সুন্দরবনের মনোহরি উদ্ভিদ চিনতে চাইলে

সুন্দরবন নিয়ে এ বই যদিও নিখাদ বিজ্ঞানের বই, তবু এ ম্যানগ্রোভ বন নিয়ে লেখকের দর্শন বইটির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে। তার পরিচয় পূর্বকথার প্রথম পরিচ্ছেদেই পাওয়া যায়। সেখানে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের সুন্দরবনের সাত বৎসর নামে উপন্যাসের একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে।

সেই উপন্যাসের একটি চরিত্র—এক বৃদ্ধ, যিনি কিনা সুন্দরবনের কাছিমের খোল ও মুক্তা সংগ্রহ করেন, কিন্তু বিক্রি করেন না। কেন তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার এমন সুযোগ নিচ্ছেন না, এমনকি তাঁর সংগ্রহে যা কিছু আছে, সেটা কাউকে দেখানোর আগ্রহ পর্যন্ত নেই কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ বলেন, ‘না, কাউকে দেখাই না। অনেক টাকার মাল। টাকা হলে মনে অহংকার আসবে, বিলাসের ইচ্ছা আসবে। এমন সুন্দর জায়গা থেকে হবে চির-নির্বাসন।’

চাকরির সুবাদে লেখকের বদলি একবার সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জায়গায় হয়েছিল। প্রথম দিকে তিনি সেই জনবিরল জায়গায় গিয়ে মন খারাপ করলেও সেটা ছিল, লেখকের ভাষায়, ‘শাপে বর’। বিভূতিভূষণের সেই বৃদ্ধের মতো তিনিও সুন্দরবনের প্রেমে পড়ে যান। সেই প্রেম একেবারে অকৃত্রিম। কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। ভালোবাসার জন্যই ভালোবেসে যাওয়া।

লেখকের প্রকৃতিপ্রেমী মনের সঙ্গে যেহেতু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার চমৎকার মেলবন্ধন ঘটেছে, তাই তিনি চেয়েছিলেন স্বনামধন্য স্কটিশ প্রকৃতিবিদ ডেভিড প্রেইনের (১৮৫৭-১৯৪৪) করা তালিকা ধরে ধরে ৩৩৪টি উদ্ভিদ প্রজাতির প্রতিটির সুলুক সন্ধান করবেন। সেগুলো নিয়ে লিখে রাখবেন নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ বর্ণনা। সেই ইচ্ছা তাঁর শতভাগ পূরণ না হলেও ইতিমধ্যে তিনি সুন্দরবন নিয়ে বেশ কিছু নিবন্ধ রচনা করেছেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তা প্রকাশিত ও নন্দিত হয়েছে। তবে দুই মলাটে সব তথ্য ও অভিজ্ঞতার সন্নিবেশ তিনি প্রথমবারের মতো করতে পেরেছেন বর্তমান বইটিতে। সেটি করতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও গবেষণাকর্ম বিশ্লেষণ করে লেখক দেখতে পেয়েছেন, ডেভিড প্রেইনের শতবর্ষ পুরোনো তালিকা এখনকার সুন্দরবনের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবজগত পাল্টায়। সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তালিকায় এরকম ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মেলে। তবে তার সবগুলোই সুন্দরবনের একেবারে নিজস্ব উদ্ভিদ নয়। এগুলোর মধ্যে যে ৫০টি প্রজাতির উদ্ভিদ সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও খুব একটা দেখা যায় না, সেগুলোর কাঠামোবদ্ধ বর্ণনা, রেখাচিত্র এবং কোনো কোনোটির রঙিন ফটোগ্রাফ এ বইতে সন্নিবেশিত হয়েছে।

ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ছাড়াও যেসব সহবাসী উদ্ভিদ সুন্দরবনে পাওয়া যায়, সেগুলোর আলোচনাও বাদ পড়েনি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আরও রয়েছে সুন্দরবনের গাছপালার ব্যবহার, কোনগুলোকে সুন্দরবনের প্রকৃত উদ্ভিদ বলা হয়

বইটি তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায় ‘বনের স্বর্গ সুন্দরবন’। এ সুন্দরবনের প্রাথমিক পরিচিতি, নামকরণ, উৎপত্তি, জীববৈচিত্র্যের সামগ্রিক পরিচয়, সেখানে উদ্ভিদ কোথা থেকে এল এবং কীভাবে তা অনুসন্ধান করা যায়, সুন্দরবন কীভাবে প্রকৃতির প্রহরী হিসেবে ভূমিকা রাখে এবং সেটি কীভাবে এখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি—এসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায় ‘সুন্দরবনের উদ্ভিদ’ শুরু হয়েছে ম্যানগ্রোভ বন সম্পর্কে বৈশ্বিক আলোচনা দিয়ে। তারপর ক্রমে তা নির্দিষ্টতর রূপ নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ম্যানগ্রোভ বন বুঝতে গিয়ে। তারপর এসেছে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের কথা। সেই সূত্র ধরে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের একটা উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও বাস্তুতান্ত্রিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সুন্দরবনের উদ্ভিদ নিয়ে ইতিপূর্বে যেসব নিবন্ধ বা বই পড়েছি, তার কোনোটিতেই ম্যানগ্রোভ বন সম্পর্কে এরকম বিস্তারিত এবং হায়ারার্কিক্যাল গোছানো আলোচনা পাইনি। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদগুলো কী করে এত লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকে, তারও সহজবোধ্য, তবে অতি সরলীকৃত নয়—এমন ব্যাখ্যাও আছে এ অধ্যায়ে। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ছাড়াও যেসব সহবাসী উদ্ভিদ সুন্দরবনে পাওয়া যায়, সেগুলোর আলোচনাও বাদ পড়েনি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আরও রয়েছে সুন্দরবনের গাছপালার ব্যবহার, কোনগুলোকে সুন্দরবনের প্রকৃত উদ্ভিদ বলা হয় এবং কেন, এখানকার বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি কোনগুলো এবং কোন প্রজাতি ঠিক কতটা বিপন্ন; সে সব বিপন্ন গাছপালা কীভাবে রক্ষা করা যায়, তার প্রজাতিভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সমাধান এবং তা কতখানি ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে; কেনই বা এসব প্রজাতি রক্ষা করা প্রয়োজন—তার বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা মিলবে এ অধ্যায়ে। তৃতীয় অধ্যায়ের নাম, ‘সুন্দরবনের উদ্ভিদ পরিচিতি’। এর বিষয়বস্তু হলো, বিভিন্ন উদ্ভিদ, যেগুলো সুন্দরবন ছাড়া অন্য কোথাও খুব একটা পাওয়া যায় না বা পাওয়া গেলেও বেশ বিরল, সেসব প্রজাতির সচিত্র বিবরণ।

এ অধ্যায়ের প্রথম অংশে রয়েছে ২৬টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের পরিচিতি। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে সহবাসী ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, অর্থাৎ যেগুলো প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত, এরকম ২৪টি প্রজাতির পরিচিতি। এই ৫০টি প্রজাতির প্রতিটির ক্ষেত্রে লেখক বৈজ্ঞানিক নাম, গোত্র, ইংরেজি নাম, প্রচলিত আঞ্চলিক বাংলা নাম, প্রজাতিটির উৎপত্তি কীভাবে এবং কোথায় কোথায় পাওয়া যায়, সচিত্র উদ্ভিদতাত্ত্বিক বর্ণনা, কীভাবে চিনতে পারা যায়, আবাসস্থল, বংশবৃদ্ধির পদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা কতখানি সংকটাপন্ন—সেসব উল্লেখ করেছেন।

বর্ণনাগুলো যথাসম্ভব বস্তুনিষ্ঠ রাখতে লেখকের প্রয়াস প্রণিধানযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, ১২৭ নং পৃষ্ঠায় কনক বাইনের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বর্ণনায় এ প্রজাতির গোষ্ঠী-গোত্র নিয়ে অন্তত তিনটি বাংলা ও ইংরেজি উৎসে যে তথ্যগত ভিন্নতা রয়েছে, তা রেফারেন্সসহ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফাইলোজেনেটিক ট্রি বা জাতিজনিক বৃক্ষ বলতে বোঝায় কালে কালে ঘটে চলা পরিবর্তন সাপেক্ষে বিভিন্ন জীবের মধ্যকার সম্পর্ক নির্দেশক রেখাচিত্র। পৃথিবীর সব জীব এই বিশাল বংশলতিকার অংশ।

