আনন্দে মজায় জীববিজ্ঞান শেখা

গল্পে গল্পে জীববিজ্ঞান ১
একনজরে, গল্পে জল্পে জীববিজ্ঞান ১, মূল: ডেভ ওয়েসনার, অলংকরণ: ল্যারি গনিক ও সৌমিত্র চক্রবর্তী, রূপান্তর ও সম্পাদনা: সৌমিত্র চক্রবর্তী, প্রচ্ছদ: ল্যারি গনিক ও শ্রেষ্ঠা অর্নিথিন চক্রবর্তী, প্রথম প্রকাশ: ২০২২, পৃষ্ঠা: ১০০, মূল্য: ৩৫০ টাকা।

জীববিজ্ঞান বিষয়টা অনেকের কাছে খুব কঠিন লাগে। অনেকে মনে করেন, জীববিজ্ঞান মানেই বুঝি মুখস্থ করা। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময়, রোমাঞ্চকর বিষয় আসলে জীব। প্রাণ। প্রাণের রহস্য নিয়ে পৃথিবীখ্যাত গোয়েন্দারা—বিজ্ঞানীরা—একদম গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারোর মতো খুঁটিনাটি ধরে ধরে তদন্ত করেছেন। শার্লক হোমসের মতো খুঁটিয়ে দেখে, যুক্তি ও কার্যকারণের ভিত্তিতে ভেদ করেছেন এর অনেক রহস্য। আমরা জীবনকে বুঝতে শিখেছি, রোগ-শোকের মোকাবিলা করতে শিখেছি। করোনার মতো মহামারির টিকা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা রেকর্ড সময়ে, তাঁদের কল্যাণে রক্ষা পেয়েছে মানবসভ্যতা। কিন্তু এই সব কিছুর শুরুটা কীভাবে হলো? কীভাবে বুঝতে শুরু করল মানুষ জীবকে?

এককালে মানুষ প্রাণ মানেই মনে করত অতিলৌকিক কিছু। জাগতিক কোনো যুক্তিতে যার ব্যাখ্যা করা যায় না। ধীরে ধীরে মানুষ সেই প্রাণের গভীরে উঁকি দিতে শিখল। জানল, প্রতিটি জীবই কোষ নামের একক দিয়ে গঠিত। জানল কোষের গঠন, জীবনের বৈশিষ্ট্য। এই ধারাবাহিকতা মেনে এগিয়েছে গল্পে জল্পে জীববিজ্ঞান। কার্টুনের মাধ্যমে সহজ ভাষায়, সবার বোঝার মতো করে উঠে এসেছে জীববিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো।

গল্পে গল্পে জীববিজ্ঞান ১
মূল ইংরেজি বই একটিই, তবে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে। প্রথম খণ্ডে রয়েছে কোষতত্ত্ব ও প্রাণরসায়ন। দ্বিতীয় খণ্ডে শারীরতত্ত্ব ও বংশগতি এবং তৃতীয় খণ্ডে অভিব্যক্তি ও বাস্তুসংস্থান জায়গা পেয়েছে।

মূল বইটির নাম কার্টুন গাইড টু বায়োলজি। লেখক ডেভ ওয়েসনার। কার্টুনগুলো এঁকেছেন ল্যারি গনিক। বইটাকে শুধু রূপান্তরই করেননি, বাংলায় প্রাণ দিয়েছেন সৌমিত্র চক্রবর্তী। তাঁর হাতে মূল বইয়ের সুর যেমন অটুট হয়ে ফুটেছে, তেমনি রসিকতাগুলোও এসেছে যথাযথভাবে। অলঙ্করণেও তাঁর অবদান আছে। সব মিলে কার্টুনে-রসিকতায় বইটি হয়ে উঠেছে জীববিজ্ঞান শেখার আদর্শ মাধ্যম। মূল টেক্সটের সঙ্গে সমান্তরালভাবে রসিকতামূলক বাক্যগুলো দেখা যায় কনভারসেশন বাবল-এ। তাতে বিজ্ঞানের কোনো বিষয় হালকা হয়নি। অর্থাৎ বইটি পড়লে সত্যিকার অর্থেই জীববিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো জানা হয়ে যাবে।

মূল ইংরেজি বই একটিই, তবে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে। প্রথম খণ্ডে রয়েছে কোষতত্ত্ব ও প্রাণরসায়ন। দ্বিতীয় খণ্ডে শারীরতত্ত্ব ও বংশগতি এবং তৃতীয় খণ্ডে অভিব্যক্তি ও বাস্তুসংস্থান জায়গা পেয়েছে।

প্রথম খণ্ডের শুরুতেই এসেছে মানুষের জীববিজ্ঞান চর্চার ধারণা ও ইতিহাস। অধ্যায়টির বাংলা নাম ‘হাঙ্গামার আয়োজন’। বিষয়বস্তুর কথা লেখার শুরুতেই বলেছি। তবু একটা উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না।

দ্বিতীয় খণ্ডে কোষের আরও গভীরে, ডিএনএ থেকে জিন আদান-প্রদান, বংশগতিসহ জানা যাবে আরও অনেক কিছু। আমাদের মধ্যে যে সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো মা-বাবা থেকে এল কীভাবে?

এ অধ্যায়ের এক জায়গায় দেখানো হয়েছে, প্রাচীন মানুষ আগে যা-ই পেত, সব খেত। তারপর মাশরুমের ছবি এঁকে দেখানো হয়েছে, মানুষ নানা ধরনের মাশরুম খেয়ে খেয়ে পরীক্ষা করে দেখছে, কোনটা নিরাপদ, আর কোনটা খেলে অক্কা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। বিজ্ঞানীদের তখন লোকে ভেবেছে ‘ছিটগ্রস্থ’; আর তাঁরা আবিষ্কার করে গেছেন কুকুরের ডিম থেকে শুরু করে জীবনের নীল নকশা—ডিএনএ পর্যন্ত অনেক কিছু। এভাবেই ধাপে ধাপে মানুষ বুঝেছে জীবনের রহস্য।

দ্বিতীয় অধ্যায়টির নাম কাঁচামাল। কোষের মৌলিক রাসায়নিক উপাদানগুলোর পরিচয় পাওয়া যাবে এ অধ্যায়ে। তৃতীয় অধ্যায়টির নাম প্রাণের রসায়ন। উপাদান রাসায়নিকগুলোর বিক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনের পথচলা উঠে এসেছে এ বইতে। বিক্রিয়া পরিচয় তো হলো, কিন্তু এই বিক্রিয়া ঘটবে কোথায়? কোষে। এর রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে ইতিমধ্যে পরিচিত পাঠক এ অধ্যায় জানবেন নানারকম কোষের কথা, তাদের গঠন-বৈশিষ্ট্যের কথা। তারপর শক্তি উৎপাদন, শ্বসন ইত্যাদি জানতে পারবেন ধারাবাহিকভাবে।

এসব নিয়ে শুধু প্রথম খণ্ড। জীবন রহস্যের কেবল শুরু! দ্বিতীয় খণ্ডে কোষের আরও গভীরে, ডিএনএ থেকে জিন আদান-প্রদান, বংশগতিসহ জানা যাবে আরও অনেক কিছু। আমাদের মধ্যে যে সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো মা-বাবা থেকে এল কীভাবে? জানা যাবে সবিস্তারে। শেষের খণ্ডে জননের নানা প্রক্রিয়া, গোটা বিশ্বের প্রাণজাল, তাদের শ্রেণিবিভাগ নিয়ে জানতে পারবেন বিস্তারিত।

জীববিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো যাঁরা জানতে চান, তাঁদের যেমন কাজে লাগবে; তেমনি মূলত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি দারুণ সহায়ক হবে এ বই।

খুব সিরিয়াস বিষয় কার্টুনের কারণে মনে হবে সহজ, রসিকতামূলক ডায়ালগ এতে যোগ করেছে বাড়তি আনন্দ। আনন্দে-মজায় জীববিজ্ঞান শেখার এ প্রয়াস সত্যি প্রশংসনীয়।

রূপান্তরকারী না বলে সৌমিত্র চক্রবর্তীকে লেখক বললেই বরং ভালো বোঝা যায়। কারণ, এ বইয়ে ভাষার সবটুকু তাঁর নিজেরই। পেশায় চিকিৎসক। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। পাশাপাশি জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক। চেষ্টা করছেন দেশের নানা প্রান্তে জীববিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে, শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি দক্ষ করে তুলতে। তাঁর অভিজ্ঞতা এ বইতে দারুণ ভূমিকা রেখেছে।

জীববিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো যাঁরা জানতে চান, তাঁদের যেমন কাজে লাগবে; তেমনি মূলত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি দারুণ সহায়ক হবে এ বই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বেসিক বা প্রাথমিক ধারণাগুলো ভালোভাবে বুঝতেও সাহায্য করবে। পাওয়া যাবে অনলাইন ও অফলাইনের বুকশপগুলোতে।