বিল গেটস বিশ্বের অন্যতম সফল মানুষ। তিনি মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। একই সঙ্গে সমাজসেবকও। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি বই পড়েন। সব ধরনের বই পড়তেই ভালোবাসেন তিনি। তাঁর পছন্দের বইয়ের তালিকা দেখলেই তা বোঝা যায়। এখানে বিল গেটসের পছন্দের ১০টি বই সম্পর্কে জানানো হলো।
এ বইটি সমাজের সহিংসতা নিয়ে লেখা। বিল গেটসের পছন্দের বই এটি। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ এখন আগের চেয়ে কম সহিংস। আরও দয়ালু হয়েছে।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কীভাবে সহিংস থেকে মানবিক হয়ে উঠেছে, সে কথা বইয়ে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন স্টিভেন পিঙ্কার। বইটি তাঁর মন ছুঁয়ে গেছে। বইটিকে তিনি এত অনুপ্রেরণামূলক মনে করেন যে সুযোগ পেলে কলেজের শিক্ষার্থীদের বইটি উপহার দিতেন বলে জানিয়েছেন।
পৃথিবীর ১৩.৮ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস নিয়ে লেখা এই বই। বইয়ে লেখক একসঙ্গে অনেক কিছু তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নানা ঘটনাকে খুব সুন্দরভাবে এক সুতোয় গেঁথেছেন তিনি। কঠিন বিষয়গুলোও লিখেছেন মজার ছলে।
ইতিহাস বা ননফিকশনের পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাসও পড়েন বিল গেটস। তায়ারি জোনসের লেখা অ্যান আমেরিকান ম্যারেজ তাঁর অন্যতম প্রিয় উপন্যাস। বইটিতে দুই দম্পতির জীবনের কঠিন বাস্তবতার গল্প উঠে এসেছে। গেটস বলেন, ‘জোনস এত ভালো লেখেন যে আপনি উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কষ্ট অনুভব করতে পারবেন। তাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলো আমাকে ছুঁয়ে গেছে।’
বইটি ২০১৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে। এডগার অ্যাওয়ার্ড এবং অ্যান্ড্রু কার্নেগি মেডেলও পেয়েছে। বইটির খুব প্রশংসা করেছেন বিল গেটস। তিনি বলেছেন, ‘ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে আমি যতগুলো বই পড়েছি বা মুভি দেখেছি, তার বেশির ভাগই মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা। কিন্তু এই বই ভিয়েতনামের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পটা দেখার সুযোগ করে দেয়।’
নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বই দিজ ট্রুথস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস নিয়ে লেখা সবচেয়ে সুন্দর বইগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। বিল গেটস বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস সবচেয়ে সৎ ও সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে এই বইয়ে। এতে এমন অনেক নতুন তথ্য আছে, যা আমি আগে জানতাম না। স্কুলে যা শেখানো হয়, তার চেয়ে আমেরিকার ইতিহাস অনেক বেশি জটিল। এই সত্যগুলো সবারই জানা দরকার।’
লেখক নিজের জীবনের গল্প লিখেছেন এই বইয়ে। এটি একটি স্মৃতিকথা। আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার বই। সমালোচকরাও এর প্রশংসা করেছেন। বিল গেটস বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, মানুষ নিজেই সবচেয়ে ভালো শিখতে পারে। কিন্তু তারা ওয়েস্টভারের বই পড়ে বুঝলাম, তাঁর ক্ষমতা অনেক বেশি। তিনি যেভাবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পড়াশোনা করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। বইটি সব ধরনের পাঠকেরই ভালো লাগবে।’
তিনি আগে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ছিলেন। বিল গেটস বলেছেন, এই বই তাঁকে ধ্যানের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। আগে তিনি ধ্যানে বিশ্বাস করতেন না। এখন প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনবার ধ্যান করেন। ২৫ বছর বয়সে এই বই পড়ে হাসতেন বিল গেটস। কিন্তু এখন নিজেই তা পালন করেন। ধ্যান হলো মনের ব্যায়াম। শরীরের ব্যায়াম যেমন জরুরি, মনের ব্যায়ামও তেমনি দরকার।
এই বইয়েও লেখক নিজের জীবনের গল্প লিখেছেন। তিনি ‘দ্য ডেইলি শো’-এর হোস্ট। এই বইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের সময়ের কথা লিখেছেন। বিল গেটস এই বইয়ের ভক্ত। ট্রেভর নোয়ার মা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান। বাবা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ সুইস। তখন মিশ্র বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল। তাই তিনি জন্মেই অপরাধী হয়েছিলেন। তাঁর বেড়ে ওঠার গল্প দুঃখজনক। কিন্তু তিনি সেই অভিজ্ঞতা থেকে কৌতুকের উপাদান খুঁজে নিয়েছেন। তাঁর গল্প পড়ে কান্না আসে, আবার হাসিও পায়।
এটি একটি সিরিজের তৃতীয় বই। পুরো সিরিজই বিল গেটসের পছন্দের। এর আগে এ সিরিজের প্রথম বই দ্য রোজি প্রজেক্ট তিনি ৫০ জন বন্ধুকে উপহারও পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘এই বই আপনাকে হাসাবে, আবার মানুষের সম্পর্ক নিয়ে ভাবতেও সাহায্য করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের লেখা আত্মজীবনি আ ফুল লাইফ। ৯০ বছর বয়সে এই স্মৃতিকথা লিখেছেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার তালিকায় থাকা এ বইটিও বিল গেটসের পছন্দের। তিনি বলেছেন, ‘কার্টার আগেও অনেক বই লিখেছেন। কিন্তু এই বইয়ের জন্য তিনি কিছু দুর্দান্ত গল্প রেখেছিলেন। তাঁর জীবনের সংক্ষিপ্ত কিন্তু চমৎকার বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ে।’ কার্টারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার গল্প অবিশ্বাস্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। সেসময় তাঁদের ঘরে পানি, বিদ্যুৎ বা গরম রাখার ব্যবস্থা ছিল না। এই পরিবেশ তাঁকে ভালো ও মন্দ—দুভাবেই প্রভাবিত করেছে। কীভাবে তিনি একটা ছোট্ট গ্রাম থেকে হোয়াইট হাউসে আসতে পেরেছিলেন, তা উঠে এসেছে এই বইয়ে।