রাতের আগন্তুকের খোঁজে

একনজরে: তারা খসে পড়া রাতের আগন্তুক, লেখক: আলীম আজিজ, ধরণ: বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, প্রকাশক: বাতিঘর, প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী, পৃষ্ঠা: ১০৪, মুদ্রিত মূল্য: ২৬০ টাকা।

নারায়ণগঞ্জ একসময় ছিল বন্দরশহর। ব্রিটিশ বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। স্টিমার সার্ভিস ছিল দারুণ ব্যস্ত। লবণের ব্যবসার সঙ্গে রমরমা পাটের ব্যবসা। ব্রিটিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তাই বানানো হয়েছিল জাঁকজমকপূর্ণ এক পান্থশালা—মিলস হাউস। কালের আবর্তে সেই মিলস হাউস এখন বৃদ্ধ নিবাস।

ঘটনার শুরু মেয়ার অ্যান্ড মেয়ার কোম্পানির পুরাতন ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে। হাবিবুর রহমান নামের একটি ফাইল খুলে চমকে উঠল নওরিন। ৩৯ কোটি টাকা ডিপোজিট, অথচ কোনো দাবিদার নেই! হাবিবুর রহমান নামের এই মানুষটি কে? নমিনি বা উত্তরসূরী কেউ নেই? নানা প্রশ্ন মনে নিয়ে খোঁজ শুরু করে নওরিন। ঘটনার সূত্র ধরে সে গিয়ে হাজির হয় মিলস হাউসে। এখানেই রয়েছেন হাবিবুর রহমান, অথবা হিবিব বেহমান—যাঁর বয়স কাগজপত্রে ১৯২! বেঁচে আছেন তিনি, দিব্যি সুস্থ।

অস্বস্তিকর সত্যি মোড়ক খুলে বেরোতে শুরু করে। অদ্ভুত সব প্রশ্নের যে জবাব নওরিন খুঁজে পায়, তা হয়তো সে আশা করেনি।

আগুন্তক বইয়ের প্রচ্ছদ
ছবি: লেখক

১০৪ পৃষ্ঠার পকেট সাইজ বই, জমাট গল্প। লেখক আলীম আজিজ ব্রিটিশ নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস যেমন তুলে এনেছেন, তেমনি বর্তমান নারায়ণগঞ্জে বৃদ্ধ নিবাসের চিত্রটিও এঁকেছেন দারুণ দক্ষতায়। একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন, সব প্রশ্নের জবাবও রয়েছে শেষে। বইয়ের মলাটে লেখা সায়েন্স ফিকশন, আসলেও তা-ই। তবে বিজ্ঞানের কঠিন কোনো বিষয় নেই, খটমটে পরিভাষা নেই; এর সঙ্গে মূল চরিত্রের গল্প মিলিয়ে চাইলে সায়েন্স ফ্যান্টাসিও বলা যায়।

বইটি তৃপ্তিদায়ক। সহজ, গতিশীল ভাষা। তবে পাঠকের হয়তো আফসোস হতে পারে ব্লার্বের (শেষ মলাট) কাহিনি সংক্ষেপ পড়ার জন্য। আগ্রহীদের তাই কাহিনি সংক্ষেপ না পড়েই গল্পে ঢুকে যেতে বলব। কারণ, ওটা আসলেই তা-ই, কাহিনির সংক্ষেপ। পড়ে ফেললে তৃপ্তিটুকু একটু ফিকে হবে, তবে পড়া শেষের আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

ছোট্ট এ বইটি যে কেউ চাইলে পড়ে ফেলতে পারবেন একবসায়। পকেট সাইজের এ বইগুলো ধরতেও ভালো। বইয়ের পৃষ্ঠা, কাগজ, বাঁধাই, এবং সবচেয়ে বড় কথা—প্রুফ রিডিং চমৎকার। আজকাল অনেক বইতে প্রচুর বানান ভুল দেখা যায়। এ বইতে তা নেই। ফলে পড়তে গিয়ে বানানের ভুল শূলের মতো চোখে বিঁধবে না।

চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছেন সব্যসাচী মিস্ত্রী। বইটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর। আগ্রহীরা পাবেন অনলাইন ও অফলাইন সব বইয়ের দোকানে, বাতিঘরের বিভিন্ন আঞ্চলিক আউটলেট ও ওয়েবসাইটে।

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা