়? এসব প্রশ্ন কি সচরাচর আপনার মনে আসে? না এলেও ক্ষতি নেই। মজা নিয়ে পড়ুন বইটি, অজানা অনেক প্রশ্নের মজাদার উত্তর পেয়ে যাবেন।
বইটির তৃতীয় অংশে গণিতের এক ডজন প্রশ্নোত্তর। গণিতপ্রেমীদের মনের খোরাক অনেকটাই মেটাবে। চতুর্থ পর্বে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক এক ডজন প্রশ্নোত্তর রয়েছে। জ্বর কেন হয়? অ্যান্টিবায়োটিকে নির্দিষ্ট ডোজের প্রয়োজন কেন হয়? এসব প্রশ্নের জবাব পাবেন এই অংশে।
মহাদেশ কি নড়াচড়া করে? তলাবিহীন কুয়া কি সম্ভব? নারকেলগাছ কেন সমুদ্রের সন্তান? এমন ৩০টি প্রশ্নের ব্যাখ্যা আছে বইটির পঞ্চম অংশে—পৃথিবী ও মহাবিশ্ব। ষষ্ঠ অংশের বিষয় মানুষ ও জীবজগৎ। উটের পিঠে কুঁজ কেন? কুমির কেন কাঁদে? বিচিত্র রং প্রজাপতির কী কাজে লাগে? সাপ খোলস বদলায় কীভাবে? এসব মজার গোটা বিশেক প্রশ্নের মজার ব্যাখ্যা রয়েছে এই অংশে। শেষ অংশে সাধারণ জ্ঞানের পাঁচটি প্রশ্ন।
সব মিলিয়ে আপনি যদি বিজ্ঞানমনস্ক হন, দৈনন্দিন জীবনের চারপাশের ঘটনার ভেতর খুঁজে ফেরেন বিজ্ঞানের কার্যকারণ, তাহলে এই বই আপনার পড়া উচিত। উন্নত কাগজ, স্পষ্ট ছাপা, মজবুত বাঁধাই আর আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের এই বইটি প্রকাশ করেছে ইউপিএল। বিভিন্ন ঘটনার কারণ ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা বিশ্লষণ নিয়ে এই লেখকের আরও নয়টি বই বেরিয়েছে ইউপিএল থেকে। পাওয়া যাচ্ছে দেশের সব বুকস্টলে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
*লেখাটি ২০২২ সালে বিজ্ঞানচিন্তা ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত