পরমাণু ও পরমাণু শক্তি

বিজ্ঞানের ইতিহাসের কথা ভাবতে গেলেই যে বিষয়টা সবচেয়ে প্রকটভাবে ধরা পড়ে, সেটা হল চিন্তার বিবর্তনের ইতিহাস। চমৎকার অথচ অকেজো সব ধারণাকে পেছনে ফেলে আনকোরা কার্যকর ধারণার দিকে এগিয়ে চলার ইতিহাস। পিথাগোরিয়ান পারফেক্ট সলিডের ধারণা নিয়ে রাতদিন হাড় ভাঙা খাটুনি করার পরেও কেপলার আবিষ্কার করে বসেন গ্রহদের চলার পথ একটু ইনপারফেক্ট, অর্থাৎ উপবৃত্তাকার কক্ষপথ। অন্যদিকে টমসনের প্লাম পুডিং মডেলকে আরেকটু খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে রাদারফোর্ড পেয়ে যান পরমাণুর নিউক্লিয়াসের দেখা। অবশ্য শেষ উদাহরণে 'দেখা পাওয়া' শব্দবন্ধটা ঠিক খাটে না। আর সেজন্যই পরমাণু বিজ্ঞানের গবেষণার গল্পগুলো একটু অন্যরকম। সেগুলোকে নিয়ে ছেলে-বুড়ো সকলেরই অপার আগ্রহ। কারণ মানুষের চামড়ার বয়স বাড়তে থাকে, কিন্তু কৌতূহলের বয়স তো কখনো বাড়ে না!

খুদে পরমাণুর আরও গহীনে গিয়ে সেখান থেকে নতুন সব তথ্য বের করে আনা, সেগুলোর সাহায্য নিয়ে প্রকৃতির অদ্ভুত সব আচরণের রহস্যভেদ—এ তো দুর্ধর্ষ কোনো গোয়েন্দা অভিযানের চেয়ে কম নয়। আর গল্পকথক যখন খোদ আইজ্যাক আসিমভ, তখন ইতিহাসের সেরা এই গোয়েন্দা কাহিনিগুলো হয়ে ওঠে আরও বেশি প্রাণবন্ত।

আসিমভ আমাদের কাছে গ্র্যান্ডমাস্টার অফ সায়েন্স ফিকশন হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জন্য আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার সময়েই তিনি লিখেছেন নিখাদ বিজ্ঞানের কিছু বই। অবশ্যই তাঁর সেই পরিচিত কৌতূহলোদ্দীপক ঢঙে। তাঁর এমন বইয়ের সংখ্যা আড়াই শরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৩৫টি বই 'হাউ ডিড উই ফাইন্ড' সিরিজের। সেগুলো তিনি লিখেছিলেন মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য। এই সিরিজেরই হাউ ডিড উই ফাইন্ড আউট অ্যাবাউট অ্যাটমসহাউ ডিড উই ফাইন্ড আউট অ্যাবাউট নিউক্লিয়ার পাওয়ার। বই দুটোর বাংলা অনুবাদ এক মলাটে প্রকাশিত হয়েছে পরমাণু ও পরমাণু শক্তি নামে।

পরমাণু ও পরমাণু শক্তি || মূল: আইজ্যাক আসিমভ || রূপান্তর: আবুল বাসার || প্রকাশক: ছায়াবীথি || প্রকাশকাল: একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১

পরমাণু এবং পরমাণু শক্তি দুটো অংশেই রয়েছে পাঁচটি করে অধ্যায়। যেগুলো থেকে জানতে পারি পরমাণু ও তার মধ্যে বিপুল শক্তি আবিষ্কারের গল্প।

অনুবাদ নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই, কেবল এটুকু বলি, পুরো বইয়ের কোথাও আসিমভের স্বভাবসিদ্ধ গল্পবলার মেজাজটা বিঘ্নিত হয়নি। বই দুটো লেখা হয়েছে গত শতকের সত্তরের দশকে। তাই অনেক আধুনিক গবেষণার হালনাগাদ তথ্য স্বাভাবিকভাবেই এখানে নেই। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুবাদক পরিপূরক তথ্য যোগ করেছেন। সঙ্গে আছে প্রয়োজনীয় ছবি, প্রতি অধ্যায়ের শেষে তথ্যনির্দেশ এবং বইয়ের শেষে পরিভাষা৷ আর আসিমভকে জানার জন্য তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় যোগ করা হয়েছে বইয়ের একদম শেষ অংশে।

যাই হোক, আগেই যেমনটা বলেছিলাম, বইটা লেখা ছোটদের জন্যে। তবে এর বিশেষত্ব হল, বইটা পড়তে গেলে এ কথা কারোর মনে পড়বে না একদমই। আবার ছোটরাও কোথাও আটকাবে না। আসিমভের গল্পের ঠাসবুনোনে যেকোনো বয়সী পাঠকই টাইম ট্রাভেল করে আসতে পারবেন ডেমোক্রিটাসের সময়ের গ্রিস থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশনের গবেষণাগার পর্যন্ত।

চলুন তবে, গ্যালাকটিক এম্পায়ারের বদলে এবার আসিমভের সাথে ঘুরে আসা যাক পরমাণুর রহস্যময় জগত থেকে। জানা যাক এই জগতের দুর্ধর্ষ সব অভিযাত্রীর গল্প!

হ্যাপি রিডিং!