আমরা কেন বাবা-মায়ের মতো

শিরোনামের কোটি টাকার এ প্রশ্ন আমাদের সবার মাথায়ই এসেছে ছোটবেলা। এই প্রশ্নের অবশ্য নানা সংস্করণ আছে। বিশেষ করে কৈশোরে সদ্য পা রেখে আমাদের মাথায় আসে, এলেম আমি কোথা থেকে? কিংবা আমরা কেন এরকম, ওরকম নই? এক পর্যায়ে কৌতূহল চাপতে না পেরে প্রশ্নটা আমরা করেই বসেছি। সেই প্রশ্নের উত্তরে বাবা-মা সাধারণত ‘বাঙালি কৌশল’-এ বলেন, ‘রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি।’ এই উত্তরেরও নানা সংস্করণ আছে বৈকি!

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এ প্রশ্নের উত্তর আমরা এখন অনেকটাই জানি। এককালে বিজ্ঞান এত আধুনিক ছিল না। ছিল না মাইক্রোস্কোপের মতো যন্ত্র। এদিকে মানবশিশুর বেড়ে উঠতে পেরিয়ে যায় কয়েক যুগ। তাদের নিয়ে তো আর এমনতরো গবেষণা করা সম্ভব নয়। কী করা যায় তবে? এই প্রশ্নের উত্তর বের করেন অস্ট্রিয়ার এক যাজক। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। মানুষটি হাইস্কুলের শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। রীতিমতো তিন তিনবার ফেল করে দমে যান। বৈজ্ঞানিক কৌতূহল অবশ্য তাঁর মস্তিষ্কের গভীরে লুকিয়ে ছিল। সেটাই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে হামাগুড়ি দিয়ে। আর তিন তিনবার ফেল মানুষটি পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বৈপ্লবিক আইডিয়ার সূচনা করেন। শুধু তা-ই নয়, কোনোরকম যন্ত্রপাতি ছাড়া হাতে-কলমে গবেষণাও করেন তিনি। এ জন্য বেছে নেন লম্বা ও খাটো মটরশুটিগাছ। এই গাছগুলোর বিভিন্ন ধরন মিলিয়ে-মিশিয়ে প্রজনন ঘটান তিনি। তিন-চার প্রজন্মের বংশধর দেখে দেখে, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসেন, একেক জীব যে একেক ধরনের হয়, তাতে রহস্য রয়েছে বটে, তবে এর ব্যাখ্যাও করা যায় সহজে। যদিও তিনি এর কারিকুরি সবটা বোঝেননি, তবু বের করে ফেলেন, কেমন করে বংশধারায় পরের প্রজন্মে বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবাহিত হয়। বিজ্ঞানে ‘কম-বেশি’ বা ‘হয়ে যায়’ বললেই হয় না। মেন্ডেল খাঁটি বিজ্ঞানীর মতো কত শতাংশ সন্তানের বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে, তারও রূপরেখা দিয়ে যান।

বংশগতিবিদ্যার জনক গ্রেগর জোহান মেডেল

কিন্তু তাঁর কথায় কে গুরুত্ব দেবে? সে কালের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ কার্ল উইলহেম ফন নেগেলিকে লিখে পাঠালেন সবিস্তারে। আশা করলেন, তিনি এটা দেখে এর গুরুত্ব বুঝবেন। ভদ্রলোক তা বুঝলেন না। বিজ্ঞানের অন্যতম বৈপ্লবিক আইডিয়া এর ফলে প্রায় ৪০ বছর পড়ে রইল আস্তাকুঁড়ে। এত কাল পরে নিজে নিজে পুরো বিষয়টা আবার বের করলেন হুগো দ্য ভ্রিস। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, অস্ট্রিয়ান এক ধর্মযাজক এসব কথা লিখে গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। কোরেঞ্জ ও জাইজিনেক নামে দুই বিজ্ঞানীকে নিয়ে তাঁদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এই পুরো বিষয়টির কৃতিত্ব তিনি দিলেন মেন্ডেলকে। এর মাধ্যমে বিশ্ব বৈপ্লবিক এই আইডিয়ার খবর পেল।

আরও পড়ুন

একনজরে

জিন ও ডিএনএ

আইজ্যাক আসিমভ

ভাষান্তর: আবুল বাসার

প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী

পৃষ্ঠা: ১৩৬

দাম: ২৮০ টাকা

আরও পড়ুন

এভাবে যাত্রা করল বিজ্ঞানের বর্তমানে অন্যতম সফল, আধুনিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শাখা—বংশগতিবিদ্যা। কালের আবর্তে মানুষ জানল নিজেদের ভেতরের খবর। এই খবর পেতে বারে বারে মানুষ দারস্থ হয়েছে উদ্ভিদের। দারস্থ হয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর। এভাবে আমরা জানতে পারলাম, এলেম মোরা কোথা থেকে। জানতে পারলাম, আমরা কেন বাবা-মায়ের মতো। জানতে পারলাম, এই সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ডিএনএতে।

ডিএনএকে বলা হয় প্রাণের নীলনকশা। কী লেখা থাকে এই নীলনকশায়? কেমন করে আমরা জানলাম সে কথা? এই গল্পটা যদি কেউ শুনতে চান, সহজভাবে; কিংবা পরিচিত কোনো কিশোর-কিশোরীর এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে চান সহজ ভাষায়, বৈজ্ঞানিকভাবে—বাঙালি কৌশলে নয়—তবে আপনাকে দিতে পারি গোপন খবর। এই বিষয়গুলো কিশোরোপযোগী করে লিখে গেছেন এমন একজন, যাঁকে হয়তো চেনেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে।

বিজ্ঞান কল্পকাহিনির গ্র্যান্ডমাস্টার আইজ্যাক আসিমভ

আসলেই তিনি গ্র্যান্ডমাস্টার—শুধু বিজ্ঞান কল্পকাহিনিরই নয়, গল্প বলারও। নাম তাঁর আইজ্যাক আসিমভ। সহজ ভাষায় তিনি লিখে গেছেন এই প্রশ্নের জবাব। তাঁর জিন ও ডিএনএ বইটিতে আছে আমাদের প্রাণের রহস্য, বংশগতিবিদ্যা, আমরা কেন বাবা-মায়ের মতো, কেমন করে জন্ম হয় প্রাণের—এরকম গুরুত্বপূর্ণ ও কৌতূহলী বহু প্রশ্নের উত্তর। আর সেটা যদি পড়া যায় নিজের ভাষায়? সে কাজটাই করেছেন আবুল বাসার। বইটিকে তিনি একদম সহজ বাংলায় হাজির করেছেন। কিশোরোপযোগী এই বই পড়ে আনন্দ পাবেন সবাই। তবে পড়তে পড়তে মাঝেমধ্যে বানান ভুল, কোথাও ‘র’ বাদ পড়ে যাওয়া কিংবা কোথাও কোথাও ছবির ভেতরে গুটি গুটি লেখা বা অস্পষ্ট ছাপা নিয়ে আফসোস হতেই পারে। এটুকু যদি ছাড় দেওয়া যায়, পকেট সাইজের এই বইটি বেশ লাগবে। আরও ভালো লাগবে প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে তাকালে। সেখানে ‘তথ্যনির্দেশ’ অংশে রয়েছে বৈজ্ঞানিক শব্দগুচ্ছের ব্যাখ্যা।

সুন্দর প্রচ্ছদ নজর কাড়বে বহুদূর থেকে। এই প্রচ্ছদ করেছেন আব্দুল্লাহ আল মাকসুদ। ভালো লাগবে বইটি হাতে নিয়েও। ছাপা, বাঁধাই সত্যিই দারুণ হয়েছে। বইপ্রেমীদের মন জোগাতে পারবে, এটুকু বলা যায়। বইটি প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী। পাওয়া যাবে বইমেলায়, এবং অনলাইন-অফলাইনের বিভিন্ন বুকশপে।