একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযানের কাহিনি

একনজরে: আন্তারেস, দীপেন ভট্টাচার্য,  প্রকাশক: বাতিঘর, পৃষ্ঠা: ১৪৪, মূল্য: ৩২০ টাকা, প্রচ্ছদ: শেখ মাহমুদ ইসলাম মিজু, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আন্তারেস একটি নভোযান। বসবাসযোগ্য স্থানের খোঁজে চষে বেড়াচ্ছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। একের পর এক নক্ষত্র পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আন্তারেস। কিন্তু বাসযোগ্য গ্রহের দেখা মিলছে না। অনেক চেষ্টার পরে তারা কিছুটা সফলতার মুখ দেখতে পায়। খুঁজে পায় একটি বাসযোগ্য গ্রহ। গ্রহের নাম জিমলা। আন্তারেসের অধিবাসীরা চাইলে এই গ্রহে বসবাস করতে পারে। তবে জিমলার সবকিছু তাদের নিজস্ব গ্রহের মতো নয়। তারপরেও তারা চেষ্টা করলে মানিয়ে নিতে পারবে।

আন্তারেসের যাত্রীরা জিমলায় স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক তখন তারা জিমলায় বিচিত্র ধরনের চিহ্ন দেখতে পায়। ভিনগ্রহীর চিহ্ন। তারা বুঝতে পারে ওটা আউরেউরগথদের চিহ্ন। আউরেউরগথরা মহাবিশ্বের সর্দার। কোনো ভিনগ্রহী পেলেই ধরে নিয়ে দাস বানিয়ে রাখে। আউরেউরগথদের ভয়ে নিজেদের নভোযান নিয়ে পালিয়ে যায় আন্তারেসের যাত্রীরা। তাদের পিছু নেয় আউরেউরগথরা।

এসব কথা আমরা শুনি একজন বাচ্চার মুখে। নাম তার শোগি। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনির গল্পকার। তার মুখেই জানা যায় পুরো গল্প।

আন্তারেসের প্রচ্ছদ
ছবি: লেখক

আন্তারেসের মোট যাত্রী ২৫ জন। সঙ্গে আছে দুটি সাহায্যকারী রোবট। শোগির বয়সী আরও ১০ জন বাচ্চা আছে এ নভোযানে। বাচ্চারা যত বড় হয়, ততই খুলতে থাকে আন্তারেসের রহস্য। একদিন শোগি দেখতে পায় তার মায়ের ঘাড়ে মাথা নেই। ভয় পেয়ে যায় সে। দৌড়ে যায় বাবার কাছে। শোগি ধীরে ধীরে জানতে পারে, সে এত বছর যাকে মা বলে জেনেছে, সে আসলে তার মা নয়। তবে রোবটও নয়। মানুষ ও রোবটের মিশেলে তৈরি রোমা। তাদের অনুভূতি আছে। তারা সুখী হয়, আবার দুঃখ পেলে কান্নাও করে।

শোগির মা তো রোমা, কিন্তু বাবা—সে কি মানুষ? নভোযানের বাকি ২৪ জন যাত্রীই-বা কী? পৃথিবী থেকে কেন তারা এই অন্তিম যাত্রার সঙ্গী হলো? সম্পূর্ণ বই জুড়ে এরকম নানা প্রশ্ন, নানা রহস্য। সে রহস্যের জট খুলবে ধীরে ধীরে, একেকটি অধ্যায়ে। সব রহস্যের সমাধান জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।

লেখক, দীপেন ভট্টাচার্য। পেশায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরকম একজন যখন কল্পগল্প লেখেন, সেটা ভালো হওয়ার-ই কথা। হয়েছেও তাই। এর আগে লেখকের ‘নক্ষত্রের ঝড়’ কল্পগল্পটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তবে এই বইটি নিয়ে কিছু কথা আছে।

একজন সাধারণ শিক্ষার্থী, অর্থাৎ বিজ্ঞানের ছাত্র নন, এমন কারো জন্য বইটি সম্পূর্ণ বোঝা হয়তো একটু কঠিন হতে পারে। গল্পের সম্পূর্ণ মর্ম বুঝতে হলে আলোকবর্ষ, ত্বরণ, কৃষ্ণগহ্বর, আয়নিত কণা, পরাকণা, তেজস্ক্রিয়তা—এরকম বেশকিছু ব্যাপারে ভালো ধারণা থাকতে হবে। যাঁরা জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞানের বই পড়েছেন, তাঁরা অবশ্য সহজেই বুঝতে পারবেন। এই শব্দগুলো তাঁদের সবার পরিচিত হওয়ার কথা।

এ জন্য অবশ্য গল্প বুঝতে অসুবিধা হবে না। হয়তো টানা পড়ার সময় একটু আটকে যাবেন, এটুকুই। তবে গল্পের কাহিনিটি দারুণ। প্রথমার্ধে একটু ধীরে এগোলেও এরপর থেকে টান টান উত্তেজনা অনুভব করবেন। প্রথমার্ধে পড়া অনেক ধারণাই পাল্টে যাবে আপনার।

বইয়ের কিছু ভালো দিক আলাদা করে বলা প্রয়োজন। এত খুঁটিয়ে বর্ণনার কারণে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা গল্পটা দারুণ উপভোগ করতে পারবেন। কারণ, গল্পে ব্যবহার করা সংখ্যাগুলো শুধু সংখ্যাই নয়। সঠিকভাবে হিসেব কষেই ওই সংখ্যাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের শুরুতেই সব চরিত্রের নাম পেয়ে যাবেন। তাই এটা দারুণ কাজে দেবে। একটু পরপর কে কোন চরিত্র, তা গুলিয়ে যাবে না। পাশাপাশি, বইয়ের শুরুতে আন্তারেস নভোযানের একটি নকশা দেওয়া হয়েছে। এতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে বইটি পড়ার সময় আন্তারেসকে দেখতে পাবেন কল্পনার চোখে।

আন্তারেসের সত্যিকারের রহস্য উদঘাটন করতে হলে এখনি শোগির সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ুন এক আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযানে। ঘুড়ে আসুন পৃথিবী থেকে শত শত আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রে। আর আবিষ্কার করুণ শোগির গল্পের নানা রহস্যের সমাধান।

আন্তারেস প্রকাশ করেছে বাতিঘর। বইয়ের বাঁধাই, কাগজ—সব ঠিকঠাক। আকারের কারণে এক হাতে নিয়ে পড়তেও ভালো লাগে। চাইলে ভ্রমণের সময় পুরে ফেলতে পারবেন পকেটেই! একটু সময় নিয়ে বসলে এক বসায়ই ১৪৪ পৃষ্ঠার বইটি পড়ে ফেলতে পারবেন। আগ্রহীরা কিনতে পারবেন অনলাইন ও অফলাইন বুকশপগুলোতে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা