কঠিন পদার্থের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান

ড. এ কে এম আজহারুল ইসলামের কঠিন পদার্থের কথা বইটি সাধারণ পাঠকদের খোরাক মেটাতে অনেকটাই সক্ষম। কঠিন অবস্থায় পদার্থবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে খুব সহজ ভাষায়।

কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি—দুইয়ে মিলে গত শতাব্দীর শুরুতেই খুলে দেয় পদার্থবিজ্ঞানের নতুন একটা শাখা। সলিড স্টেড ফিজিকস বা কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান। পরমাণুর গঠন, ধর্ম ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে কঠিন পদার্থকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে লক্ষ্যই ছিল শুরুতে। সেই লক্ষ্য আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দেয়, যার প্রভাবে পাল্টে যায় মানবসভ্যতার গতি। পরিবাহী বস্তুর ভেতর দিয়ে অনেকটা নির্বিঘ্নে চলে বিদ্যুৎ। তাই বলে কি পরিবাহী পদার্থই সেরা? আবার অপরিবাহী তো বিদ্যুৎগতিবিদ্যায় ভূমিকা রাখে না খুব বেশি। কিন্তু পরিবাহী আর অপরিবাহীর মাঝামাঝি কোনো পদার্থ যদি পাওয়া যায় তাহলে? বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজেই। আর কাজটা করেছিল সলিড স্টেট ফিজিকস। অর্ধপরিবাহী আবিষ্কৃত হওয়ার পরেই আসলে আজকের যে ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। এই যুগে ইলেকট্রনিক পণ্য ছাড়া একটি দিনও চলবে না আপনার। টেলিভিশন, মুঠোফোন, কম্পিউটারসহ যাবতীয় ডিভাইস ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিরই অবদান।

অর্ধপরিবাহীর বদৌলতে প্রথমেই আবিষ্কৃত হয় রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিস্টরের মতো খুদে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, এরপর সেগুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয় ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি। এই আইসির আধুনিক রূপ হলো ইলেকট্রনিক চিপস, যেগুলো এ যুগের ইলেকট্রনিকে এত ছোট ছোট ডিভাইস তৈরি করতে সহায়তা করেছে।

'কঠিন পদার্থের কথা' বইয়ের প্রচ্ছদ
বই: কঠিন পদার্থের কথা; লেখক: ড. এ কে এম আজহারুল ইসলাম; প্রকাশক: বাংলা একাডেমি; পৃষ্ঠা: ১২০; দাম: ৭০ টাকা

আধুনিক সভ্যতায় এত বড় অবদান রাখছে পদার্থবিজ্ঞানের যে শাখা, তা নিয়ে সহজবোধ্য কোনো বই থাকবে না! বই আছে, তবে সেগুলোর প্রায় সবই সাধারণ পাঠকের নাগালের বাইরে। কারণ, দুর্বোধ্য সমীকরণে ভরা। এর অবশ্য কারণও আছে। এগুলো লেখা হয় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। সুতরাং, কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরেই থেকে যায়।

ড. এ কে এম আজহারুল ইসলামের কঠিন পদার্থের কথা বইটি সাধারণ পাঠকদের খোরাক মেটাতে অনেকটাই সক্ষম। কঠিন অবস্থায় পদার্থবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে খুব সহজ ভাষায়। বইটি লেখা হয়েছে ৯টি অধ্যায়ে। প্রথম অধ্যায়টির নাম ‘নবযুগ’। এতে সলিড স্টেট ফিজিকসের প্রাথমিক ইতিহাস যেমন উঠে এসেছে, তেমনি ধাপে ধাপে এর ক্রমবিকাশ বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে পরমাণু আর পদার্থের ধর্ম, আচরণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায় পদার্থের গঠন, কঠিন পদার্থের গুণাবলি দিয়ে সাজানো। পঞ্চম অধ্যায়ে কেলাসের গঠন-পরিচিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্ধপরিবাহীর বিকাশ আর অর্ধপরিবাহীকেন্দ্রিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়ে। এরপর একে ট্রানজিস্টর, মাইক্রো-ইলেকট্রনিক এবং ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখা কোন পথে যাবে, তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা হয়েছে। মোট কথা, পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী, অপরিবাহী, বিদ্যুৎপ্রবাহ, ব্যাটারি, ট্রানজিস্টর, ডায়োড, আয়ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে এটা কিন্তু নিছক জনপ্রিয় ধাঁচের বই নয়, রীতিমতো টেক্সট বইয়ের সজ্জাক্রমে লেখা হয়েছে। আসলে এটা পাঠ্যবইয়ের সহায়ক। যাঁরা সলিড স্টেট ফিজিকস কিংবা ইলেকট্রনিকের বেসিক জানতে চান, তাঁদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বই এটি।

বইটি ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় মুদ্রণ হয় ১৯৯৪ সালে। গত আড়াই দশকে সলিড স্টেট ফিজিকসে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেসব আপডেট এই বইয়ে পাবেন না। তা সত্ত্বেও বেসিক অনেক কিছুই আছে, যা তরুণ পাঠকের প্রাথমিক ধারণা গড়তে সহায়ক হবে। বইটি পাওয়া যাবে বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ ছাড়া সারা দেশে যেসব বুকশপ বাংলা একাডেমির বই বিক্রি করে, তাদের কাছে অর্ডার দিয়ে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।