আবিষ্কারের নেশায় মেতে

হল্যান্ডের এক আধপাগলা মুদি ও ঝাড়ুদার। নিজের পেশার বাইরেও তিনি কাচ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। কাচ, ঘষে-কেটে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন, নানা জিনিস বানান। একদিন তাঁর দোকানে এল আরেক আধপাগলা নোংরা বুড়ো। মুখ দিয়ে ভক ভক করে গন্ধ বেরোচ্ছে বুড়োর। মুদি দোকানি লোকটা কথায় কথায় জেনে নিলেন বুড়ো কস্মিনকালেও দাঁত মাজেননি। তারপর বুড়োকে ডাকলেন দোকানের ভেতর। তাঁর দাঁতের গোড়া থেকে এক চিমটি ময়লা তুলে নিয়ে বিদায় করলেন বুড়োকে। তারপর সেই ময়লা ফেলা হলো মুদির তৈরি এক যন্ত্রের নিচে। বেরিয়ে এল ময়লার ভেতরে থাকা জীবাণুর ছবি। জীবাণুতত্ত্বে, চিকিত্সাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দিল সেই ঘটনা। সেই পাগলাটে মুদি দোকানি, ঝাড়ুদার, কাচের কারবারিটি পরে বিখ্যাত বিজ্ঞানীতে পরিণত হন। তিনি অ্যান্টনি লিওয়েনহুক—অণুবীক্ষণযন্ত্রের আবিষ্কারক। লিওয়েনহুকের অবিস্মরণীয় জীবনের গল্প বলা হয়েছে এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে। রসিয়ে রসিয়ে লেখক বলেছেন আর্কিমিডিসের নানা আবিষ্কারের গল্প। বাথটাব থেকে তিনি যেভাবে ইউরেকা ইউরেকা বলে ছুটে গিয়েছিলেন রাজদরবারে, সোনায় খাদ আছে, সেটা কীভাবে ধরলেন তার ব্যাখ্যা করেছিলেন, হানাদার রোমান বাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে তিনি কী কী ফর্মুলা আবিষ্কার করেছিলেন, শেষমেশ মূর্খ রোমান সৈনিকের খোলা তরবারির আঘাতে তাঁর প্রাণ গেল—সেসব কাহিনির অনুপুঙ্খ বর্ণনা লেখক সরল ভাষায় বলে গেছেন গল্পের ছলে।

আবিষ্কারের নেশায় বইয়ে উঠে এসেছে গ্যালিলিওর বর্ণাঢ্য জীবনের গল্প। তাঁর আবিষ্কার, তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বৃহস্পতির উপগ্রহ আবিষ্কার, পড়ন্ত বস্তুর সূত্র, এমনকি তাঁর প্রতি চার্চের নির্মম অত্যাচারের কাহিনি লেখক তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। ইতিহাসের সেই নিষ্ঠুর সত্যের সহজিয়া বিবরণ পাঠকের চোখকে অশ্রুসিক্ত করতে বাধ্য।

আবদুল্লাহ আল-মুতী এই বইয়ে শুনিয়েছেন ব্রিটেনের এক পিতৃহারা ছেলের গল্প। খুব ভালো ছাত্র সেই ছেলেটি ছিল না। কিন্তু তাঁর ছিল আবিষ্কারের নেশা। কিন্তু ছেলেটি ভীষণ একলষেঁড়ে, লোকসমাজে মিশতে তাঁর বড়ই দ্বিধা। সেই বিষণ্ন ছেলেটিই একদিন একা হাতে পাল্টে দেন বিজ্ঞানের ইতিহাস। বিজ্ঞানকে নিয়ে আসেন সত্যিকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের আওতায়। গণিতের শরীরে বাঁধেন বিজ্ঞানের আত্মাকে।

আবিষ্কারের নেশায় ।। আবদুল্লাহ আল-মুতী।। প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী।। প্রথম প্রকাশ: ১৯৭১ ।।পৃষ্ঠা: ৮৮ ।। দাম: ১০০ টাকা

লেখক এই বইয়ে বলেছেন বিদ্যুতের গল্পও। কীভাবে অ্যাম্বরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিদ্যুতের দেখা পেলেন প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিস, কীভাবে আকাশের বিদ্যুেক ঘুড়ির সাহায্যে মাটিতে নামালেন ফ্র্যাঙ্কলিন—ইতিহাসের সেই আলোকময় বৈদ্যুতিক কাহিনি লেখক তুলে এনেছেন ঝরঝরে গদ্যে। বলেছেন ব্যাঙ নাচানো প্রফেসর ও বিজ্ঞানী গ্যালভনির গল্পও।

এ রকম ১৭টি কাহিনি বলা হয়েছে এই বইয়ে। এর লেখক আবদুল্লাহ আল-মুতী বাংলাদেশের বিজ্ঞান সাহিত্যের পুরোধা পুরুষ। কিশোর-তরুণদের জন্য তিনি লিখে গেছেন একের পর এক কালজয়ী বিজ্ঞান বই। ঝরঝরে-সাবলীল ভাষায় লেখা সেই বইগুলোর মধ্যে সেরাদের তালিকায় থাকবে আবিষ্কারের নেশায় নামে অসাধারণ এই বইটি। অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইটি পাওয়া যাচ্ছে দেশের সব অভিজাত বুকস্টলে।