মানুষের বিজ্ঞানযাত্রার ইতিহাস

আদিম যুগের একদল মানুষ। ঘুরে বেড়ায় বনে-জঙ্গলে। খাবারের খোঁজে। খাবার বলতে গাছের ফলমূল। হাতিয়ার কী ওরা জানে না। জানে না আগুনের ব্যবহার। বজ্রপাতের ঝলক, দাবানলে ছারখার হওয়া জঙ্গলের আগুন কাঁপন ধরিয়ে দেয় তাদের বুকে। সেই মানুষগুলোই একসময় গাছের ডাল কিংবা পশুর হাড় হাতে তুলে নেয়। অন্য দলের মানুষের সঙ্গে, হিংস্র মানুষখেকো বন্য প্রাণীদের সঙ্গে যুঝে ওঠার মানুষের সে-ই প্রথম প্রচেষ্টা। এরপর তারা পাথর ছুড়ে দূর থেকেই শত্রুর মোকাবিলা করতে শেখে, লাঠি কিংবা হাড় ব্যবহার করে সেটা সম্ভব ছিল না। সেই পাথরই আবার কাজে লাগল বন্য পশু মারতে, আগুন জ্বালাতে। পাথর আর আগুনের ব্যবহার—সভ্যতা আর বিজ্ঞানের পথে মানুষের সেই প্রথম পদযাত্রা। এরপর মানুষ ধাতুর ব্যবহার শিখেছে, পশুপালনে অভ্যস্ত হয়েছে, নিপুণ শিল্প আত্মস্থ করে শিখেছে মাটির পাত্রের ব্যবহার। সমান্তরালে কারিগরি দক্ষতা বেড়েছে। ভাষা শিখেছে মানুষ। ধীরে ধীরে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছে সভ্যতার আলোয়।

বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানুষ গড়েছে মিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, চৈনিক, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা। এসব সভ্যতায় মানুষ প্রযুক্তিগতভাবে যতটা এগিয়েছে, ততটাই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্পকলায়। গড়ে উঠেছে নগরকেন্দ্রিক সমাজ। এরপর বর্তমান বিজ্ঞান ও সভ্যতার যাত্রা শুরু হয় গ্রিক দেশ থেকে। রোমানরা গ্রিক বিজ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়ে মজবুত করেছে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত। তারপর ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। কিন্তু চীন, আরব আর ভারতীয় কিছু বিজ্ঞানী বাঁচিয়ে রাখেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সলতেটুকু। মধ্যযুগে আবার ইউরোপে রেনেসাঁ। কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, নিউটন—মহান এই মানুষগুলোর হাত ধরে প্রবল হাওয়া লাগে বিজ্ঞান ও আধুনিক সভ্যতার পালে। আর পিছু ফিরতে হয়নি মানবজাতিকে। গণিত আর বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে। এর পরই তো শিল্পবিপ্লব। আমূল বদলে দেয় পৃথিবীকে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে দুর্বার গতিতে ছুটে চলে মানবসভ্যতা। সেই গতিই আবার পাল্টা গতি দান করে তাত্ত্বিক বিজ্ঞানে। পদার্থ, রসায়ন, মহাকাশ, জীববিজ্ঞান, চিকিত্সাশাস্ত্র—সর্বত্র পতপত করে উড়ছে বিজ্ঞানের জয়ের পতাকা।

বিজ্ঞানের ইতিহাস লেখাটা সহজ কথা নয়। সামান্য তথ্যগত ত্রুটিও গোটা ইতিহাসের বারোটা বাজিয়ে ছাড়তে পারে। তারপর যদি সুখপাঠ্য না হয়, তাহলে লেখকের পরিশ্রমটুকু বৃথা যায়। কিন্তু লেখক সত্যেন সেনের সহজ-সুন্দর ভাষায় বিজ্ঞানের ইতিহাস লেখার মুনশিয়ানা দেখলে অবাক হতে হয়। তিনি শুধু বোদ্ধা পাঠকের কথা ভেবেই ইতিহাস ও বিজ্ঞান বইটা লিখতে যাননি। এ দেশের কিশোর-তরুণসমাজের কাছে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। তাই আশির দশকে হাত দিয়েছিলেন ইতিহাস ও বিজ্ঞান বইটি লেখায়। তাঁর সামনে ছিল জে ডি বার্নালের সায়েন্স ইন হিস্ট্রি বইটি। সেই বই অবলম্বনে তিন খণ্ডে লেখেন আলচ্য বইটি। প্রকাশ করে কালি কলম প্রকাশনী। তিন দশক পর সেই তিন খণ্ড একত্র করে প্রকাশ করে দ্যু প্রকাশন। ক্রাউন সাইজ, উন্নত কাগজ, মজবুত বাঁধাইয়ের এই বইটি পাওয়া যাবে দেশের সব অভিজাত বুকশপে।