অসহ্য সুন্দরের রহস্য, সমাধান বিজ্ঞানে

ফুসিয়া হাউস; লেখক: তানজিনা হোসেন; প্রকাশক: বাতিঘর; প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী; পৃষ্ঠা: ১০৪; মুদ্রিত মূল্য: ২৬০ টাকা

গুলশানের এক আর্ট গ্যালারি—ফুসিয়া হাউস। আগে ছিল এক শিল্পপতির বাড়ি। এর কিছু ছবি সবার জন্য উন্মুক্ত। কিছু ছবি আবার দেখা নিষেধ। লেখক শোনাচ্ছেন সেই আর্ট গ্যালারি ঘুরে দেখার কথা।

ঘুরতে গেছেন। গ্যালারির শেষ মাথার করিডরের মুখে একটি রশি বাঁধা। ঠিক যেন কাটাতারের বেড়া। ওপাশে যেতে মানা। প্রবেশ নিষেধ। কিউরেটর হাসনাত রুমিকে ধরে বসলেন লেখক। কেন? কেন ওপাশে যাওয়া নিষেধ?

কিউরেটর গল্প শোনান: সোহা চৌধুরী উদভ্রান্তের মতো ছুটে বেরিয়ে এসেছেন বাড়ি থেকে। ডাক্তার শ্যামল খবর পেয়ে তাঁকে দেখতে ছুটে গেলেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ভর্তি করানো হলো হাসপাতালে। সেখানেই সোহা চৌধুরী স্বীকারোক্তির জন্য আয়োজন করলেন সংবাদ সম্মেলন। বললেন, নিজের স্বামী শিল্পপতি জেরল্ড চৌধুরীকে খুন করেছেন তিনি। সাহায্য করেছেন ডাক্তার শ্যামল।

পুলিশের জন্য কেস তো সহজ। স্বীকারোক্তি আছে। চার্জশিট দাখিল করে দিলেই হয়। জট পাকিয়েছে একটা ছবি। যে ছবি জেনে যায় মানুষের লুকোনো অতীত। আর আছে সেই ফুল—ফুসিয়া। অপূর্ব নীল পাহাড়ি অর্কিড। কারো বাড়িতে এ ফুল নিয়ে যাওয়া মানে জীবন দিয়ে হলেও তাকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি। মনভোলানো তার ঘ্রাণ। একজন শিল্পসংগ্রাহক শিল্পপতির মৃত্যুর সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?

সব মিলে জটিল এক সমস্যা। রহস্য, রোমাঞ্চ, ফ্যান্টাসি এবং বিজ্ঞান হাত ধরাধরি করে উঠে এসেছে গল্পের পাতায় পাতায়। হেঁয়ালির ঘনঘটা জমজমাট। ব্যাখ্যা মিলবে বিজ্ঞানে।

ফুসিয়া হাউস বইয়ের প্রচ্ছদ

লেখক তানজিনা হোসেন পেশায় চিকিৎসক। কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন বিজ্ঞান কল্পগল্প। নীরিক্ষা ধরনের কাজ করেছেন বারবার। দেখিয়েছেন, শুধু সময় পরিভ্রমণ, মহাকাশ বা পদার্থবিজ্ঞানের বিষয়গুলোতেই কল্পবিজ্ঞান সীমাবদ্ধ নয়। জিনতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা, পরিবেশ কিংবা মানুষের মনস্তত্ত্বও হতে পারে কল্পবিজ্ঞানের বিষয়। তাঁর লেখায় মূলত প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত নানা বিষয় এবং জীবনের বিচিত্র সব রহস্য উদ্‌ঘাটিত হতে দেখা যায় বিজ্ঞানের হাত ধরে। ভবিষ্যতের কল্পনায় ভেসে যাওয়ার চেয়ে সাম্প্রতিক পৃথিবীতে জীববিজ্ঞানের প্রয়োগ দেখা যায় বেশি। ফুসিয়া হাউস-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এতে রয়েছে জৈবনিক রহস্যের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের দারুণ মিশেল।

প্রকাশিত হয়েছে বাতিঘর থেকে। প্রকাশক ও লেখকের ভাষ্যে এটি ‘সায়েন্স ফিকশন’; ট্যাগ রয়েছে বইয়ের মলাটেই। তবে রচনা বিচারে এটি কল্পবিজ্ঞানের চেয়ে রহসোপন্যাস-ই বেশি। রহস্য সমাধানে অবশ্যই বিজ্ঞানের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

রহস্য, রোমাঞ্চ বা বিজ্ঞাননির্ভর উপন্যাসে আগ্রহীরা পড়ে আনন্দ পাবেন। পাওয়া যাবে বইমেলায় বাতিঘরের স্টলে, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বাতিঘরে এবং বিভিন্ন বইয়ের দোকানে—অফলাইন ও অনলাইনে। 

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা