মহাবৃত্তের ব্যতিক্রমী জীবন দর্শন

বিজ্ঞান পত্রিকা ও ডিসকাশন প্রজেক্টের সহযোগী প্রকাশনা মহাবৃত্তের আগস্ট-অক্টোবর ২০২৩ সংখ্যার পাতায় পাতায় আছে বোধ জাগানোর স্বর। বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক বোধ শুরু হয় নৈতিকতা থেকে। তাই ভূমিকায় মহাবৃত্তের সম্পাদক ও বিজ্ঞানবক্তা আসিফ লিখেছেন, ‘যুক্তি-তর্কের বিপরীতে না গিয়ে আমরা নীতি-নৈতিকতার একটি বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে মানুষের বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত। যদিও বৃহত্তর অর্থে পৃথিবীর বৈষম্য বা বিশৃঙ্খলা কমাতে এগুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ক্রমে মানুষের চিন্তা ও জীবনযাপনের স্বাধীন প্রকাশ সংকুচিত হচ্ছে।’

মহাবৃত্তের এই সংখ্যায় বিশ্বজগৎ, গণিত, করোনা ও প্রাসঙ্গিক, বিজ্ঞান ও বোধ ও নোবেল পুরস্কার ২০২০ নিয়ে নানা লেখা রয়েছে। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক ছবি, ইলাস্ট্রেশন ও ইনফোগ্রাফ এসব লেখাকে আরও সহজবোধ্য করেছে। সমৃদ্ধ ইতিহাসের কথা যেমন আছে, তেমনি আছে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অনবদ্য ইশারা। স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক আহসান হাবীবের লেখা রম্য রচনা ‘মহাবৃত্ত’কে দিয়েছে আরেক ব্যাঞ্জনা।

এই সংখ্যায় বরিশালে জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানী অমল কুমার রায় চৌধুরীর বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে লেখা হয়েছে। মফিদুল হকের লেখায় উঠে এসেছে ওয়ারি-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের কথা। বায়োএথিকস সময়ের প্রয়োজনেই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ক লেখাটি পড়ে নৈতিকতা বোধ নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করতে পারবেন পাঠক। বিজ্ঞানের সঙ্গে নুরেমবার্গ ট্রায়ালসের যোগ এর আগে কোথাও পড়েছি বলে মনে পড়ে না। তুলনামূলক কম আলোচনায় থাকা অণুজীব বিজ্ঞানী রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনকে নিয়ে খালেদা ইয়াসমিন লিখেছেন ‘অণুজীব বিজ্ঞানের পথিকৃৎ’। মাহফুজুর রহমানের লেখা ‘ভাষা কি সহজাত নাকি অর্জিত’ লেখাটিও হয়ে উঠেছে এবারের সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ। বিশ্বের শীর্ষ দুই ধনী ইলন মাস্ক ও জ্যাক মা’র সাক্ষাৎকার পড়ে পাঠক জানতে পারবেন আগামী পৃথিবী নিয়ে তাঁদের ভাবনা।

নৈতিকতা বিমূর্ত নয় কাব্যেও। বাংলার কবি কামিনী রায়ের সেই কবিতার লাইন উদ্ধৃত করা যায়, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেউ অবনি পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’ মহাবৃত্ত এভাবে আলোচনার আড়ালে থাকা এক বোধকে উসকে দিয়েছে। মানুষের ন্যায্য মহাবিশ্ব নির্মাণ প্রকল্প অপূর্ণ থাকবে যার অনুপস্থিতিতে।