যদিও বিস্তারিত উদ্ভিদতাত্ত্বিক বিবরণ আছে ৫০টি প্রজাতির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রাপ্ত মোট ৫২৮টি প্রজাতির প্রতিটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ পৃষ্ঠাজুড়ে একটি তালিকায়। সেখানে বৈজ্ঞানিক নামের পাশাপাশি আঞ্চলিক বাংলা নাম, ম্যানগ্রোভের কোন শ্রেণিভুক্ত, গাছের ধরন কেমন এবং তার ব্যবহার কী—এসব তথ্য সুন্দরভাবে সন্নিবেশিত আছে। প্রজাতিগুলো উদ্ভিদ-গোত্র হিসেবে এবং বর্ণানুক্রমে সজ্জিত থাকায় একাডেমিক কাজে ব্যবহার করার উপযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নামের পাশাপাশি আঞ্চলিকভাবে প্রচলিত নামগুলো যে দেওয়া আছে, এটি লেখকের মুন্সিয়ানার আরেকটি দৃষ্টান্ত। কেননা সুন্দরবনের ওপর রচিত বেশির ভাগ একাডেমিক বইতে (যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় রচিত) এটি উপেক্ষা করা হয়, বা উল্লেখ থাকলেও কেবল গুটিকতক প্রজাতির বেলায়ই লেখা থাকে। অথচ মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গেলে শুধু বৈজ্ঞানিক নাম জানলে চলে না।

ফাইলোজেনেটিক ট্রি বা জাতিজনিক বৃক্ষ বলতে বোঝায় কালে কালে ঘটে চলা পরিবর্তন সাপেক্ষে বিভিন্ন জীবের মধ্যকার সম্পর্ক নির্দেশক রেখাচিত্র। পৃথিবীর সব জীব এই বিশাল বংশলতিকার অংশ। সুন্দরবনে প্রাপ্ত উদ্ভিদ প্রজাতিগুলো কে কার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেগুলোর ফাইলোজেনেটিক ট্রি নির্ণয় করেছেন লেখক, যা এ বইতে উল্লেখ আছে। সুন্দরবনের জীবকূল সম্পর্কে এ পর্যন্ত যতগুলো বই আমি উল্টেপাল্টে দেখেছি, তার কোনোটিতেই এই জটিল ও বৈজ্ঞানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উল্লেখ নেই। তাই লেখক এ ক্ষেত্রে সাধুবাদ পাবেন।

অন্য যেকোনো বৈজ্ঞানিক আকরগ্রন্থের মতো এখানেও প্রতিটি অধ্যায়ে যথাস্থানে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা আছে। শুধু অধ্যায়ের শেষে একটা রেফারেন্স তালিকা দিয়ে দায় সারা হয়নি, বরং আলোচনার মধ্যে ইন-টেক্সট রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে অথর-ডেট পদ্ধতিতে (চলতি কথায় পণ্ডিত মহলে যাকে ‘হার্ভার্ড’ রেফারেন্সিং বলা হয়)। বিদেশি রেফারেন্স বইতে এর চল থাকলেও কেন যেন বাংলা ভাষায় রচিত রেফারেন্স বইগুলোতে এই গুরুত্বপূর্ণ চর্চা খুব একটা দেখা যায় না। তাই রেফারেন্স বই লেখার আন্তর্জাতিক রীতি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। শুধু তাই নয়, আকর গ্রন্থের সর্বজনস্বীকৃত রীতি অনুযায়ী এ বইতে রয়েছে পরিভাষার পূর্ণাঙ্গ তালিকা। মূল টেক্সটের মধ্যে ইংরেজি পরিভাষা সব জায়গায় বাংলা শব্দের সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখ তো আছেই, শেষে আলাদা করে পরিভাষা কোষও দেওয়া আছে। নির্ঘন্টও মিলবে বইটির শেষে। কোনো একটি বিশেষ শব্দ বা শব্দবন্ধ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠা সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য নির্মিত এই তালিকা তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয়। এই পরিশ্রম করতে বাংলা ভাষার প্রকাশনায় অনেকেই আগ্রহী হন না। যদিও আন্তর্জাতিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে নির্ঘন্ট ছাড়া রেফারেন্স বই ভাবাই যায় না। এ বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়ার জন্য বর্তমান বইটির লেখক ও প্রকাশক—উভয়কেই ধন্যবাদ দিতে হয়।

একনজরে

সুন্দরবনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য

মৃত্যুঞ্জয় রায়

প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী

প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ

প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০২৪

পৃষ্ঠা: ২২৪

দাম: ৫০০ টাকা

রেফারেন্স বা আকরগ্রন্থ হিসেবে বইটি অনেকাংশে সার্থক। এতে আন্তর্জাতিক মান যথাসম্ভব বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

এ বইটি অন্য সব ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতা ও নিপুণতার সাক্ষর রাখলেও এর চিত্রগুলো, বিশেষ করে লাইন ড্রইংগুলোর বেলায় কিছুটা দুর্বলতা রয়ে গেছে। তৃতীয় অধ্যায়ে ৫০টি উদ্ভিদ প্রজাতির বিবরণে যেসব লাইন ড্রয়িং ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো আরও ভালো মানের হতে পারত। অনেক ক্ষেত্রে চিত্রগুলোর লেবেল (নাম) বোঝা যাচ্ছে না। উদ্ভিদের ড্রইংগুলো ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় লেবেল বা রেজুল্যুশনের অভাব রয়ে গেছে। যেমন ৬২ নং পৃষ্ঠায় সুন্দরবনের তিনটি লবণাক্ত অঞ্চলের মানচিত্র দুবার দেখানো হয়েছে, দুটি ভিন্ন ডিজাইনে, যা আসলে একই তথ্য দেয়। দুটি মানচিত্রের কোনোটার মধ্যেই কোনো জায়গার নাম লেবেল করা নেই। এখানে দুটি চিত্রকে একত্রিত করে একটি বৃহত্তর মানচিত্র হিসেবে অভ্যন্তরীণ লেবেলসহ উপস্থাপন করলে তা আরও কার্যকর হতো। বিভিন্ন চিত্রের ক্রমিক নম্বর উল্লেখ নেই—এটিও রেফারেন্স বইয়ের রীতি থেকে এক প্রকার ব্যতয়। আশা করা যায়, পরের সংস্করণে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও যত্নবান হওয়ার প্রয়াস থাকবে।

উল্লেখ্য, এ বইতে বানান ভুল বা ফন্টের ত্রুটি (যা কিনা বাংলাদেশের বিজ্ঞানবিষয়ক বইগুলোতে প্রায়ই চোখে পড়ে) আমার নজরে আসেনি। ছাপার ভুলও নেই বললেই চলে। বাঁধাই ভালো মানের। সে হিসেবে বইটি সমসাময়িক বাংলায় রচিত অন্যান্য অধিকাংশ বিজ্ঞানবিষয়ক বই থেকে প্রোডাকশন ভ্যালু বিবেচনায় এগিয়ে আছে।

সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, রেফারেন্স বা আকরগ্রন্থ হিসেবে বইটি অনেকাংশে সার্থক। এতে আন্তর্জাতিক মান যথাসম্ভব বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুন্দরবনের প্রাণিবৈচিত্র্য এবং অন্যান্য জীবের সমাহার নিয়ে বইটির আরও খণ্ড রচনার ইচ্ছা রয়েছে লেখকের।

বইটির সামনের প্রচ্ছদ সাজানো হয়েছে সুন্দরবনের মনোহর কিছু ছবি দিয়ে। প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় বইয়ের শিরোনাম ও লেখকের নাম। প্রচ্ছদটি বেশ সাদামাটা, আকরগ্রন্থে সচরাচর যেমনটা দেখা যায়। তবে সাধারণ হলেও সুন্দরবনের সৌন্দর্যের গুণে তা বেশ নয়নাভিরাম। বইটির পেছনের প্রচ্ছদে রয়েছে সমুদ্রের পাড়ে ম্যানগ্রোভ বনের চোখ জুড়ানো ফটোগ্রাফ। তার নিচে বাংলা ও ইংরেজিতে একজন থাই জেলে ও গ্রাম প্রধানের বক্তব্য, ‘যদি কোনো ম্যানগ্রোভ বন না থাকে তো সাগরেরই কোনো অর্থ নেই। তখন সেটা হবে শিকড় ছাড়া গাছ, সাগরের জন্য ম্যানগ্রোভ হলো শিকড়।’ উক্তিটি সুন্দরবনসহ যাবতীয় ম্যানগ্রোভ বনের বাস্তুতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এত সহজভাবে তুলে ধরেছে যে অনেক ভেবেও এরচেয়ে সুন্দর আর কোন কথায় তা বোঝানো যেত, খুঁজে পাইনি। সাগরপাড়ের বনজীবী মানুষের জন্য সুন্দরবন যেমন রূপক অর্থে সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক শিকড়, তেমনি তা সামুদ্রিক বিপর্যয় থেকে স্থলভাগকে রক্ষা করার জন্য দরকারি এক আক্ষরিক শিকড়ও বটে। সুন্দরবনের বিকল্প একমাত্র সুন্দরবন। তাই এ ব্যাপারে জানার পাশাপাশি এর সংরক্ষণেও আমাদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।