পরমাণুর ভিতর-বাহির

এটমের কথা, সত্যেন সেন, প্রকাশক: জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশ, প্রথম প্রকাশ: ১৯৬৯, পৃষ্ঠা: ৮০, দাম: ১৫০ টাকা

একটি সমীকরণ বদলে দিয়েছিল বিজ্ঞানের ইতিহাস। মানবসভ্যতার ইতিহা‌সও ওলট-পালট করে দিয়েছিল। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর মানচিত্র। হিটলারের মতো অমিত শক্তিও হার মেনেছিল স্রেফ একটি সমীকরণের কাছে পরাজিত হয়ে। হিরোশিমা-নাগাসাকির বিভীষিকার পেছনেও ওই একটি সমীকরণই ক্রীড়নক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি যে যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি মানুষের চোখের জল ঝরিয়েছে, এই জল কি ঝরত, যদি জিতে যেত হিটলারের নাৎসি বাহিনী? খোঁজ মিলত কি ১৩ বছর বয়সী কিশোরী–অপটু হাতে লেখা হৃদয়ছোঁয়া অনুভূতির সেই ডায়েরির?

E=mc2 সাধারণ আপেক্ষিকতা থেকে বেরিয়ে আসা এক কালজয়ী সমীকরণ শুধু নয়, কালজয়ী আখ্যানও বটে। ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রতিষ্ঠা করা এই সমীকরণই কণা পদার্থবিজ্ঞান থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস নতুন করে লিখতে বাধ্য করেছিল। এই সমীকরণকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল কণা পদার্থবিজ্ঞানের জগৎ। পরমাণুর ভেতরের খবর জানতেই এর ভূমিকা ব্যাপক। অ্যাটম বা আধুনিক পরমাণুবিজ্ঞানের চর্চার শুরু তখন থেকেই।

নিউক্লিয়ার বোমা থেকে নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু—সবই আসলে ঘটছে অ্যাটম বা পরমাণুর ভাঙা-গড়ার খেলার ফলাফল থেকে। এই যে চিকিৎসাবিদ্যায় আজ ডায়াগনস্টিক যন্ত্রপাতির এত জয়জয়কার, এক্স-রে, এমআরআইয়ের ব্যবহার চিকিৎসাক্ষেত্রে নিত্যদিনের ঘটনা, এর পেছনে আছে পরমাণুর বিশেষ ক্যারিশমা।

যুদ্ধ থেকে সামাজিক জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে পরমাণুবিজ্ঞানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। সেই পরমাণু নিয়েই বাংলা বিজ্ঞান সাহিত্যে বইয়ের সংখ্যা নগণ্য। পাঠ্যবইয়ের অভাব অবশ্য নেই। কিন্তু জনপ্রিয় ধারার সহজবোধ্য বই লেখার মুনশিয়ানা প্রথম দেখিয়েছিলেন সুলেখক সত্যেন সেন। সেই ষাটের দশকে—এটমের কথা।

সত্যেন সেনের গদ্য সহজ, সাবলীল, স্বাদু। এই বইয়েও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ১৮টি অধ্যায়ে ভাগ করে শুনিয়েছেন পরমাণুর ভেতরের গল্প। পারমাণবিক শক্তি, কীভাবে এই শক্তি মহাদানব হয়ে ওঠে, তা যেমন জানতে পারবেন বিজ্ঞানের নবিশ পাঠক, তেমনি তেজস্ক্রিয়তা কী, তার ধর্ম ব্যবহারের ফিরিস্তিও রয়েছে এই বইয়ে। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া কীভাবে হয়, কীভাবে ছোট ছোট নিউক্লিয়াস জুড়ে বড় নিউক্লিয়াস তৈরি হয়, আবার কীভাবেই–বা বড় নিউক্লিয়াসকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছোট ছোট নিউক্লিয়াস তৈরি করা হয়, এতে অবমুক্ত হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি, সেসব জানতে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। সূর্য কেন জ্বলছে, কেন সে পৃথিবীর শক্তির প্রধান জোগানদাতা, তার পেছনেও রয়েছে অ্যাটমিক শক্তির কারসাজি।

মোদ্দাকথা হলো পরমাণুর ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, ধর্ম, আচরণের এক বৈজ্ঞানিক আখ্যান হলো এই ‌এটমের কথা বই। বইটি নতুন করে প্রকাশ করেছে জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশ। দেশের অভিজাত সব বুকস্টলে পাওয়া যাবে সহজ-সুন্দর এ বই।