প্রাণের নীল নকশার খোঁজে

প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো নকশা। তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধুন্দুমার প্রতিযোগিতা। শেষে কেউ নোবেল নামের বরমাল্য পরেন, কেউ হন বঞ্চিত। কিন্তু প্যাঁচানো সেই নকশায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রাণী ও জীব জগতের নীল নকশা সাজানো থাকে এতে। একজন মানুষ, কিংবা প্রাণী অথবা উদ্ভিদ-অনুজীব—সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই শেষ কথা বলে এই নীল নকশাই। প্রাণী বা জীবটার চেহারা কেমন হবে; গায়ের রং বা উচ্চতা, খাদ্যাভ্যাস, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সবকিছুই লেখা আছে ওই প্যাঁচানো সিঁড়ির প্রতিটা ধাপে। আর এই কোডগুলো লেখা হয়েছে জৈবরাসায়নিক ভাষায়। ভাষাটা শিখতে, চর্চা করতে চাইলে জানতে হবে জেনেটিকস কী?

জেনেটিকস হলো জীববিজ্ঞানের একটি গুরত্বপূর্ণ শাখা, যেখানে বংশগতিবিদ্যার ভিত্তিটা জানা, সেটা বোঝা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়। এখন চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাসও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে জেনেটিকস প্রযুক্তির কল্যাণে। ক্রিসপার নামে একটা প্রযুক্তি এখন বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়। জিনগত কারণে যেসব রোগবালাই হয়, সেগুলোর চিকিৎসার জন্য এই প্রযুক্তি এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। জেনেটিক সংকেত এডিট করে বংশগত রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায় শূন্যের কোঠায়। তেমনি জিন এডিটিং করে খাদ্যশস্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যোগ করা যায়। সবমিলিয়ে প্রাণ কী, কীভাবে পরিচালত হয়, বংশগতিবিদ্যা ইত্যাদির হাতেখড়ি নিতে হলে জেনেটিকসে পাঠ নেওয়া জরুরি।

জেনেটিকসের গল্প ।। তৌহিদুর রহমান উদয় ।। প্রচ্ছদ: লেখক ।। প্রকাশক: তাম্রলিপি ।। পৃষ্ঠা: ১০৪ ।। দাম: ২৭০ টাকা

জেনেটিকস উচ্চতর বিজ্ঞানের বিষয়। তাই বলে কি সাধারণ পাঠকেরা জানবেন না জেনেটিকসের বিষয়-আশয়? এজন্য দরকার সহজপাঠ্য জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই লেখা। আর এ কাজটিই মুনশিয়ানার সঙ্গে করেছেন বিজ্ঞান লেখক তৌহিদুর রহমান উদয়। লিখেছেন জেনেটিকসবিষয়ক চমৎকার একটি বই—জেনেটিকসের গল্প। আট অধ্যায়ে সাজানো এ বইটি জেনেটিকসের প্রাথমিক ধারণা দিয়ে। তারপর লেখক ফিরে গেছেন আড়াই হাজার বছর আগের পৃথিবীতে। এরপর চলে এসেছেন বংশগতিবিদ্যার জনক মেনডেলের কাছে। জীবন ও কর্ম মিলিয়ে মেনডেলকে নিয়ে খরচ করেছেন দুটি অধ্যায়। তবে মেনডেলই যে চরম ও পরম সত্য নয়—সেটিও দেখিয়েছেন লেখক। পঞ্চম অধ্যায় ‘ক্রোমোজম থেকে ডিএনএ’। এ অধ্যায়ে লেখক জীবকোষের ভেতের ঢুকে তুলে এনেছেন সেখানকার ক্ষুদ্র জগতের ছবি। তেমনি বৈজ্ঞানিক ইতিহাসেও সমৃদ্ধ করেছেন অধ্যায়টিকে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে উঠে এসেছে জিনোম সিকোয়েন্সের আদ্যোপান্ত। কীভাবে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়, এর প্রযুক্তিটাই–বা কেমন, আগে এত কঠিন ছিল, এখন কীভাবে এত সহজে জিনোম সিকোয়েন্স করা সম্ভব হচ্ছে— এসবের সাত–সতের জানতে পারবেন এ অধ্যায়টি থেকে।

সপ্তম অধ্যায়ে উঠে এসেছে ভবিষ্যতের জেনেটিকসের কাহিনি। বর্তমান ক্রিসপার থেকে ভবিষ্যতে এ শাখাটি কোন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে, তার একটা বৈজ্ঞানিক সম্ভবনার কথা শুনিয়েছেন লেখক। শেষ করেছেন জেনেটিকসের কালপঞ্জি দিয়ে। সব মিলিয়ে সহজে জেনেটিকসকে জানার জন্য চমৎকার একটি বই হলো এই জেনেটিকসের গল্প

ভালো ছাপা, উন্নত কাগজ, মজবুত বাঁধাই—এত এত ইতিবাচকতার মধ্যেই বইটির জন্য একটা নেতিবাচক সমালোচনাও রয়েছে। সেটা হলো বইয়ের মেকাপ ও পেজিনেশন। লাইন স্পেসিং এবং ওপর-নিচে গ্যাপের অসঙ্গতিটা না থাকলে বইটা আর সুন্দর হতে পারত।

বইটা অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে তাম্রলিপির প্যাভিলিয়নে। এছাড়া ঘরে বসে কেনা যাবে বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ থেকে।