কফি ঠান্ডা হওয়ার আগে

টাইম মেশিন থেকে ব্যাক টু দ্য ফিউচার হয়ে টেনেট। সোয়া শতাব্দীতে টাইম ট্রাভেল নিয়ে কম গল্প-সিনেমা হয়নি। তবু ক্লিশে হয়নি কল্পবিজ্ঞানের এই উপশাখাটি। কারণ, টাইম ট্রাভেলের বৈজ্ঞানিক ফাঁদ এখনো ছিন্ন করতে পারেনি পদার্থবিজ্ঞানীরা। আবার বিজ্ঞান থেকে সময় ভ্রমণের তত্ত্বটা বাদও দেওয়া যাচ্ছে না। অকাট্য গাণিতিক প্রমাণ যাঁর থাকে, যত বড় বড় মাথাই হোক, সে তত্ত্ব খারিজ করার সাধ্য থাকে না। তাছাড়া কণাজগতে হরহামেশাই ঘটছে টাইম ট্রাভেলের ঘটনা। সময় ভ্রমণ নিয়ে উপকথা, মিথ—যত আগেরই হোক না কেন, আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটিতে সত্যিকারের ভিত পেয়েছিল সময় ভ্রমণের তত্ত্ব। তারও ঠিক দশ বছর আগে সময়কে চতুর্থমাত্রা হিসেবে বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক এইচ জি ওয়েলস লিখেছিলেন এক অবিশ্বাস্য উপন্যাস টাইম মেশিন। সাহিত্যের মাণদণ্ডেও সেই উপন্যাস কাল জয় করে এখনো টিকে আছে পৃথিবীর অন্যতম বেস্ট সেলার হয়ে।

বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড ।। তোশিকাযু কাতওয়াগুচি ।। রূপান্তর: সালমান হক।। প্রকাশক: আফসার ব্রাদার্স।। পৃষ্ঠা : ১৯২ ।। দাম: ৪০০ টাকা

এত-এত কল্পবিজ্ঞান লেখা হয়েছে টাইম ট্রাভেল নিয়ে, এখনো হচ্ছে, তারপরও কেন এ বিষয়টা পুরোনো হয় না? কারণ, সময়ের রহস্য আজও ভেদ হয়নি, বরং দিন দিন নতুন রহস্যজাল বিস্তার করে চলেছে প্রকৃতির চতুর্থ মাত্রাটি। বিশেষ আপেক্ষিকতা টাইম ট্রাভেলের যাত্রা শুরু, সাধারণ আপেক্ষিকতায় সেটা তুঙ্গে ওঠে। ওয়ার্ম হোল নামের একটা রহস্যময় বস্তুর তত্ত্ব আসে, যেটা তৈরি ব্ল্যাকহোল দিয়ে, সময়ে ভ্রমণের রহস্যময় পথ হয়ে উঠেছে সেটা। কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আধুনিক কসমোলজি কিংবা স্ট্রিং থিওরি, কোনো তত্ত্বই বড় পরিসরে সময় ভ্রমণের হাইপোথিসিস বাতিল করে দেয়নি। তাই আশা করাই যাই, চতুর্থ মাত্রায় যতদিন না মানুষ ভ্রমণ শুরু করছে, তার আগ পর্যন্ত চলবে টাইম ট্রাভেলের মোহ।

ভৌগলিকভাবে এশীয় হলেও আমোদের পশ্চিমা সাহিত্য-সাংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগটাই বেশি। অথচ আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর ভাষা-সাহিত্য কোনো অংশেই কম নয়। অথচ দূরপ্রাচ্যের সাহিত্য অনুবাদ করে বাঙালি পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি কমই হয়েছে। তবে আশার কথা হলো ইদানিং চীন-জাপানের লেখা বই বাংলায় অনুবাদ হতে দেখা যাচ্ছে। থ্রিলার তো বটেও, কল্পবিজ্ঞানের অনুবাদও আসছে অল্পবিস্তার। সুলেখক ও অনুবাদক সালমান হক জাপানি গল্প-উপন্যাস রূপান্তরের কাজটি করছেন নিষ্ঠার সঙ্গেই। চলতি বইমেলায় এসেছে বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড নামে টাইম ট্রাভেলনির্ভর সায়েন্স ফ্যান্টাসি। নাম শুনেই বোঝা এ বইয়ে এমন কিছু আছে, যা গরম কফি ঠান্ডা হওয়ার আগে শেষ করতে হবে। স্পয়লার এড়াতে কাহিনির ভেতরে যাব না। শুধু বলব এ বই পড়তে বসলে টান টান উত্তেজনায় বুঁদ হয়ে পড়ে যাবেন নিকট অতীতের জটপাঁকানো এক গোলকধাঁধায়। সেই জট আপনাকে ছাড়াতে হবে কফি ঠান্ডা হওয়ার আগেই।

সালমান হকের সাবালীল গদ্যে রূপান্তর বইটাকে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে, সেটা যেমন সত্যি; র‍য়্যাল সাইজ, মজবুত বাঁধাই, উন্নত কাগজ আর স্পষ্ট ছাপা—বইটাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। অমর একুশে বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে আফসার ব্রাদার্সের স্টলে। এছাড়া অনলাইন বুকশপগুলো থেকে কিনতে পারবেন ঘরে বসে, বইমেলার দামে।