একগুচ্ছ বিজ্ঞান

যদি কোন দিন শুনতে পান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী তিমি শুধু পানিতেই থাকে না, বরং ডাঙাতেও থাকতে পারে, তাহলে আগেই হেসে উড়িয়ে দেবেন না কিন্তু। সম্প্রতি মিসরের বিজ্ঞানীরা এমন এক নতুন প্রজাতির তিমির ফসিল আবিষ্কার করেছেন, যাদের অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল প্রায় ৪ কোটি বছর আগে। ধূর্ত শিকারি এই তিমিগুলোর বিচরণ ছিল একই সঙ্গে জলে ও ডাঙায়। তবে পরে এরা সম্পূর্ণ জলজ প্রাণী হিসেবে নিজেদের পাল্টে ফেলেছে। এই রকম অদ্ভুত অবিশ্বাস্য সব বৈজ্ঞানিক তথ্যের হদিশ মিলবে এমরান আহমেদের ‘এক্সোপ্ল্যানেটের সাতকাহন’ বইতে।

মোট দশটি আর্টিকেলের সমন্বয়ে রচিত এই বইটিকে মোট দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একভাগে লেখক উপস্থাপন করেছেন জীববিজ্ঞানের নানান চমকপ্রদ তথ্য। কখনো ডুব দিয়েছেন সমুদ্রের অতলে, আবার কখনো পাঠকদের নিয়ে গেছেন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াদের আণুবীক্ষণিক জগতে। অপরভাগে তিনি দৃষ্টি ফিরিয়েছেন অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে। আপন ভঙ্গিমায় তিনি তুলে এনেছেন সুপারনোভা, এক্সোপ্ল্যানেটসহ নানা অজানা বিষয়।

এক্সোপ্ল্যানেটের সাতকাহন ।। এমরান আহমেদ ।। প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী ।। প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ।। পৃষ্ঠা: ৮৮ ।। মুদ্রিত মূল্য: ১৫০ টাকা

মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো কোন কুলকিনারা করতে পারেননি। তবে তাঁরা অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বসে নেই শিল্পীরাও। তাঁরাও কল্পনার তুলির আঁচড়ে আঁকছেনে সম্ভাব্য এলিয়েনের আকৃতি। তবে এলিয়েনরা দেখতে তাদের কল্পনার মতো হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। এলিয়েনরা দেখতে অক্টোপাস বা মাকড়সার মতো না হয়ে, হতে পারে আণুবীক্ষণিক অ্যামিবা বা এক কোষী প্রাণীর মতো। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে থাকা সম্ভাব্য প্রায় ১১ বিলিয়ন এক্সোপ্ল্যানেট হতে পারে তাদের সম্ভাব্য ঠিকানা। আলোচ্য বইতে লেখক এই বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো তুলে এনেছেন আপন দক্ষতায়।

এলিয়েন, এক্সোপ্ল্যানেটসহ মহাবিশ্বের রহস্য অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীদের অন্যতম হাতিয়ার স্পেস টেলিস্কোপগুলো। যার মধ্যে অন্যতম হল হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাঁধা পাশ কাটিয়ে নিখুঁতভাবে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের পথ প্রদর্শক বলা যেতে পারে একে। এর মাধ্যমেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে পারেন মহাবিশ্বের বিশালতা এবং রহস্যময়তাকে। লেখক বইয়ে তুলে ধরেছেন হাবল টেলিস্কোপের অনেক অজানা তথ্য।

করোনা অতিমারীতে বিপর্যস্ত সমগ্র পৃথিবী। তবে ভ্যাক্সিনের প্রয়োগ এবং ভাইরাসের মিউটেশনের মাধ্যমে দুর্বল হয়ে পড়ার দরুণ হয়তো বছর শেষেই এই বিপর্যয়ের শেষ দেখতে পারি আমরা। তবে নতুন আরেক ভয়ঙ্কর বিপদ ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। যার নাম অ্যান্টিমাক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স। এই নীরব ঘাতক সম্পর্কে সাধারণ মানুষ একেবারেই অবগত নয়। লেখক বইয়ে বিশ্লেষণ করেছেন এর কার্যকারণ এবং প্রতিরোধের উপায়।

এইসবের বাইরেও বইটিতে লেখক সামনে এনেছেন আদিম অণুজীবদের কথা, ভাইরাসখেকো অণুজীবের কথা, মহাজাগতিক বস্তু ওউমুয়ামুয়ার গল্প। সববয়সী পাঠক-ই বইটি পড়তে পারবেন। অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘এক্সোপ্ল্যানেটের সাতকাহন’। বইমেলায় অনুপম প্রকাশনীর স্টলে ও সারাদেশে বিভিন্ন অনলাইন-অফলাইন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাবনা