এআই অথবা আধুনিক ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের গল্প

ড. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করেছিলেন। একটি মৃতদেহে তিনি নতুন করে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন, ভেবেছিলেন ইতিহাসের বাঁক বদল করবেন। সফল হয়েছিলেন, প্রাণ ফিরে পেয়েছিল মৃত লাশ। কিন্তু সেই লাশ আর মানুষ হয়ে ওঠেনি। অদ্ভুত কদাকার দানবে পরিণত হয়েছিল। কদাকার হয়েছিল চেহারাতেই, কিন্তু মন ও মননে সে প্রথমে শিশুই ছিল। ভালোবাসার কাঙাল এক শিশু। কিন্তু ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সেই দানবকে পিতৃস্নেহে ভালোবাসতে পারেননি। তার কুৎসিত চেহারাই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এর ফল হয় মারাত্মক। দানবটি তখন মনে ও মননেও দানবে পরিণত হয়, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মানবজাতির ওপর প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। সেই হত্যাযজ্ঞের শেষটা হয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের করুণ পরিণতির মাধ্যমে।

ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের এ কাহিনি পৃথিবীর অন্যতম সেরা কল্পবিজ্ঞান। এটি ১৮১৮ সালে লিখেছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি পি. বি. শেলির স্ত্রী মেরি শেলি। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যে একটি উল্টো পিঠও থাকতে পারে, সেই দিকটিই তুলে ধরেছিলেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস নামের সেই উপন্যাসে। বর্তমানের এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকেরা কি ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হতে চলেছেন?

গত শতাব্দীর ৬০-৭০ দশকে এর পটভূমি তৈরি হয়। রোবট আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে শুরু হয় কাজ। তখন থেকেই বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতি তৈরি হয়—আমরা এবার সত্যি সত্যি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি?

আর এ নিয়ে লেখা হয় হাজার হাজার কল্পবিজ্ঞান। সেসব কাহিনিতে রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানবসভ্যতার সংকটের গল্প যেমন বলা হয়েছে, তেমনি বাতলে দেওয়া হয়েছে তা থেকে উত্তরণের পথ। স্রেফ একটা রোবট কখনো মানুষের জন্য হুমকি নয়। কিন্তু রোবট পরিচালনার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আবশ্যক হয়ে ওঠে এক সময়। আর এই ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ্যাক আসিমভ রোবটের জন্য তিনটি নীতিমালা তৈরি করেছিলেন। পরে যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরাও এই নীতিমালা মেনে চলার পক্ষেই মত দিয়েছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বুদ্ধিমান হলে রোবটরা কি সেই নীতিমালা মেনে চলতে বাধ্য হবে?

এ প্রশ্নের জবাব নেই। তবে এআই নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁদের বেশিরভাগই আশাবাদী।

এক নজরে

মহাবৃত্ত: জুন-আগস্ট সংখ্যা

সম্পাদক ও প্রকাশক: আসিফ

পৃষ্ঠা: ১২০

মূল্য: ২৫০ টাকা

কিন্তু ভবিষ্যতের কথা আমরা এখনই জোর দিয়ে বলতে পারছি না। তবে সতর্ক থাকা জরুরি। আজকাল শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল—সব জায়গাতেই পৌঁছে গিয়েছে স্মার্টফোন আর এআই। নিজের অজান্তেই আপনি এখন এআই ব্যবহার করে ফেলছেন। ফেসবুক, গুগল কিংবা অনলাইন শপগুলোর এআই সর্বক্ষণ আমাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। তারপর আমাদের প্রত্যেকের পছন্দ অনুযায়ী পণ্যের বিজ্ঞাপন সামনে এনে প্রলুব্ধ করে। এসব দেখেশুনে আমাদের ভীত হওয়াই স্বাভাবিক!

কিন্তু শুধু ভীতি তো এআইয়ের দৌরাত্ম্য থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে না। তাই এর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। আর সেটা হতে পারে একটি বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের মাধ্যমে। সম্প্রতি বিজ্ঞানবক্তা আসিফের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে মহাবৃত্ত নামে ত্রৈমাসিক বিজ্ঞান সাময়িকী। এই সংখ্যার প্রচ্ছদকাহিনী হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। মহাবৃত্ত ও আসিফের যাঁরা পুরোনো পাঠক, তাঁরা জানেন তাঁর লেখা ও সম্পাদিত লেখায় বিজ্ঞানের দার্শনিক বক্তব্যগুলো কতটা প্রাধান্য পায়। মহাবৃত্তের চলতি সংখ্যাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সংখ্যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ছাপা হয়েছে ছয়টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়গান যেমন করা হয়েছে এসব লেখায়, তেমনি দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তাও।

এসব লেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধুনিক বিকাশের পাশাপাশি, দূর অতীতে প্রাচীন সভ্যতার অলিতে-গলিতেও ইতিহাসের আলো ফেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ছাপ খুঁজে দেখা হয়েছে। সবমিলিয়ে এক নিশ্বাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সারসংক্ষেপ জেনে ফেলার একটি ভালো উপায় হতে পারে মহাবৃত্তের এই সংখ্যা। ফিচার ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিখ্যাত দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কির একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে এবং এআই নিয়ে নিজের মতামত লিখেছেন সাময়িকীটির সম্পাদক আসিফ। এ ছাড়াও কার্ল সাগান, ফ্রান্সিস ক্রিক ও ম্যারি অ্যানিংকে নিয়ে রয়েছে তিনটি বিশেষ নিবন্ধ। অনুবাদ করা হয়েছে দুটি বিদেশি প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধ দুটির মূল লেখক জেকব ব্রনোওস্কি ও ইউভাল নোয়া হারারি।

বিজ্ঞানের দর্শন ও আমাদের বোধ নিয়ে তিনটি বিশেষ লেখা ছাপা হয়েছে, যার একটির লেখক কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবীব। গণিতের আবেল পুরস্কার ও ২০২৩ সালের বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার নিয়ে চারটি পূর্ণাঙ্গ ফিচার ছাপা হয়েছে। এছাড়া ‘ডিসকাশন প্রজেক্ট’ নিয়ে ছাপা হয়েছে দুটি আলাদা লেখা।

মহাবৃত্তের চলতি সংখ্যার অন্যতম চমক হলো শিক্ষক ও সমাজচিন্তক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি শুভেচ্ছা-সম্পাদকীয়। সাদা ঝকঝকে কাগজ, উন্নতমানের ছাপা ও বাঁধাই—সব মিলিয়ে মহাবৃত্তের এই সংখ্যাটি আপনার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করবে।

পত্রিকাটি পাওয়া যাবে দেশের বিভিন্ন বইয়ের দোকান এবং পত্রিকার স্টলে। এর অনলাইন পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে পুঁথি প্রকাশনী। ঘরে বসে মহাবৃত্ত অর্ডার করতে পারেন পুঁথির ওয়েবসাইটে, ফেসবুক পেজে কিংবা মুঠোফোনে কল করে।