তারা চেনার ফিল্ড গাইড

প্রাচীন যুগেই আকাশ ছিল মহারহস্যের নাম। সেই রহস্যই মানুষের মনে জন্ম দেয় হাজারো পৌরাণিক গল্পের। সেসব গল্পের সঙ্গে যেমন মিশে আছে অলৌকিক সব কাহিনি। আবার সেসব গল্পের ভেতরেই লুকিয়ে ছিল জ্যোতির্বিদ্যার বীজ। আকাশে কত তারা, এত তারা চেনাও সম্ভব নয়। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে মানুষ! সেই প্রাচীন মানুষ যুগেই তারা চিনতে শিখেছিল। নাম দিয়েছিল তারাদের। সেই মিসরীয় সভ্যতায়, ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়, আধুনিক গ্রিক সভ্যতা থেকে চৈনিক, ভারতীয় ও আরবীয় সভ্যতায়ও মানুষ তারাদের প্রকৃতি বুঝতে শিখেছিল। বছরের বিভিন্ন সময় তারাদের অবস্থান দেখে তারা ঋতু বদলের আভাস পেত, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুমানের চেষ্টা করত। তারাদের অবস্থান দেখেই গড়ে উঠেছিল কৃষিনির্ভর প্রাচীন সভ্যতা।

সময় বদলেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে গেছে মানুষ। শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। মানুষ এখন চাঁদ-মঙ্গল জয় করে দূর আকাশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য প্রথম যে বিষয়টি দরকার ছিল, সেটি হলো তারাদের শ্রেণিবিন্যাস, আকাশের পূর্ণাঙ্গ একটি ম্যাপ তৈরি। তা বিজ্ঞানীরা করেছেনও। কিন্তু সেসব তো দূরদেশের বিজ্ঞানীদের কাজ। সেসব বই ইংরেজিতে লেখা। কিন্তু বাংলা ভাষায় এমন বই কি আছে?

এ দেশে এমন একটা বই লেখা সহজ কাজ ছিল না। এখানে কোনো মানমন্দির নেই। নেই ভালো কোনো টেলিস্কোপও। সেই ষাটের দশকে অবস্থাটা ছিল আরও করুণ। তা ছাড়া বিদেশি কোনো বইও হুবহু অনুবাদ করে ছেড়ে দিলেও চলে না। আকাশের মানচিত্র এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সঙ্গে মিলবে না। দ্রাঘিমা-অক্ষাংশ মেনে আকাশের নক্ষত্ররাজির অবস্থান পরিবর্তন হয়। তাই ঢাকার আকাশে তারাদের মানচিত্র এক রকম, লন্ডনের আকাশে আরেক রকম। এ যুগের মতো সে যুগে কম্পিউটারের ব্যবহারও ছিল না। ছিল না অনলাইন-ওয়েবসাইটের সুবিধাও। এখন চাইলেও লন্ডনে বসে এই আগস্টে ঢাকার আকাশে তারাদের অবস্থান কেমন হবে জানা যায় অনলাইনের মাধ্যমেই। কিন্তু কম্পিউটার-অনলাইনহীন সে যুগে অনেকটা ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতোই ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অবস্থা। তবু কেউ কেউ ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। মোহাম্মদ আবদুল জব্বার তাঁদের মধ্যে অগ্রপথিক।

তাঁর হাত ধরেই এ দেশের জ্যোতির্বিদ্যাচর্চার শুরু। তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে মহাকাশকে ভালোবাসতে হয়, আকাশের তারাদের পৌরাণিক কাহিনির ছাদ থেকে নামিয়ে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হয়। এ দেশের ছেলেমেয়েরা যেন তারা চিনতে শেখে, আকাশকে ভালোবাসে, সে জন্য মোহাম্মদ আবদুল জব্বার সেই ষাটের দশকেই লিখেছেন তারা পরিচিতি নামের বইটি।

বইটিতে ৮৭টি তারকামণ্ডলী ও অনেক তারার উজ্জ্বলতাসহ নানা তথ্যের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেটা মাসিক ভিত্তিতে। বারো মাসের আকাশের তারকাচিত্র এবং প্রতি মাসে সক্রিয় তারকামণ্ডলীর খবর জানিয়েছেন লেখক। সেসব তারার উজ্জ্বলতা আর অবস্থানও নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে। যাঁরা জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা করতে চান, চিনতে চান আকাশের তারকামণ্ডলী, তাঁদের জন্য তারা-পরিচিতি বইটি অপরিহার্য। ম্যাগাজিন সাইজের বইটি দেশের সব অভিজাত বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে।