কঠিন বিজ্ঞান সহজ ব্যাখ্যা

বিজ্ঞান কী? প্রশ্নটা দার্শনিক? এই দার্শনিক প্রশ্নের ব্যাখ্যা না জানলে বিজ্ঞানের রস আস্বাদন করা মুশকিল। এই প্রশ্নের ভেতরেই লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস। কী ও কেন—এর উত্তর খুঁজতেই এককালে দর্শনের জন্ম হয়েছিল। তখন যুক্তি দিয়ে উত্তর দিলেই চলত। কিন্তু অকাট্য যুক্তিকেও কখনো কখনো বুড়ো আঙুল দেখায় পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ। তাই ‘কী ও কেন’র উত্তর এখন শুধু যুক্তির মারপ্যাঁচে ব্যাখ্যা করলেই চলে না। পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ ছাড়া এখন এ ব্যাখ্যার মূল্য নেই বিজ্ঞানজগতে। বিজ্ঞান কী, এটা যদি জানতে পারেন, অনুভব করতে পারেন, তাহলে আপনি এখন প্রস্তুত বিজ্ঞানের পদ্ধতি কী, সেটা জানার ও বোঝার জন্য।

বিজ্ঞান জানতে হলে বুঝতে হলে বিজ্ঞান শিখতে হয় ধাপে ধাপে। যদি চিরায়ত বিজ্ঞান না শিখে একলাফে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা স্ট্রিং থিওরি বুঝতে চান, তাহলে আপনি কিছুই শিখতে পারবেন না। তাই পদার্থবিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্বগুলো বোঝার আকাঙ্ক্ষা যদি আপনার থাকে, তাহলে শুরু করুন বলবিদ্যা দিয়ে, যার জন্ম হয়েছিল গ্যালিলিওর হাতে। তারও প্রায় হাজার বছর আগে আর্কিমিডিসও বলবিদ্যার বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছিলেন। তবে সত্যিকারের বলবিদ্যার চর্চা নিউটনের হাত ধরে। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান ভাষাহীন সাদা গ্রন্থস্বরূপ। বলবিদ্যার মুখে সেই গাণিতিক ভাষা ফুটিয়েছিলেন নিউটন। বলবিদ্যার দুটি অংশ সাধারণ গতিবিদ্যা আর মহাকর্ষ তত্ত্ব। বলবিদ্যার সেই গাণিতিক ছন্দকে সাধারণ পাঠকদের জন্য সাধারণ গদ্যে অনূদিত করেছেন মুহাম্মদ ইব্রাহীম, এই বইয়ে।

গতিবিদ্যারও তো চমক-ঠমক কম নয়—তাপ, চাপ, তরঙ্গ, ভরবেগ, শক্তি, কাজ, বল, সংরক্ষণ সূত্র—কত্ত শাখা! আর প্রতিটা শাখা নিয়েই সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখকের একটি করে নিবন্ধ। তারপর বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রূপ-রস পরিবর্তিত হয়েছে বিজ্ঞানের। চিরায়ত গতিবিদ্যা শেষ করে লেখক ঢুকে পড়েছেন আলো, চুম্বক ও বিদ্যুৎ বলবিদ্যায়। তারপর নদীর মতো বাঁক বদল করে বইটি মিলেছে আপেক্ষিকতায়, যার পোশাকি নাম থিওরি অব রিলেটিভিটি। যেসব বিজ্ঞানপ্রিয় পাঠক আপেক্ষিকতার হাতেখড়ি নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন, তাঁরা এই বই পড়তে পারেন, আপেক্ষিতার প্রাথমিক ভিতটা অন্তত গড়তে পারবেন। তবে লেখক শুধু বিশেষ আপেক্ষিকতার প্রাথমিক পাঠ দিয়েই দায় সারেননি। সাধারণ আপেক্ষিকতা, যা নাকি আমূল বদলে দিয়েছিল তিন শ বছর ধরে মহাবিশ্ব কামড়ে ধরা মহাকর্ষতত্ত্ব, সে বিষয়েও মোটামুটি একটা ধারণা পাঠক পাবেন এই বই থেকে। লেখক ভরশক্তির সমীকরণ নিয়েও আলোচনা করেছেন অল্পবিস্তর। তারপর ঢুকে পড়েছেন কোয়ান্টামের অনিশ্চিত জগতেও। কোয়ান্টাম মেকানিকসের আদ্যোপান্ত হয়তো পাবেন না। কিন্তু কোয়ান্টাম কী জিনিস, সেটা উপলব্ধি করার ক্ষমতা অন্তত তৈরি হবে।

মুহাম্মদ ইব্রাহীম এ দেশের বিজ্ঞান সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল। তাঁর সম্পাদিত বিজ্ঞান সাময়িকী একসময় এ দেশের বিজ্ঞানপিপাসু তরুণদের চাহিদা মিটিয়েছে। তাঁর হাতে গোনা কয়েকটি বিজ্ঞান বইয়ের মধ্যে চিরায়ত ও বৈপ্লবিক বিজ্ঞান অন্যতম। বইটি প্রকাশ করেছে সুবর্ণ। পাওয়া যাবে দেশের সব অভিজাত বুক শপে।