পদার্থবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার মেলবন্ধন

একদা এক কবি বলেছিলেন, ‘একটা গ্লাসের মধ্যেই এই পুরো মহাবিশ্বটা আছে।’ তিনি কী ভেবে এটা বলেছিলেন, তা আমরা জানি না। তবে পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান তাঁর যুগান্তকারী লেকচারগুলোতে এনেছিলেন এই প্রসঙ্গ—যেখানে একটা গ্লাস হয়ে উঠেছিল প্রকৃতির প্রতিভূ; আর স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল প্রকৃতিবিজ্ঞানের নানা শাখার অদ্ভুত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কারণ, প্রকৃতি যে এতসব ভাগজোক বোঝে না! তার বিস্তীর্ণ রাজত্বের পুরোটা একই নিয়মে বাঁধা; আমরাই তাকে ভাগ করার চেষ্টা করেছি নানা অংশে—তাই নানা সময়ে সীমানাগুলো যে মিলিয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য!

পদার্থবিজ্ঞান ভৌতবিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞান হলো জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে পরিচিত প্রায়োগিক শাখা৷ রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা সরাসরি মানুষের জীবনের সাথে জড়িত, তাই হয়তো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন সংযোজনগুলোকে এক্ষেত্রে ব্যবহারের তোড়জোড়ও সবচেয়ে বেশি। বিগত শতকে আমূল পরিবর্তন এসেছে এই ক্ষেত্রে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির ব্যবহার রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে চিকিৎসাক্ষেত্রে। তবে জটিল আর অদ্ভুতুড়ে এই চিকিৎসার সরঞ্জামগুলোর পেছনে লুকিয়ে আছে পদার্থবিজ্ঞানের সরল অথচ অদ্ভুত সুন্দর সব নীতি। পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন মরুভূমিতে চোখে ধাঁধা লাগায়, দেখায় মরীচিকা—এটাই আবার খোলে শরীরের ভেতরের নানা রহস্যের জট। কিংবা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তন, যাকে হয়তো আমরা অ্যাস্ট্রোফিজিকসের গবেষণার সরঞ্জাম বলেই জানি, এটাই আবার জানায় আমাদের রক্তের অবস্থা? চিকিৎসাবিজ্ঞানের এমনই সব চমকপ্রদ পদ্ধতি আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা পদার্থবিজ্ঞানের কথা জানাতেই এ বই—রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় পদার্থবিজ্ঞান

রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় পদার্থবিজ্ঞান ।। প্রদীপ দেব ।। প্রচ্ছদ: এরফান উদ্দিন আহমেদ ।। প্রকাশক: প্রথমা ।। পৃষ্ঠা: ১৬০ ।। দাম: ২৬০ টাকা

ছোট্ট কলেবরের বইটি ১৯টি ছোট ছোট অধ্যায়ে সাজানো। তার প্রথমটি সময়ের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞান আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাত ধরাধরি করে বেড়ে ওঠার গল্প, আর শেষটা কিছুটা ভবিষ্যৎ চিন্তা। মাঝের অধ্যায়গুলোতে রয়েছে বিজ্ঞানের এই দুটি শাখার সখ্যের নানা গল্প। অপটিকস, থার্মোডাইনামিকস কিংবা নিউক্লিয়ার ফিজিকস—এগুলোর চমকপ্রদ সব আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির একগুচ্ছ যন্ত্রপাতির পরিচয় দিয়ে সাজানো একেকটি অধ্যায়। এ সবের পেছনের পদার্থবিজ্ঞানটাও তুলে ধরা হয়েছে অত্যন্ত সহজভাবে। পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা থাকলেই বোঝা যায় এদের কার্যপদ্ধতি। আছে এ পদ্ধতিগুলোর সুবিধা-অসুবিধা আর প্রচলিত নানা মিথের জবাবও। আর বাড়তি পাওনা হিসেবে আছে তাদের ক্রমবিকাশের ইতিহাস। সব মিলিয়ে বইটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপারে যেমন কৌতূহল মেটাবে, তেমনি জাগিয়ে তুলবে পদার্থবিজ্ঞানের সহজ-সুন্দর নিয়মগুলোর জন্য অদ্ভুত মুগ্ধতা!

বইটি দেশের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে যেমন মিলবে, তেমনি পাঠক ঘরে কিনতে পারবেন অনলাইন বুকশপগুলোর মাধ্যমে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